মহাস্থানগড় বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। প্রসিদ্ধ এই নগরী ইতিহাসে পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর নামেও পরিচিত ছিল। এক সময় মহাস্থানগড় বাংলার রাজধানী ছিল। বহু শতাব্দী পর্যন্ত এ স্থান মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন শাসকদের রাজ্যিক রাজধানী ছিল। পরবর্তীকালে সামন্ত রাজাদেরও রাজধানী ছিল মহাস্থানগড়।
বিশাল এলাকা জুড়ে প্রাপ্ত মহাস্থানগড়ের ধ্বংসাবশেষ পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগরের অতি প্রাচীন প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরোনো গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী। সারা বাংলার অতি প্রাচীন ও প্রধান এ দূর্গনগরী মাটি ও ইটের বেষ্টনী দ্বারা সুরক্ষিত ছিল। উত্তর-দক্ষিনে এর পরিমান ১৫২৫মিটার আর পূর্ব-পশ্চিমে এর পরিমান ১৩৭০মিটার। শুধু কি তাই, চারপাশের সমতল ভূমি থেকে এ দূর্গ শহরের উচ্চতা ৫মিটার। এই দূর্গনগরীর পূর্বদিকে নদী ও বাকী তিন দিকে গভীর পরিখা নগরীর বাড়তি সুরক্ষার ব্যবস্থাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়।
ইতিহাসে আছে সুখ্যাত চীনা ভ্রমণকারী হুয়েন সাঙ ৬৩৯-৬৪৫ খৃষ্ট অব্দের সময়ে ভারতবর্ষ ঘুরে দেখার সময় এই মহাস্থানগড় বা পুণ্ড্রনগর দেখতে এসেছিলেন। এই হুয়েন সাঙই তার বিবরণে এই নগরকে পুণ্ড্রনগর বলে উল্লেখ করেছিলেন।
জানা যায়, ১৯২৮-২৯ খৃষ্ট অব্দে এখানে এই মহাস্থানগড়ে প্রথম খননকাজ শুরু হয়েছিল। দীর্ঘ সময়ব্যাপী ব্যাপক ভিত্তিতে খননের ফলে ৪র্থ খৃষ্টাব্দ থেকে শুরু করে মুসলমানদের বাদশাহী সময় পর্যন্ত সুদীর্ঘকালের বিভিন্ন নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। এই মহাস্থানগড়েরই পশ্চিম অংশে রয়েছে বেহুলা লখিন্দরের ইতিহাস খ্যাত কালীদহ সাগর ও পদ্মাদেবীর বাড়ী। গড়ের পূর্ব পাশে প্রবাহিত করতোয়া নদী তীরে আবিষ্কৃত হয়েছে রাজা পরশুরামের বোন শিলাদেবীর ঘাট। এই মহাস্থানগড়ের দক্ষিন-পশ্চিমে আবিষ্কৃত হয়েছে বেহুলার বাসরঘর।