অদম্য মেধাবী
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পরানধর গ্রামের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী অম্লান দাস তুর্য এবারের এসএসসি পরীক্ষায় ৩.৭৪ পেয়ে পাশ করে সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। সে মুন্সীবাজার কালীপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা করে অদম্য সাহস আর ইচ্ছা শক্তির জোরে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল। জন্মগতভাবে অম্লান দাস তুর্য কম স্মৃতি শক্তি সম্পন্ন হওয়ায় তার পড়াশুনা নিয়ে বাবা-মায়ের চিন্তার শেষ ছিল না। অবশেষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ভালো ফলাফল করায় তার বাবা-মা ও স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে। সে পরানধর গ্রামের বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা আশা বালাগঞ্জ শাখা ব্যবস্থাপক ফনীভুষন দাস ও মা সরিষকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শম্পা রায়ের ছেলে।
কালীপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সত্যেন্দ্র কুমার পাল জানান, অম্লান দাস তুর্য তার স্কুলের ছাত্র। তার মধ্যে কোনো বোধশক্তি ও স্মৃতি শক্তি নেই বললেই চলে। তিনি ও অন্য শিক্ষকরা অত্যন্ত যতœ সহকারে তাকে কিছু শেখানোর চেষ্টা করতেন। অম্লান দাস তুর্য বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নিশ্চিত হওয়ার পর সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে একটি প্রতিবন্ধী সনদ সংগ্রহ করে শিক্ষাবোর্ড থেকে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর কোটায় তাকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক আশরাফ হায়দার আরো জানান, যে কোন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত নিয়ে আসতে পারলে তাকে দিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ানো কঠিন কোনো কাজ নয়। শিক্ষাবোর্ড প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের ব্যাপারে অম্লান দাস তুর্য জানায়, এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছি। খুবই ভালো লাগছে।
অম্লান দাস তুর্য এর বাবা ফনীভুষন দাস (বাবলু) বলেন, জন্ম থেকে আমার সন্তান বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হলেও পড়াশুনার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। আমাদের পরিবার ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সে ভাল ফলাফল লাভ করে। সে নিয়মিত প্রতিবন্ধী ভাতা পেয়ে আসছে। ছেলের ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য সকলের দোয়া ও আশীর্ব্বাদ কামনা করেন তিনি।
গুর্খা পুলিশ বাহিনীর নির্মম গুলিতে হাজার হাজার চা-শ্রমিক হতাহতের ঐতিহাসিক দিন
দ্রব্যমুল্যের সাথে সংগতিপূর্ণ মজুরি, পর্যাপ্ত রেশন, ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি
১৯২১ সালের ২০ মে চা-শ্রমিক স্বদেশ যাত্রার রক্তাক্ত কালো অধ্যায়ের বার্ষিকীতে চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির উদ্যাগে ঐতিহাসিক চা-শ্রমিক হত্যা দিবস পালন করা হয়। চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আয়োজনে সোমবার ( ২০ মে) বিকেল ৫ টায় কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরে র্যালী শেষে আলোচনা সভা অনুষ্টিত হয়।
চা শ্রমিক সংঘের আহবায়ক রাজদেও কৈরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি ডা. আব্দুশ শহীদ সাগ্নিক, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ জেলা কমিটির সভাপতি মো. নুরুল মোহাইমীন, বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি জেলা কমিটির আহবায়ক অবনী শর্ম্মা, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা, মৌভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. সোহেল, চা-শ্রমিক সংঘের যুগ্ম-আহবায়ক হরিনারায়ন হাজরা ও শ্যামল অলমিক, চা-শ্রমিকনেতা হেমরাজ লোহার, সুনীল কর, দীপক রায়, নারায়ন নাইডু, সুভাস গৌড়, রামনারায়ন গৌড়, নারী নেত্রী কাজলী হাজরা, সনিয়া বাস্কর, অঞ্জলি রবিদাস, মালা নায়েক, আকাশি কালিন্দী।
সভায় বক্তারা বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও এসেছে ২০মে ঐতিহাসিক চা-শ্রমিক হত্যা দিবস। ১৯২১ সালের ২০মে দিনটি ছিল চা-শ্রমিকদের বাচাঁর জন্য সংঘটিত আন্দোলনে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের সশস্ত্র গুর্খা পুলিশ বাহিনী নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে হাজার হাজার চা-শ্রমিককে হতাহতের ঐতিহাসিক দিন। ঔপনিবেশিক ভারতে বৃটিশ কোম্পানি এককভাবে চা-এর বিশ্ববাজার প্রতিষ্ঠায় ভারতের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির গরীব কৃষকদের এনে বাগানে জড়ো করে দাসত্বে বন্ধনে ‘আড়িকাঠি’ ও ‘গিরমিট’ প্রথা দ্বারা আবদ্ধ করে। শুরু হয় মজুরি দাসত্বে পর্যায়। চা-শ্রমিক শিল্পীয় শ্রমিক হিসেবে গড়ে উঠার প্রক্রিয়ায় পাহাড় জঙ্গল পরিস্কার করে চা-আবাদের উপযোগী করতে গিয়ে বাঘ-ভাল্লুকসহ বন্য প্রাণীর আক্রমণ, সাপের বিষাক্ত ছোবল, রক্তচোষা জোঁকের কামড়, মশার কামড় ইত্যাদিতে অগণিত শ্রমিকের প্রাণের বিনিময়ে গড়ে উঠে চা-শিল্প।
তারা আরও বলেন, নির্মম শোষণ অমানুষিক নির্যাতন মানবেতর জীবন জীবিকায় অতিষ্ট বিক্ষুদ্ধ চা-শ্রমিকরা স্বতঃস্বতস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুললেও মজুরি দাসত্বের জীবন যন্ত্রণা থেকে বের হতে না পেরে অবশেষে পূর্বের জীবনে ফিরে যাবার প্রবণতা তীব্রতর হয়। এরই পরিণতিতে ১৯২১ সালের মে মাসে স্বভূমিতে স্বজাতির কাছে ফেরার পথে চাঁদপুরে রেলস্টেশন ও স্টিমার ঘাটে ২০মে সংঘটিত হয় বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞের ঘটনা। এই হত্যাযজ্ঞ বঙ্গদেশ-আসামসহ সমগ্র ভারতবর্ষ এমন কি বৃটেনে আলোড়ন সৃষ্টি করলেও বৃটিশ সরকার চা-শ্রমিকদের চা-বাগানে ফিরে যেতে বাধ্য করে। এ সময় বৃহত্তর সিলেট জেলা কমিউনিস্ট পার্টির তৎপরতা শুরু হলে কমরেড অজয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে চা-শিল্পে শ্রমিক সংগঠন ও আন্দোলন এবং গ্রামাঞ্চলে কৃষক সভা ও নানকার আন্দোলন গড়ে উঠে।
বক্তারা বলেন, এরই ধারাবাহকতায় পাকিস্তান আমলে চা-শ্রমিক আন্দোলন বেগবান হয়। চা-শ্রমিকরা যাতে মজুরি দাসত্ব থেকে মুক্তির লক্ষ্যে সংগঠিত হতে না পারে সেজন্য বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের দালাল শাসক শোষক গোষ্ঠি চা-শিল্পে মালিকের স্বার্থরক্ষায় শ্রীহট্ট জেলা চা-শ্রমিক ইউনিয়ন গড়ে তুলে। মফিজ আলীর নেতৃত্বে পাকিস্তান আমলে চা-শ্রমিক সংঘ গড়ে তুলে আন্দোলন-সংগ্রাম। মালিক, সরকার ও দালালদের অব্যাহত তৎপরতায় চা-শ্রমিকদের সংগ্রামী ধারা বিপর্যস্ত হয়। চা-শ্রমিকদের বেঁচে থাকার মত মজুরির অধিকার থেকে অদ্যাবধি বঞ্চিত। চা-শ্রমিক, তাদের পরিবার পরিজন, ছাত্রযুবকরা স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ২০২২ সালে চা-শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে অবশেষে সরকার প্রধান ১৭০ টাকা মজুরি ঘোষণা করে শ্রমিকদের ঘরে ফিরতে বাধ্য করে।
তারা আরও বলেন, চা-শ্রমিক ইউনিয়নের দেউলিয়াত্বে এই সময়ে মুদ্রাস্ফীতি-মূল্যস্ফীতি, নিয়ন্ত্রণহীন বাজারদরে চা-শ্রমিকদের জীবনজীবিকা আজ বিপর্যস্ত। এসময়ে চা-শ্রমিকদের বাঁচার মতো ন্যায্য মজুরির প্রকৃত ইস্যুকে পাশ কাটিয়ে শ্রমিকদের আবেগকে ব্যবহার করে ননইস্যুকে ইস্যু করে মালিক-ম্যানেজমেন্টের সাথে যোগসাজসে ট্রটক্সীবাদী ও সংশোধনবাদী চা-শ্রমিকদের বিভ্রান্ত ও বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র-চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। এদের সম্পর্কে সজাগ, সচেতন ও সতর্ক থেকে বাঁচার মতো ন্যায্য মজুরিসহ চা-শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরিসহ চা-শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আন্দোলন-সংগ্রাম-ধর্মঘট সফল করার জন্য কমরেড অজয় ভট্টাচার্য ও মফিজ আলীর ধারাবাহিকতায় চা-শ্রমিকদের আপোসহীন চা-শ্রমিক সংঘের পতাকা তলে সংগঠিত ও ঐক্যবব্ধ হয়ে দুর্বার আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের উত্তর কানাইদেশী গ্রামের মরহুম তজমুল হোসেনের বড় ছেলে টিসিবি’র সাবেক সচিব ও সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেজিষ্টার ডাঃ আবু সালেহ মুহাম্মদ সাহেম-এর পিতা ইফতেখার হোসেন আহমেদ ওরপে মাসুক(৭৪) গত রোববার রাত ১১ টা ১৫ মিনিটে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ১ ছেলে, ১ মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। সোমবার দুপুর ২ টা ৩০ মিনিটে উত্তর কানাইদেশী শাহী ঈদগাহ মাঠে প্রয়াতের জানাজা নামাজ শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
ইফতেখার হোসেন আহমেদ-এর মৃত্যুতে কৃষিমন্ত্রী উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি গভীর শোক প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
প্রতিপক্ষের হামলার শিকার আব্দুল মুমিন মিয়ার অবস্থার অবনতি
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের বড়চেগ গ্রামে প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত আব্দুল মুমিন মিয়া (৬২) এর অবস্থার অবনতি হয়েছে। ভাতিজাকে ৩ লক্ষ টাকা ধার না দেওয়ায় কথা কাটাকাটির জের ধরে গত ২৫ এপ্রিল রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে ভাতিজা মোস্তাকিন মিয়ার পুত্র মৌলা মিয়া (২৮) গংরা একা পেয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যার উদ্যেশ্যে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে। পরে হাল্লা চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এরপর তাকে প্রথমে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল, সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং সিলেট উইমেনস হাসপাতালে হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়ে গত ১৭ মে বাড়িতে আসেন। পরদিন আবার অবস্থার অবনতি হলে ১৮ মে রাতে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আপন চাচাকে কুপিয়ে মারাত্বক রক্তাক্ত জখম করার ঘটনায় এলাকায় নিন্দার ঝড় বইছে।
এ ঘটনায় আব্দুল মুমিন মিয়ার ছোট ছেলে মো: নাসির মিয়া বাদী হয়ে কমলগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করলে পুলিশ মৌলা মিয়াকে আটক করে জেলগাজতে প্রেরণ করে। বখাটে মৌলা মিয়ার বিরুদ্ধে এলাকায় মারধোর সহ নানান অভিযোগ রয়েছে।
আহত আব্দুল মুমিন মিয়ার ছেলে দুবাই প্রবাসী আলমগীর হোসেন প্রশাসনের কাছে তার পরিবারের নিরাপত্তা ও সুষ্ট বিচার প্রার্থনা করেন।
ন্যায্য মূল্যে পণ্য ও নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চতকরণে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো: শফিকুল ইসলাম এর নেতৃত্বে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ফোর্সের সহযোগিতায় সোমবার (২০ মে) কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী ও ফার্মেসীতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। তদারকি অভিযানে মেয়াদ উত্তীর্ণ খাদ্য পণ্য ও ঔষধ বিক্রয় করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে মুন্সীবাজারে অবস্থিত মেডিসিন কর্ণারকে ১০ হাজার টাকা, মমতা কনফেকশনারীকে ২ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ ও তা আদায় করা হয়।