হিমশীতল তাপমাত্রায় ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে
নৌকা ডুবিতে চার অবৈধ অভিবাসীর মৃত্যু
লন্ডন
ফ্রান্স থেকে একটি ছোট নৌকায় করে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ব্রিটেনে প্রবেশ করার সময় নৌকাডুবিতে চার অবৈধ অভিবাসীর করুন মৃত্যু হয়েছে। একটি অভিবাসী গ্রুপ উত্তর ফ্রান্স থেকে জাহাজে ব্রিটেনে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল এবং জাহাজ থেকে ছোট নৌকায় উঠার পর অধিক যাত্রীর কারণে নৌকাটি ইংলিশ চ্যানেলে ডুবে যায। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল শনিবার গ্রীনিচ মান সময় বিকেল দু্ই ঘটিকায়। ফ্রেঞ্চ মেরিটাইম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে হিমাঙ্কের তাপমাত্রা সত্ত্বেও উত্তর ফ্রান্স থেকে ব্রিটেনে পৌঁছানোর চেষ্টা করার সময় চারজন মারা গেছে এবং পঞ্চম একজনকে গুরুতর অবস্থায় অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম গুলো জানিয়েছে নিহতরা স্থানীয় সময় প্রায় ২ টায় (0100 GMT) উইমেরেক্সের সমুদ্রতীরবর্তী রিসোর্ট থেকে নৌকায় চড়ার চেষ্টাকারী ৭০ জনেরও বেশি ছিল। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে নিহত চারজন ইরাক ও সিরিয়ার বাসিন্দা।
এদিকে, ‘ইনফোমাইগ্রেন্ট’এর এক খবরে জানা যায়, নৌকায় চড়ে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর চেষ্টায় মারা গেছেন পাঁচ জন অভিবাসী৷ নিখোঁজ রয়েছেন আরো কয়েকজন৷ শনিবার রাতে অভিবাসীবাহী নৌকাটি তীব্র ঢেউয়ের তোড়ে ফরাসি উপকূলে ডুবে যায়৷ এ ঘটনায় শনিবার থেকে রোববার পর্যন্ত পাঁচ জন অভিবাসী মারা যাওয়ার তথ্য দিয়েছে স্থানীয় ফরাসি কর্তৃপক্ষ৷
রোববার (১৪ জানুয়ারি) ফরাসি ম্যারিটাইম প্রেফেকচুর জানিয়েছে, ফ্রান্স থেকে যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর সময় নৌকাডুবিতে শনিবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে রোববার (১৪ জানুয়ারি) দিবাগত রাতের মধ্যে পাঁচ ব্যক্তি মারা গেছেন৷ এটি নতুন বছরে ফরাসি উপকূলে প্রথম নৌকাডুবি ও অভিবাসী নিহতের ঘটনা।
তবে উত্তর ফ্রান্সের স্থানীয় দৈনিক লা ভোয়া দু নর্দ জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া অভিবাসীদের সংখ্যা ৭১ জন৷ তাদের মধ্যে দশ জন শিশুও রয়েছে৷ উদ্ধার অভিযানের দায়িত্বে থাকা নিকোলা লোকলে স্থানীয় গণমাধ্যমের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘এটি পুরোপুরি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি৷’’
বুলন-সুর-মের অঞ্চলের পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসের মতে, ‘‘নৌকাটি উপকূল থেকে অনেক দূরে পানির মধ্যে চালু করা হয়েছিল৷ নৌকায় ১২ থেকে ১৫ জন লোক ছিল বাকিরা নৌকায় উঠার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন৷’’
প্রসিকিউটর কার্যালয়ের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ‘‘রাত ১টা ৪৫ মিনিটে সমুদ্রের প্রবল ঢেউয়ের কারণে নৌকাটি ডুবে যায়৷ ঢেউ ও অন্ধকারের কারণে অভিবাসীদের নৌকায় উঠতে অসুবিধা হচ্ছিল৷’’
উদ্ধারকাজে ফরাসী কর্তৃপক্ষ হেলিকপ্টার ব্যবহার করে। |
আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি লণ্ডন থেকে লিখেছেন, ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল শনিবার গ্রীনিচ মান সময় বিকেল দু্ই ঘটিকায়। ফ্রেঞ্চ মেরিটাইম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে হিমাঙ্কের তাপমাত্রা সত্ত্বেও উত্তর ফ্রান্স থেকে ব্রিটেনে পৌঁছানোর চেষ্টা করার সময় চারজন মারা গেছে এবং পঞ্চম একজনকে গুরুতর অবস্থায় অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। ২০জন উন্নত হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত সহ বাহাত্তর জন অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়েছে, যার মধ্যে দুটি ছোট শিশু এবং একজন গর্ভবতী মহিলাকে বুলোনে হাসপাতালের জরুরি জরুরী বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। উত্তর ফ্রান্সের চ্যানেল অঞ্চলের জন্য সামুদ্রিক প্রিফেকচার বলেছে “, আমরা দুঃখিত যে চার অভিবাসী মারা গেছে এবং একজনকে বুলোন-সুর-মের হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে,। তিনি জানান বেলা ২ টার দিকে একটি নৌকা সমুদ্র সৈকত ছেড়ে যায়। স্থানীয় সাংবাদিকদের মেরিটাইম প্রিফেকচার জানিয়েছে উদ্ধারকারীরা “মৃত ও অচেতন মানুষদের পানিতে শনাক্ত করেছে”।
উপকূলে টহলরত একটি টাগবোট উদ্ধার করতে গিয়েছিল এবং মৃতদেহগুলি খুঁজে পায় ১৫ডিসেম্বরের পর এটাই চ্যানেলে মানবিক সংস্থা ইউটোপিয়া ৫৬-এর একজন মুখপাত্র বলেছেন: “এই পরিস্থিতিগুলি তৈরি হওয়া বেদনা এবং যন্ত্রণার মাত্রা আমরা কল্পনা করতে পারি না। আমরা কেন মানুষকে মরতে দিই যখন আমরা প্রকৃতপক্ষে সমাধান তৈরি করতে পারি, কেন রাজনৈতিক দায়-দায়িত্বের প্রতি কখনো ইঙ্গিত করা হয় না?“আমাদের বাইরের দিকে তাকাতে হবে এবং মানুষ কী অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা ভাবা উচিত, সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত এবং এখন বাস্তবসম্মত সমাধান তৈরির খুঁজা উচিত! অন্যথায়, এই পরিস্থিতি চলতেই থাকবে এবং আমাদের মানবিক মূল্যবোধগুলি তাদের সাথে ডুবে যাবে।” শনিবার তাপমাত্রা ছিল ১ থেকে ৪ ডিগ্রির মধ্যে।ক্যালাইস এর আশেপাশের অঞ্চল, ইংল্যান্ডে সবচেয়ে সহজভাবে ক্রসিংয়ের জন্য জাম্পিং-অফ পয়েন্ট, দীর্ঘদিন ধরে অভিবাসীদের জন্যেএই পয়েন্ট ছিল আকর্ষণীয়। সাঙ্গাতে একটি রেড ক্রস কেন্দ্র বন্ধ হওয়ার দুই দশকেরও বেশি সময় পরে, শত শত মানুষ এখনও ক্যালাইস এবং ডানকার্কের কাছে তাঁবু এবং অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে বাস করে, একটি ট্রাকে বা একটি ছোট নৌকায় লুকিয়ে ক্রসিং করার সুযোগের আশায়।নৌকাগুলি ব্রিটিশ সরকারের জন্য ফ্রান্সের সাথে বিতর্কের অন্যতম কারণ , আর এভাবেই ছোট নৌকায় করে বছরে কয়েক হাজার মানুষ বিপজ্জনক ভাবে ইংলিশ চ্যানেল পারাপার করছে।
ব্রিটিশ সরকারের মতে, ২০২৩ সালে প্রায় ৩০,০০০ মানুষ ইউরোপের মূল ভূখণ্ড থেকে অবৈধ ভাবে ব্রিটেনে ছোট নৌকায় চ্যানেল পাড়ি দিয়েছে। ঠিক এভাবে ২০২১ সালের নভেম্বরে অবৈধ অভিবাসীদের একটি নৌকা ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গেলে তাদের ডিঙ্গিটি ডুবে গেলে কমপক্ষে ২৭জন মানুষ ডুবে মারা যায়। এটি কোন নতুন ঘটনা নয় প্রতিবছরই এভাবে ফ্রান্স থেকে অবৈধ ভাবে ব্রিটেনে প্রবেশের সময় অসংখ্য অভিবাসী মারা যাচ্ছে। এসব অবৈধ অভিবাসীদের অধিকাংশই এশিয়া এবং আফ্রিকার মানুষ। উন্নত জীবনের আশায় সকলেই ব্রিটেনে প্রবেশ করতে চায় যা সত্যিই দুঃখজনক।
নিউজটি শেয়ার করতে বাটনের উপর ক্লিক করুন