“আষাঢ় মাসের ভাসা পানি…” আর “সোয়াচান পাখী…”র মত মন উতালা করা বাউল গানের শিল্পী বারী সিদ্দিকী আর নেই। বিশ্বজগতের সকল মায়া ত্যাগ করে, সুরের জগতকে চির বিদায় জানিয়ে সকল ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে গেছেন তিনি। তার সেই মন আউলা করা গান –
“আষাঢ় মাসের ভাসা পানিরে, আইলা বাড়ীর ঘাটে, অভাগীনি চাইয়া থাকি, আমারনি কেউ আসেরে।”
এর দরদী কন্ঠ যুগ যুগ চিরঞ্জীব হয়ে থাকবে বাঙ্গালী জীবনে। তার অসাধারণ সুরেলা সে কন্ঠধ্বনি প্রতিনিয়ত ফিরে ফিরে আসবে ঐন্দ্রজালিক সুরের মূর্ছনা নিয়ে বাউল বাংলার ঘরে ঘরে।
গতকাল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই শিল্পীর মৃত্যু হয়। খুবই দরদ দিয়ে খবরটি প্রকাশ করেছে ‘রেডটাইমস.কম.বিডি’।
রেডটাইমস লিখেছে, কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার, বাঁশিবাদক বারী সিদ্দিকী হৃদরোগ ছাড়াও কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। এ ব্যাপারে তার ছেলে সাব্বির সিদ্দিকী বলেছেন, আনুমানিক রাত আড়াইটার দিকে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি আর নেই।
গত ১৭ নভেম্বর রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে বারী সিদ্দিকীকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক আবদুল ওয়াহাবের তত্ত্বাবধায়নে সাত দিন আইসিইইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হলেও তার অবস্থার অবনতি ঠেকানো যায়নি।
১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর ভাটি অঞ্চলের জেলা নেত্রকোণায় আবদুল বারী সিদ্দিকীর জন্ম। শৈশবে পরিবারেই তার গান শেখার হাতেখড়ি। কিশোর বয়সে নেত্রকোণার শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের কাছে তালিম নেন বারী সিদ্দিকী। পরে ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষসহ বহু গুণীশিল্পীর সরাসরি সান্নিধ্য পান।
সত্তরের দশকে নেত্রকোণা জেলা শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গে যুক্ত হন বারী সিদ্দিকী। পরে ওস্তাদ গোপাল দত্তের পরামর্শে ধ্রুপদী সংগীতের ওপর পড়াশোনা শুরু করেন। এক সময় বাঁশির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং উচ্চাঙ্গ বংশীবাদনের প্রশিক্ষণ নেন। নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনে গিয়ে পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন বারী। দেশে ফিরে লোকগানের সঙ্গে ধ্রুপদী সংগীতের মিশেলে গান শুরু করেন।