সার্বিক (টোটাল) শিক্ষাব্যবস্থার উপর পুরোপুরি একপ্রকার বিষাদ কাজ করছে। প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা(প্রাইমারি থেকে Higher স্টাডি) পর্যন্ত সিরিজ আকারে নিজের মতামত লিখার চিন্তা থেকে এই সূচনা।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা-১ প্রাথমিক শিক্ষা( Primary Education)
সূচনাতে প্রাথমিক শিক্ষা(প্রাইমারি এডুকেশন) নিয়েই ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতার আলোচনা শুরু করতে চাই। প্রাইমারি শিক্ষা, যা নির্ধারন করে একটি শিশু বা কিশোর কিভাবে নিজেকে গড়ে তুলবে, গড়ে তুলবে তার ভবিষ্যৎ। আসলে প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে গঠন বা আকার(Shape) দেয়া যায় যেকোন শিশুর ভবিষ্যতকে। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে প্রাথমিক শিক্ষা, দেশ এর ভবিষ্যত নির্ধারন করার জন্য এক অমোঘ মুখ্য ভুমিকা পালন করে।
আমাদের দেশের প্রাথমিক শিক্ষার (প্রাইমারি এডুকেশন) অবস্থা, গঠনপ্রণালী বা অবয়বের(স্ট্রাকচার) দিক থেকে চিন্তা করলে আমাদের প্রাইমারি স্কুলের সংখ্যা কম নয়। তবে আরো প্রয়োজন। আর প্রতিটা স্কুলে রয়েছে শিক্ষক সল্পতা। কোন কোন সময় এক শিক্ষককে ২ ক্লাস সামলাতে হয় এমনো দেখেছি।
শিক্ষকদের পড়াশুনার পদ্বতি(সিস্টেম) বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে বলতে হয়- প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের পড়াশুনার পদ্বতি হওয়া সঠিক ছিল শিশুদের লালন-পালন(নার্সিং) করা ধরনের। কিন্তু আদতে কি আমরা এমন কিছু পাচ্ছি? পাচ্ছি না, হেতু হিসেবে আমি ৩ টা বিষয়কে দায়ী করবো-
১) নিয়োগ
২) ট্রেনিং প্রসিডিউর
৩) শিক্ষক সংখ্যা
৪) বেতন ফ্যাসিলিটি
নিয়োগ: আমরা প্রায় অনেকেই অবগত আছি সরকারি চাকরিগুলোর নিয়োগে কি হয়ে থাকে। অনেক ভালো শিক্ষক নিয়োগের যাঁতাকলে পড়ে আর শিক্ষকতায় আসতে পারেন না একথা অস্বীকার করার কোন জায়গা নেই। আর যারা টেবিলের তলা ব্যবহার করেছেন তাদের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করাটা বোকামু।
ট্রেনিং: যথাযথ ট্রেনিং পেলে বাঘকেও পোষ মানিয়ে সার্কাসে আনা যায়। সেখানে একটা শিশুকে কিভাবে গড়ে তুলতে হবে তার প্রশিক্ষন যথাযথ ভাবে দেয়া হয় এমন কথায় আমি সন্দিহান। বিশেষ করে রাজধানীর একেবারে কেন্দ্র ব্যতিরেখে সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রাথমিক স্কুলের সার্বিক অবস্থা বলার অপেক্ষাই রাখেনা।
শিক্ষক সংখ্যা: আমাদের স্কুল গুলোর তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা নেহায়েত কম। অন্তত আমার আশেপাশের চিত্র দেখে তাই বুঝা যায়। আগেই বলেছি এক শিক্ষককে ২ টা ক্লাস রুম সামলাতেও দেখেছি।
বেতন ফ্যাসিলিটি: প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের বেতন আরেকটু বাড়ানো উচিত। অন্তত আমি তাই মনে করি। তারা যদি টাকা পয়সার চিন্তায় একুল অকুল সামলানোতে ব্যস্ত থাকেন তা’হলে তাদের কাছ থেকে ছাত্ররা ভালটা পাবে কি করে?
শেষে আসি পরীক্ষার বিষয়টায়। আমার কাছে পিএসসি পরীক্ষাটাই গবেষণাবিহীন একটা সিদ্ধান্ত মনে হয়। কেননা ওই বয়সে বাচ্চারা কতটুকুই প্রতিযোগীতা বিষয়টা বুঝে? আর বিশেষ করে, পাশের হার বৃদ্ধির জন্য যদি ঢালাও ভাবে নম্বর দিতেই হয় তাহলে সেই নম্বর দিয়ে তাদের সঠিকভাবে বিচার করা কি যাচ্ছে? উল্টো কম পড়া শিক্ষার্থীদের (অভার কনফিডেন্স) অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস দিতে গিয়ে কি তাদের পড়াশুনার মৌলিকভাবে মহাক্ষতি করা হচ্ছেনা? কেননা যে ছাত্র কম পড়েও শুধু ঢালাও ভাবে নম্বর দেয়ার নীতির জন্য ৯০% পেয়ে যাচ্ছে; তাকে দিয়ে কিভাবে আশা করা যায় পরবর্তি সময়ে (নেক্সট টাইম এফোর্ট) প্রচেষ্টা বাড়াবে? আর প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাপারে কিছু নাইবা বললাম। তা সবাই আশা করি আশেপাশে তাকালেই দেখতে পান।
শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যয় বাড়িয়ে সুষ্ট ভাবেই শিশুদের গড়ে তুলাই জাতির উন্নয়নের প্রথম অগ্রাধিকার (প্রয়োরিটি) দেয়া উচিত এ সময়ে। নাহয় আজ থেকে ২০ বছর পর কাদের হাতে দেশ থাকবে সেটাও ভাববার সময় এখনই।
(ব্যক্তিগত অভিমত। অন্যদের ভিন্ন মতামত থাকতেই পারে। কারো সাজেশন থাকলে লিখতে পারেন।)