1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
বিজয়ের মাস : একজন জঁ পল ক্যুয়ে - মুক্তকথা
মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৯ পূর্বাহ্ন

বিজয়ের মাস : একজন জঁ পল ক্যুয়ে

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : বুধবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৬
  • ১৮৬১ পড়া হয়েছে

জঁ_n

জঁ ইউজিন পল ক্যুয়ে

লন্ডন: বুধবার, ২২শে অগ্রহায়ণ ১৪২৩।।  ৩রা ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল। উড়োজাহাজের নাম “সিটি অব কুমিল্লা”। নাবিক ছিলেন ৬জন আর যাত্রী মাত্র ২২জন। তাদের গন্তব্য ছিল লন্ডন থেকে পেরিস, রোম আর কায়রো হয়ে করাচী যাওয়া। সেদিনের ওই ফ্লাইটের নম্বর ছিল পিকে-৭১২। এই “সিটি অব কুমিল্লা”কে নিয়ে ঐতিহাসিক এক ঘটনা ঘটেছিল পেরিসের অরলি বিমান বন্দরে। ঘটনার নায়ক ছিলেন অনুমান ২৮ বছর বয়সের এক ফরাসী যুবক, যার নাম ছিল “জঁ ইউজিন পল ক্যুয়ে”।

মানুষের মন সত্যই দূর্বোধ্য! কখন মন কি চায়, কখন মন বদলে যায়, মানুষ নামের মনের সেই অবয়বটিও মনে হয় বেশী আগে থেকে কিছু বলতে পারে না। ক্ষনজন্মা সকল মহাপুরুষেরাও আগে ভাগে মনের খবর বলতে পারেন না। এভাবে প্রতিমূহুর্তে লক্ষ কোটি মানুষের মন বদলাচ্ছে। মন বদলের এই মহাযজ্ঞে প্রতিমূহুর্তে মানব সমাজে কতসব কান্ড ঘটছে সব খবর কি তার রাখা সম্ভব। এই অত্যাধুনিক ‘ফেইচবুক’এর যুগেও সকল খবর রাখা সম্ভব নয়।

কিছু কিছু মানুষের ক্ষনিক সময়ের মনবিবর্তন ইতিহাস সৃষ্টি করে। কালোজয়ী সেসব কাহিনী, যুগ যুগ এই মানুষেরই প্রেরণার উৎস হয়ে থাকে। অতীতের পাতা উল্টালে এমন ভুরি ভুরি প্রমান পাওয়া যাবে। তেমনি এক মানুষের কাহিনী শুনালেন অগ্রজতুল্য শ্রদ্ধেয় রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী সহেব। যুবক জঁ ইউজিন পল ক্যুয়ে’র কাহিনী।

377931_254966354557485_1418111520_nজঁ ক্যুয়ে (Jean Quai) এক ফরাসি যুবক। অনেক খুঁজ খবর নিয়ে জেনেছি জঁ ক্যুয়ে মূলতঃ একজন ফরাসি সাহিত্যিক। ঘটনার তারিখ ৩রা ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল। ২৮ বছর বয়সের জঁ, যুদ্ধরত বাংলাদেশীদের সাহায্যের জন্য ফ্রান্সের অরলি বিমান বন্দরে পাকিস্তানের একটি বোয়িং বিমানকে প্রায় ৮ঘন্টা আটকিয়ে রাখেন। তার উদ্দেশ্য ছিল উড়োজাহাজ ভর্তি ঔষুধ নিয়ে যাবেন পাকহানাদারদের পাশবিক নরহত্যার শিকার মরণপন যুদ্ধরত বাঙ্গালীদের সাহায্যে। তার সে উদ্দেশ্য সেদিন অবশ্য পূরণ হয়েছিল কিন্তু তাকে যেতে হয়েছিল কারাগারে। আজও বাঙ্গালী মানসে সে চিত্র ভেসে উঠে আসে প্রতি ডিসেম্বরে, এই বিজয়ের মাসে। মানুষের এমন ইতিহাস কখনও মুছে দেয়া যায় না। এসব কাহিনী ঘুরে ঘুরে আসে মানুষের মাঝে ইতিকথা হয়ে, তারপর হয় ইতিহাস। “জাঁ ক্যুয়ে” তাই আমাদের স্বাধীনতার আর তারুণ্যের এক শ্বাশ্বতঃ প্রতীক হয়ে আছেন, থাকবেনও চিরকাল।

জাঁ ক্যুয়ে কোনভাবেই বাঙ্গালী ছিলেন না কিংবা তার ঘটনার ১৩দিন পরে স্বাধীন হতে যাওয়া বাংলাদেশের রাজনীতির সাথেও তার কোন পরিচয় ছিল না। তিনি শুধু জানতেন পূর্বপাকিস্তানে পাক-সামরিক জান্তা সাধারণ মানুষের উপর যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। নিরুপায় মানুষ জান বাঁচানোর জন্য জীবনের সকল সঞ্চয়, মায়া-মমতা, স্বাদ-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ওপারে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। আর ওখানে এমনিতেই  খাদ্যের অভাব তার উপর ঔষুধের অভাব মানুষের জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছে। জাঁ ক্যুয়ের অন্তর আয়নায় ভেসে উঠা ওই দৃশ্য তার মানবাত্মাকে জাগিয়ে দেয়। মানবতার দুর্দশায় তার মন কেঁদে উঠে। তাকে করে তোলে বিদ্রূহী! এ অবস্থায় হাতের কাছেই পেয়ে যান পাক হায়েনাদের বিমান বোয়িং ৭২০কে।

386084_254965787890875_2024963202_nউড়োজাহাজটির নাম “সিটি অব কুমিল্লা”। বিমানটি তখন দাড়িয়ে আছে যাত্রীসহ ঔষুধ নিয়ে যাবে পাকিস্তানে। মন ঠিক করে তিনিও উঠে পড়েন বিমানে। সময়টি ছিল ৩রা ডিসেম্বরের বিকাল ৫টা ৫মিনিট। ঘটনাটি যখন ঘটে তখন জার্মানীর ভাইচ চ্যাঞ্চেলার উইলি ব্রান্ডট, ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট পম্পেদ্যু’র সাথে বৈঠক করতে ওই অরলিতেই এসে পৌঁছান ঠিক ওই সময়টাতেই।

যাত্রী না হয়েও কিভাবে তিনি বিমানে উঠে পড়লেন আজও রহস্যাবৃত হয়ে আছে; কেউ কোন সূত্র বের করতে পারেননি। একজন মানুষ মনের দিক থেকে কতটুকু বিদ্রোহী হয়ে উঠলে এমন জীবন বিনাশী ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানের নিয়ত করতে পারে তা ওই ঘটনার গভীরে না পৌঁছালে বুঝা যায় না। সেদিনের পূর্বপাকিস্তানে নিরীহ বাঙ্গালী মানুষের উপর পাক বর্বরদের ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞের পাশবিক রূপ জাঁ ক্যুয়ের মনোজগতে গভীর রেখাপাত করে। মানবতার আর্তনাদে তার অন্তর সেদিন নিশ্চয়ই কেঁদে উঠেছিল। তাই তিনি পেরেছিলেন দুর্জয়ের এক দৃপ্ত প্রত্যয়ে এগিয়ে আসতে।

বিমানে আরোহন করে জঁ ক্যুয়ে তার সঙ্গে থাকা ছোট্ট রিভলবার উঁচিয়ে ককপিটে বসে থাকা পাইলটকে, বিমান উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে, তার দাবী মেনে নেয়ার কথা বলেন। তার দাবী কোন টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ কিছুই ছিল না। দাবী তার একটিই ছিল আর সে ছিল দূর্দশাগ্রস্ত বাঙ্গালী মানুষের জন্য ২০টন ঔষধ! বেলা ৬-১৫ মিনিটের সময় ফরাসী কর্তৃপক্ষ মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে তার সে দাবী মেনে নেয়। তারা ওই সময় এক চালান ঔষধ বিমানে তুলতে শুরু করে আর এই ফাঁকে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের লোক বিমানে তুলে নেয়। জঁ ক্যুয়েকে তারা সন্মত করে, বাচ্চাদের নিরাপদে নেমে যাবার কথায়। এভাবে বেলা ৭টার দিকে দ্বিতীয় দফায়ও ঔষধ উঠানোর সাথে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের লোক বিমানে উঠে পড়ে ক্যুয়েকে গ্রেপ্তার করার উদ্দেশ্যে। এক ফাঁকে ঔষুধ বহনকারীর বেশে থাকা পুলিশ জঁ ক্যুয়েকে হাতকড়া পড়িয়ে দেয়। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় অরলি’র নিকটস্ত পুলিশ ফাঁড়িতে।

screen-shot-2016-12-04-at-15-33-09বিমান থেকে ছাড়া পেয়ে বেরিয়ে আসা যাত্রীগন সেদিন ‘জঁ ক্যুয়ে’র বিষয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেছিলেন সে খুবই ভ্দ্র ও বিনয়ী ছিল। সে আমাদের খাবার সুযোগ দিয়েছিল। ছিনতাই চলাকালীন সময় বিমানের ভিতরে থেকে জঁ ক্যুয়ে একটি শিশুসহ যাত্রী এক মায়ের সাথে আলাপ করে বলেছিল তোমাদের ভয়ের কোন কারণ নেই।

ওই ঘটনার দায়ীত্বে নিয়োজিত পুলিশ অফিসার ‘এন্টনি সিব্ল’ সেদিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন-“ছেলেটির অমনযোগীতার সুযোগে তাকে ধরার জন্য আমাদের পরিকল্পনাকে আমরা কাজে লাগিয়েছি।”

এই জঁ ক্যুয়ে বিষয়ে “মুক্তিযুদ্ধ ৭১” এ ব্লগার কাউসার রুশো লিখেছেন-“বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের পক্ষে বহু ধরনের মানুষ বিচিত্র ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং তাঁদের একজন ছিলেন জঁ ইউজিন পল কে। অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় এই ফরাসি লেখক জীবনে বিবিধ অভিজ্ঞতার অধিকারী হয়েছিলেন, চিন্তা-চেতনার দিক দিয়েও ছিলেন বিচিত্রমুখী। গোড়াতে তিনি ছিলেন ফরাসি সেনাবাহিনীর সদস্য, তারপর সেনাবাহিনী ত্যাগ করে যোগ দেন কুখ্যাত ওএএসে; যে গোপন বাহিনী মনে করত আলজেরিয়া হচ্ছে ফ্রান্সের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তা কখনো হাতছাড়া হতে দেওয়া যায় না। আঁদ্রে মালরোর রচনা পড়ে বোধোদয় হয় পল কের। তিনি ওএএস ত্যাগ করে হয়ে ওঠেন বিশ্বপথিক। তবে পুরোনো মতাদর্শের জের একেবারে কাটিয়ে উঠতে পারেন না। স্পেন, লিবিয়া ও বায়াফ্রায় বিভিন্ন দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে ভিড়ে যান।

ap-amg_hijackings1

ছিনতাই করা “সিটি অব কুমিল্লা”

একাত্তর সালে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের বার্তা তাঁকে আলোড়িত করেছিল। এরপর আঁদ্রে মালরো যখন বাংলাদেশের পক্ষে লড়বার ব্রত ঘোষণা করেন, তখন গুরুবাক্যে বিশেষ অনুপ্রাণিত বোধ করেন পল কে। ৩ ডিসেম্বর তিনি প্যারিসের অরলি বিমানবন্দরে ব্যাগে বোমা নিয়ে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ৭১১ বিমানটি দখল করতে সমর্থ হন। তাঁর ব্যাগ থেকে বের হয়ে আসা বৈদ্যুতিক তার জানান দিয়েছিল ভেতরে বহন করা বোমার। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামীদের জন্য জরুরি ওষুধ বহন করে নিয়ে যাওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। কয়েক ঘণ্টা পর ওষুধের কার্টন বোঝাই করবার অজুহাতে পুলিশ বিমানে ঢুকে তাঁকে পরাভূত করতে সমর্থ হয়। ব্যাগ খুলে দেখা যায় সেখানে রয়েছে কতক বই, এক কপি বাইবেল এবং একটি ইলেকট্রিক শেভার।

এই ঘটনার পরপরই উপমহাদেশে শুরু হয়েছিল সর্বাত্মক যুদ্ধ। সেই ডামাডোলে হারিয়ে গেল পল কে-র ঘটনা। অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে আনা মামলা চলেছিল বেশ কিছুকাল। আদালতে অভিযুক্তের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন আঁদ্রে মালরো স্বয়ং। অভিযোগ থেকে খালাস পাওয়া পল কে আবারও ঘুরে ফিরেছেন অ্যাডভেঞ্চারের খোঁজে। ১৯৮১ সালে তাঁকে দেখা গিয়েছিল হিমালয় এলাকায় তপস্যারত, এরপর কিছুকাল ছিলেন অস্ট্রেলিয়ায়, পরে আবারও তাঁকে দেখা গেল কলকাতায়, সেখানে জননিরাপত্তা ভঙ্গের অভিযোগে কিছুদিন কাটান কারাগারে। ভারত থেকে বহিষ্কৃত হয়ে ১৯৮৫ সালে তিনি যান ওয়েস্ট ইন্ডিজে। এরপর তাঁর আর খোঁজ মেলেনি।”

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT