যুক্তরাজ্য মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আয়োজনে মুক্তিযোদ্ধা লন্ডনবীর মুক্তিযোদ্ধা আমান উদ্দিন। যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশী সমাজে খুবই পরিচিত একটি নাম। বিশেষকরে লণ্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস বরো’র বাঙ্গালীদের কাছে তিনি ছিলেন সুপরিচিত সদা হাসিমুখের একজন সাহসী ও কর্মপ্রিয় মানুষ। বীর আমান উদ্দীন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকপশুদের ট্রাকে বোমাবিষ্ফোরণ ঘটিয়েছিলেন বীরত্বের সাথে আর এমন সব কথাই বললেন তার সতীর্থ সহযোদ্ধা, বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়জনেরা, তারই প্রয়ানে আয়োজিত শোক সভায়। বক্তাগন আরো বলেন যে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ায় তার স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা ছিল জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক ন্যায়বিচার ও একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। বীর মুক্তিযোদ্ধা আমান উদ্দিনের স্মৃতিচারণ করে বক্তারা আরো বলেন, তিনি ছিলেন একজন স্পষ্টভাষী ও ন্যায়পরায়ন ব্যক্তি। অসাম্প্রদায়িক, বন্ধুবৎসল সদাহাসিমাখা মুখের আমানউদ্দীন ছিলেন ন্যায়ের প্রতি অবিচল থাকা এক শক্ত মনের মানুষ। মানুষ আমান উদ্দীন ব্যক্তিজীবনে দারিদ্রের সাথে অনেক লড়াই করেছেন। দারিদ্রের সে লড়াইয়ে অংশ নিতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পরপরই তিনি কাজের প্রশ্নে শিক্ষকতাকে বেচে নেন। শিক্ষক হিসেবে চাকুরী নেন চন্দরপুর আল-এমদাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আমান উদ্দিন একাত্তরে ৯ মাসব্যাপী রণাঙ্গনের যোদ্ধা ছাড়াও ‘গোলাপগঞ্জ মুক্ত করা’ যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। সদ্যপ্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আমান উদ্দীনের উদ্দেশ্যে গত ২০ জুন পূর্ব লন্ডনের মাইক্রো বিজনেস সেন্টারে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যুক্তরাজ্য, আয়োজন করে এক শোকসভার। সেখানেই বক্তাগন উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। শোক সভায় সভাপতিত্ব করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার আওয়ামীলীগ নেতা জনাব গিয়াস উদ্দিন। সভা পরিচালনা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রবীন সাংবাদিক আবু মুসা হাসান। সভার শুরুতে ডা. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আমান উদ্দিনের জীবন বৃত্তান্ত পড়ে শোনান। এরপর তাঁর চির শান্তি কামনা ও সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সংবাদমাধ্যম ব্যক্তিত্ব উর্মি মাজহার ‘মুক্তিযোদ্ধার ডায়েরী’ কবিতাটি পাঠ করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মাহমুদ হাসান এমবিই, আহবাব হোসেন চৌধুরী, লোকমান হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক হারুনূর রশিদ, দেওয়ান গৌস সুলতান, আবদুল মন্নান, আবুল কাসেম, ফয়েজুর রহমান, আবদুর রহমান, গোলাম আলী সৈয়দ, ওয়ালি রহমান, মোহাম্মদ আবদুল হাদী ও প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আমান উদ্দিনের ভ্রাতুষ্পুত্র আফসর হোসেন এনামসহ আরো অনেকে। শোকসভায় উপস্থিত ছিলেন বৃটেন প্রবাসী বহু মুক্তিযোদ্ধা ও সুধীজন। এছাড়াও স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন, কবি শামীম আজাদ, টাওয়ার হ্যামলেটসের সাবেক মেয়র সয়ফুল আলম, সাংবাদিক ও কবি হামিদ মোহাম্মদ, ‘আমরাএকাত্তর’ সংগঠনের পক্ষে সত্যব্রত দাস স্বপন, সাংবাদিক মো. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ, রাজনীতিক গয়াছুর রহমান গয়াছ, লেখক আবদুল আজিজ তকি, কবি মুজিবুল হক মনি, টাওয়ার হ্যামলেটসের সাবেক স্পীকার আহবাব হোসেন, ওয়ালি রহমান, শিক্ষাবিদ ড. আবদুল হান্নান, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী যুক্তরাজ্য সংসদের সাবেক সেক্রেটারি আমিনা আলী ও সংস্কৃতিকর্মী সুলতানা রশিদ জলি।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ এ রউফ, মো. মোস্তাক ও আশরাফ ভুইয়া মুকুল। কমিউনিটি নেতাদের মধ্যে ছিলেন, আবদুল বাছির, মো. নুরুল আমিন, কবির আহমদ, সাজাদুল আহমদ, আবদুস ছাত্তার, সংস্কৃতিকর্মী সৈয়দ এনামুল ইসলাম, সাংবাদিক নীলুফা ইয়াসমীন হাসান, আবদুল মুকিত, ফেরদৌস হালিম খান, মো. রেদওয়ান খান, ইসমাইল আহমেদ, সংস্কৃতিকর্মী লেনিন হক, ওয়ার্কাস ইউনিয়নের নেতা শাহরিয়ার বিন আলী, উদীচীর সেক্রেটারি জুবের আক্তার সোহেল, শাহাব উদ্দিন, রাজনীতিক আনসার আহমেদ খান ও সাংবাদিক শাহ মোস্তাফিজুর রহমান বেলাল। উল্লেখ্য, গত ৩রা জুন বীর মুক্তিযোদ্ধা আমান উদ্দিন সিলেট শহরের একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ৮০ বছর। গোলাপগঞ্জ উপজেলার চন্দরপুরের বানিগাজী গ্রামে তার বাড়ী। মৃত্যুকালে তিনি ৩ছেলে ও ১মেয়েসহ বহু গুণগ্রাহী ও আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন। তার কন্যা বর্তমানে বাংলাদেশে গ্রামের বাড়ী চন্দরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। বড় ছেলে…লণ্ডনে একটি অনলাইন রেডিও পরিচালনা করেন। মেঝো ছেলে… বাংলাদেশে একজন জলযান প্রকৌশলী(মেরিন ইঞ্জিনিয়ার) এবং ছোট ছেলে বাংলাদেশে রাজশাহীতে ইউএনও পদে দায়ীত্বপালন করছেন। |