লন্ডন: রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা নির্যাতনের কারণে মায়ানমারের(ব্রহ্মদেশ) সুখ্যাতি বিনষ্ট হচ্ছে। কথাটি শুনালেন নোবেল শান্তি পুরস্কারে বিভূষিত মায়ানমারের অং সান সুকি কে, বৃটিশ পররাষ্ট্র সচিব বরিস জনসন।
তিনি, রাখাইন রাজ্যের মুসলমানদের নিয়ে মায়ানমার সরকারের পক্ষপাতপূর্ণ আচরণের সমাপ্তি আনার কাজে মায়ানমারের অবিসংবাদিত নেত্রী মিসেস অং সু কি’কে তার অসাধারণ কর্মক্ষমতাকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান। গত ৩রা সেপ্টেম্বর বিবিসি এমন খবর দিয়েছে।
সপ্তাহ দু’এক আগ থেকেই মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চরম হিংস্রতা, হত্যা নির্যাতন শুরু হয় ফলে এ পর্যন্ত প্রায় ৫৮ হাজার রোহিঙ্গা দেশত্যাগী হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এ পর্যন্ত এ হিংস্রতায় শতাধিক মানুষ প্রান হারিয়েছে।
রোহিঙ্গাদের ভাষায়, মায়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনী ও বৌদ্ধ উশৃঙ্ক্ষল কিছু মানুষ, তাদের গ্রামের পর গ্রামের বাড়ী-ঘর সব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। মায়ানমারের নিরাপত্ত্বা বাহিনীর বক্তব্য, তারা কম করে হলেও রোহিঙ্গা মুসলিম সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ২০টি আক্রমণের আইনী প্রতিরোধ করছে।
রাখাইন, মায়ানমারের সবচেয়ে গরীব রাজ্য, কম করে হলেও ১০ লাখের উপর রোহিঙ্গাদের আবাসভূমি। গরীব এই রোহিঙ্গারা দশকের পর দশক ধরে বৌদ্ধ সংখ্যাগুরুদের দেশ মায়ানমারে নির্যাতীত হয়ে আসছে। শতাব্দির পর শতাব্দি বসবাসের পরও তাদের নাগরীক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি মায়ানমার সরকার।
১৯৬২ সালের পর থেকে একাধারে এই মায়ানমারে সামরিক একনায়কতন্ত্র চলে আসছিল। এই অবস্থায় দৃঢ় রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে দেশটিতে প্রথম নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং এমএস অং সু কি নোবেল শান্তি পুরষ্কারে ভূষিত হন। কিন্তু দেশের শাসনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতা থাকায় সু কি রাষ্ট্র প্রধান হতে পারেন নি। তবে তিনি অলিখিত জননেত্রী ‘স্টেট কাউন্সিলার অব মায়ানমার’ হিসেবে স্বীকৃত হন।
১৯৯০ সালে সুকি’কে মায়ানমারের সামরিক সরকার গৃহবন্ধী করে নিলে তিনি দুনিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন এবং প্রসিদ্ধি লাভ করতে থাকেন। বৃটিশ পররাষ্ট্র সচিব বরিস জনসন বলেন, আমাদের সময়ের খুবই উদ্বুদ্ধকারী ব্যক্তিত্ব অং সান সু কি সঠিকভাবেই সম্মানিত হয়েছিলেন কিন্তু বর্তমানে রোহিঙ্গাদের সাথে মায়ানমার সরকারের হিংস্র আচরণ সে দেশের সুখ্যাতিতে হায়! কলঙ্ক লেপন করে দিচ্ছে।
জনসন আরও বলেন, “দেশকে আধুনিকায়নে সু কি যথেষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতার সন্মুখীন হচ্ছেন। আমি আশা করবো তিনি তার সকল বুদ্ধি দীপ্তি ও মেধা ক্ষমতা কাজে লাগাবেন চলমান চরম সহিংসতা ও মিথ্যা হিংসা-বিদ্বেষের আগুনে বিবদমান মুসলমান ও অন্যান্য জাতিগুষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রীতি সৃষ্টির মধ্যদিয়ে দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজে।”
“এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে দেশে একটা স্বস্তি-শান্তির সুন্দর অবস্থা ফিরিয়ে আনতে তিনি সক্ষম হয়েছেন এবং একাজে মায়ানমারের সামরিক সরকার তাঁকে সহায়তা করেছে। একাজে তিনি এবং ব্রহ্মদেশের সকলের প্রতিই আমাদের সমর্থন থাকবে।”
যুক্তরাজ্যে বার্মা প্রচারাভিযানের পরিচালক মার্ক ফার্মানের বলেন, মিঃ জনসন মায়ানমারের সামরিক প্রধান মিং আং হেলাং এরও সমালোচনা করা উচিৎ ছিল। এই মিং আং হেলাং এর সৈন্যরাই শত শত রোহিঙ্গাগে হত্যা করেছে। এই হেলাং ই একমাত্র ব্যক্তি যিনি সৈন্যবাহিনীকে হুকুম দিয়ে বলতে পারেন রোহিঙ্গা গ্রামবাসীদের উপর আক্রমণ ও তাদের শিশুসন্তানদের গুলি এবং বাড়ী-ঘরে আগুন দিয়ে না পুড়াতে।
এদিকে বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতও মায়ানমার সরকার ও অং সান সু কি’র কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন যে মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিয়ে এখন যা হচ্ছে তা পুরোপুরি গণহত্যা।