।। আব্দুল ওয়াদুদ ।।
রোববার, ১৮ই সেপ্টেম্বর ২০১৬
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার টেংরা ও কামারচাক ইউনিয়নে মনু নদীর বাঁধে ১৫ টি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এতে ২০ টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ চরম ঝুঁকিতে জীবনযাপন করছেন। ভাঙ্গন প্রতিরোধে আগে থেকে ব্যবস্থা গ্রহন না করার কারণে ভাঙ্গন দেখা দেওয়ায় দরিদ্র কৃষিজীবী এসব গ্রামের বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পানি কমার সাথে সাথে দ্রুত ভাঙ্গা বাঁধ মেরামত না করা গেলে দুর্ভোগে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, ঈদের আগের ৩ দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে মৌলভীবাজারের মনু নদীর পানি বাড়ায় প্রবল স্রোতে উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের ৯টি ও কামারচাক ইউনিয়নের ৬টি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের ভোলানগর গ্রামের মনু নদীর পানি নদী তীরবর্তী ফারুক মিয়ার বাড়ী পর্যন্ত চলে আসে। ভাঙ্গন মোকাবেলায় এই পরিবারের সদস্য মিলে বস্তায় মাটি ভরে বাঁধ দিয়েছেন। পাশেই বাঁধের আরেকটি স্থানে প্রায় ১২ মিটার ভাঙ্গন দেখা দিলে স্থানীয়রা টিন, বস্তা ও বাঁশ দিয়ে বাঁধ দিয়েছেন। মনু তীরবর্তী খাস প্রেমনগর গ্রামের ফাজিল মিয়ার বসত ঘরের পাশের একটি স্থানে ২০ ফুটেরও বেশি জায়গা নদীর প্রবল স্রোতে ভেঙ্গে গেছে। যেকোনো সময় তার বসত ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। টেংরা ইউনিয়নের কোণাগাঁও গ্রামে বাঁধের প্রায় ৫০ মিটার জায়গা পানির আঘাতে ভেঙ্গে গেছে। দুটি স্থানের বাঁধ ভেঙ্গে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করলেও পানি কমে যাওয়ায় বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ওই গ্রামের নদী তীরবর্তী দুলাল মিয়ার বাড়িটি ঈদের আগের দিন রাতে নদী থেকে ১৫ মিটার দূরে থাকলেও এখন বাড়িটি নদীতে বিলীন হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
দুলাল মিয়া বলেন, ভাঙ্গন ঠেকাতে মাটি ভর্তি বস্তা ফেলেও কাজ হয়নি। এখন বাড়িটি নদীতে তলিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় আছে। পরিবার নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছি।
ভোলানগর গ্রামের ফারুক মিয়া (৫০) বলেন, বুধবার রাতে নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে তীব্র স্রোতে বাঁধ ভেঙ্গে বাড়িতে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। বাড়ির সবাই মিলে ভাঙ্গন ঠেকাতে বস্তায় মাটি ভরে বাঁধ দিয়েছি। ভাঙ্গন আতঙ্কে রাতে ঘুমোতে পারি না।
খাস প্রেমনগর গ্রামের ফাজিল মিয়া (৪০) বলেন, বাঁধে ভাঙ্গন দেখা দেওয়ায় পরিবার নিয়ে বিপদে আছি। ঘরের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছি। ভিটেটুকু নদীতে চলে গেলে কোথায় যাবো এ নিয়ে চিন্তায় রয়েছি।
এদিকে এসব এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দেওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন নদী তীরবর্তী কামারচাক ইউনিয়নের আদমপুর, পূর্ব আদমপুর, পশ্চিম আদমপুর, মালিপাড়া, ভোলানগর, দস্তিদারের চক, বিশালী, পূর্ব মিঠিপুর, পশ্চিম মিঠিপুর ও টেংরা ইউনিয়নের হরিপাশা, উজিরপুর, কান্দিরকুল, একামধু, টগরপুর, কোণাগাঁও, ভাঙ্গারহাট, আদিনাবাদ সহ ২০ টি গ্রামের ২০ হাজার মানুষ। মনু নদীর এই বাঁধের উপর দিয়ে এসব গ্রামের হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। বাঁধের বেশির ভাগ অংশ ভেঙ্গে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কাও করছেন স্থানীয়রা।
টেংরা ইউপি চেয়ারম্যান টিপু খান বলেন, স্থানীয়দের নিয়ে কাজ করে কোনোমতে ভাঙ্গন ঠেকানো গেছে। ঝুঁকিতে থাকা স্থান সম্পর্কে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বারবার অবহিত করলেও তারা ভাঙ্গন প্রতিরোধে আগে থেকে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ভাঙ্গন প্রতিরোধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা না নিয়ে তারা কিছু মাটি ফেলেই দায় সাড়েন। দ্রুত টেকসই ভাবে বাঁধ মেরামত না করলে বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুর রব বলেন, প্রাথমিক ভাবে বস্তায় মাটি ভরে ভাঙ্গন প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাঁধ মেরামতের জন্য অর্থ বরাদ্দ চেয়েছি। বরাদ্দ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।