সমাধানের একটা পথ বের হবেই। শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের নাগরিকদের উদ্দেশে বার্তা দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি হবে এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেই। শনিবার দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে জানালেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, “আশা করি শ্রীঘ্রই তিস্তা জট কাটবে। এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে।” তবে এ বারই তিস্তা নিয়ে কোনও দফারফা হবে কিনা তা নিয়ে আশার কথা শোনা যায়নি। বিভিন্ন সূত্রে খবর, জলের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল বিষয়ে সব দিক ভেবেচিন্তেই এগোতে চান মোদী। পশ্চিমবঙ্গের মতামত এ ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও আজ ভারত, বাংলাদেশের দুই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছিলেন। তিস্তার জল নিয়ে ইতিমধ্যেই নিজের সরকারের মধ্যে আলাপ আলোচনা চালাচ্ছেন তিনি। সব দিক খতিয়ে দেখে শীঘ্রই একটা রফাসূত্র বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছে উভয় পক্ষই।
তিস্তা নিয়ে চূড়ান্ত কিছু না হলেও, ভারত আর বাংলাদেশের মধ্যে আজ ২২টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সই হয়েছে আরও চারটি মউ বা সমঝোতাপত্র। সন্ত্রাস মোকাবিলা, সীমান্ত সুরক্ষা ছাড়াও প্রতিরক্ষা, মহাকাশ গবেষণা, পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার, তথ্যপ্রযুক্তি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি-সহ বিভিন্ন বিষয়ে চুক্তিগুলো সই হয়েছে। এ ছাড়া ভারত বাংলাদেশকে প্রায় ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ দিয়ে সাহায্য করবে বলেও একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
এ দিন সন্ত্রাস মোকাবিলায় দৃঢ় ভাবে একজোট থাকার বার্তা দিলেন দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা দুই দেশই সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে আপস করি না। দু-দেশের সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে আমরা উদ্যোগী।”
তবে এত কিছুর পরও বাংলাদেশের কাছে বড় প্রত্যাশা হয়ে থাকছে তিস্তা চুক্তিই। গত ৩৪ বছর ধরে ঝুলে রয়েছে তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি। পরের বছরই বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন। সেই ভোটে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক উন্নয়ণের গতি হাসিনার পক্ষে বড় হাতিয়ার সন্দেহ নেই। কিন্তু তার আগে তিস্তা চুক্তি হয়ে গেলে নিঃসন্দেহে তা তাঁর সাফল্যের মুকুটে বড় পালক হয়ে উঠবে। তার থেকেও বড় কথা, তিস্তার বাড়তি জল পেলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার ছবিটাই বদলে যাবে। বাংলাদেশের একটা বিরাট অংশের কৃষক তিস্তা নদীর জলের উপর নির্ভর করেন।
অন্য দিকে, ২০১৮ সালে এ রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে উত্তরবঙ্গের কৃষকদের কোনওভাবেই ক্ষুন্ন করতে চান না মমতা। দক্ষিণ দিনাজপুর, দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ির কৃষকরা তিস্তা নদীর জলের উপর অনেকটাই ভরসা করে বেঁচে থাকেন। ফলে মমতাও এই চুক্তিতে সব দিক আটঘাট বেঁধেই সায় দিতে চান। -আনন্দবাজার থেকে