মুক্তকথা: সোমবার, ১৭ই অক্টোবর ২০১৬।। বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিক ও সমাজসেবী দেওয়ান মাহবুবুর রব সাদী (সাদি ভাই) আর নেই। গতকাল রাতের দিকে ঢাকার ইউনাইটেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরলোকগমন করেছেন, (ইন্নালিল্লাহি…রাজেউন)।
গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ভীষণভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন। ভর্তির সাথে সাথে তাকে নিবির পরিচর্জা কেন্দ্রে(আইসিইউ)তে নেয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত আড়াইটার দিকে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে।
মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান মাহবুবুর রব সাদী ১৯৪২ সালের ১০ই মে সিলেটে জন্ম গ্রহন করেন। নবীগঞ্জের পাহাড়ী অঞ্চল সদরঘাটের বনগাঁও এ তার আদি নিবাস। তার বাবা দেওয়ান মোহাম্মদ মামুন চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের সময় ৩দিন পাকবাহিনীর হাতে বন্ধী ছিলেন। সামন্তশ্রেনীর পরিবারে জন্ম নিয়েও সাদী বড় হয়ে উঠেন বাবার অজান্তে আশ-পাশের সাধারণ নিরীহ মানুষজনকে সাহায্য সহায়তার মধ্যদিয়ে। এক দরদীমনের উদার মানুষ হিসেবেই তাকে সকলেই শ্রদ্ধার চোখে দেখতো। ছোট বেলা থেকেই সাদী সংগ্রামী মানুষ ছিলেন। ষাটের দশকে ছাত্রাবস্থায় তিনি সিলেট ও মৌলভীবাজারে পূর্বপাকিস্তান ছাত্রলীগের একজন সাহসী নিষ্ঠাবান নেতা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়ে ছিলেন। তিনি মৌলভীবাজার ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ছিলেন।
দেওয়ান মাহবুবুর রব সাদী মুক্তিযুদ্ধে ৪নং সেক্টরের জালালপুর উপসেক্টরের অধিনায়ক ছিলেন। তার নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ পরিচালিত হয়। এর মধ্যে কানাইঘাট থানা আক্রমণ অন্যতম। সাহসী মুক্তিযোদ্ধা রাজনীতিক সাদী মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য “বীর প্রতীক” উপাধিপ্রাপ্ত হন কিন্তু তিনি তা গ্রহন করেননি। তার গ্রহন না করার কারণ ছিল এই যে, সাধারণ মানুষজন নিজের জীবন বাজী রেখে পরিবার পরিজন বর্জন করে মুক্তিযুদ্ধে শরিক হয়ে যে বীরত্বের পরিচয় দিয়েছে তার উপরে আর কোন বীরত্ব হতেই পারে না। এছাড়াও পেশাজীবী সামরিক বাহিনীর সৈনিক না হয়েও বহু মুক্তিযোদ্ধা চরম বীরত্বের স্বাক্ষর রেখেছে তাদের কেনো(?) বীরশ্রষ্ঠ উপাধি দেয়া হবে না। এই না দেয়াকে তিনি একটি বিশেষ মহলের নীতিহীন অন্যায় মনে করেছিলেন। এই একটিমাত্র কারণে তিনি তার “বীর প্রতীক” উপাধি গ্রহন করেননি।
মরহুম সাদী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এরও প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ছিলেন। জাসদের পক্ষ থেকে তিনি বাংলাদেশ সংসদে নির্বাচিত সাংসদ ছিলেন। তিন সন্তানের জনক সাদী একজন লেখক ও কন্ঠশিল্পী হিসেবে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করতে পেরেছিলেন। তিনি বাংলাদেশ বেতারের সাথে তালিকাভুক্ত শিল্পী ছিলেন। “বারো ভাজা” নামে তার একটি কবিতা সংগ্রহের বই রয়েছে যা শিশু একাডেমী প্রকাশ করেছিল। শেষ জীবনে তিনি রাজনীতি থেকে একটু দূরে সরে এসেছিলেন একমাত্র বহুমাত্রিক বিভাজনের কারণে তবে “গণতন্ত্র অনুশীলন কেন্দ্র” নামে একটি ছোট পরিসরের রাজনৈতিক চর্চ্চাকেন্দ্র তিনি পরিচালনা করেছেন আমৃত্যু।