মুক্তকথা সংবাদ।। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আইএসআইএস’-এ যোগদানকারিনী শামিমা বেগমের নবজাতক শিশুটি মারা গেছে বলে সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা গেছে। সংবাদ মাধ্যমগুলো লিখেছে, এটি নিশ্চিত খবর নয়। আইএসআইএস এর ওলন্দাজ যোদ্ধার বৃটিশ স্ত্রী শামিমা বেগমের উকীল তাই বলেছেন।
বিশ্ব ধনবাদী ও সম্রাজ্যবাদীদের গড়ে তোলা ‘আইএসআইএস’এর পাতানো মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের সিরিয়া অংশে ‘আইএসআইএস’এর কথিত পরাজয়ের এক পর্যায়ে আইএস বধু নবদশবর্ষী এই শামিমা বেগম, সিরিয়ার একটি স্থানচ্যুতদের আশ্রয়কেন্দ্রে আটকা পড়েন যখন বৃটেন সরকার তার নাগরীকত্ব কেড়ে নেয়।
তার উকীল মোহাম্মদ আকঞ্জী বলেছেন, তিনি জোরদার ইঙ্গিত পেয়েছেন যে তার ছেলেটি মারা গেছে। উকীল তার টুইটারে লিখেছেন এবং অনেকটা আফসোস করে বলেছেন-“সে একজন বৃটিশ নাগরীক ছিল।”
গত ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম দিকে পূর্ণগর্ভ নিয়ে শামিমা বেগম ‘আইএসআইএস’এর সর্বশেষ ঘাঁটি থেকে পালিয়ে উত্তর সিরিয়ার ‘আল-হল’ আইএসআইএস স্থানচ্যুত পরিবারদের আশ্রয়কেন্দ্রে এসে উঠেন। এই কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়ার স্বল্প পরেই তিনি একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। এর আগে আইএস-এর খেলাফতিতে থাকার সময় তার আরো দু’টি সন্তান জন্মের পর এভাবেই মারা যায়। এ মাসের প্রথম দিকে তার আইনজীবী বলেছিলেন, শামিমা বেগম, স্থানীয় অন্যান্য প্রতিবেশিদের হুমকিতে ভীত হয়ে ইরাক সীমান্তবর্তী অন্য একটি আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেছেন। তবে তার মূল অবস্থান তখনও অনেকটা ধূসর ছিল।
আইএস পক্ষ পরিত্যাগকারীদের আশ্রয়দিয়ে তুরস্ক সীমান্তে কুর্দিস্থানের কর্তারা এসব কেন্দ্র পরিচালনা করে আসছিলেন। আইএস খেলাপতির শেষ সময়ে, সময় যত যাচ্ছিল কেন্দ্রগুলো ভরে উঠছিল পক্ষত্যাগকারীদের ভিড়ে।
এখনও প্রায় ৬২,০০০ আশ্রয়প্রার্থী আছে সিরিয়ার ‘আল-হল’ কেন্দ্রে। এখানেই শামিমা বেগন প্রথম এসে উঠেছিল এবং আরো মানুষের সাথে নির্ঘুম শীতের সময় কাটিয়ে আসছে। তখনই কেন্দ্রটির মানুষ থাকার ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছিল।
গত সপ্তাহেই ওই ‘আল-হল’ কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়ার সময় ও পরে ৯০জন মানুষ মারা গেছেন। তাদের তিন ভাগের দুইভাগই ছিল শিশু ও কোলের বাচ্চা।
শামিমার মা-বাবা লন্ডনে বৃটেন সরকারের সাথে যোগাযোগ করে আসছেন তার শিশুপুত্রকে পুনর্বাসিত করার জন্য।
ইতিমধ্যেই শামিমার বোন রেণু, স্বরাষ্ট্র সচিত পাকিস্তানী বংশোদ্ভুত সাজিদ জাভেদকে লিখেছেন যে তাদের পরিবার, শামিমার বৃটিশ নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার সচিবের সিদ্ধান্তকে মোকাবেলার মনোস্ত করেছে। সে লিখেছে- মিস শামিমা বেগম, তার প্রত্যাবর্তন ও নাগরীকত্ব, এসমূহ বিষয়ের সিদ্ধান্ত কেবলমাত্র বৃটিশ আদালতের একতিয়ার।
সে আরো বলেছে, এক খুনি এবং স্ত্রীদ্বেষী পিশাচ বিশ্বাসী মন্ত্রের কারণে তার পরিবার শামিমাকে হারিয়েছিল, যারা শামিমাকে শোষণ করেছে এবং মৌলিকভাবে তার সর্বস্ব নষ্ট করে দিয়েছে। যার ফলে, সে তার “মানচেষ্টার অঙ্গন বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়া যুক্তিসংগত ছিল” জাতীয় সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্য করেছে অসুস্থ মানসিকতা থেকে।
শামিমার বোন আরো লিখেছে-“আমরা খুবই খুশী এই জেনে যে তুমি সংসদে তোমার কথায় স্বীকার করেছো যে শামিমার ছেলে একজন বৃটিশ নাগরীক।”
শামিমার ওই বোন তার চিঠিতে আরো যোগ করে এই বলে যে, “একটি পরিবার হিসেবে আমরা জানতে চাই আমরা তোমাকে(মন্ত্রীকে) কিভাবে সহায়তা করবো আমার শিশু বোনপো’কে আমাদের ঘরে নিয়ে আসতে। সকল নিদারুণ পরাজয়ের মাঝে “ওই শিশুটিই একমাত্র সত্যিকারের নির্দোষ এবং এ দেশের নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে বেড়ে উঠার তার অধিকার সে কোন অবস্থায়ই হারাতে পারে না।”
এখানে উল্লেখ করা ভাল যে, এই শামিমা বেগম তখন মাত্র ১৫ বছরের কিশোরী ছিল যখন সে ও আরো দু’জন কিশোরী ২০১৫সালে ওই সন্ত্রাসী দলের সাথে যোগ দিতে গিয়েছিল। শামিমার এ মামলা একটি বিতর্কের সৃষ্টি করেছে কি নমুনায় বৃটেন তার এই নাগরীকের জন্য কাজ করে যাবে যে কি-না সন্ত্রাসী আইএসআইএস-এ যোগ দিয়েছিল।
এদিকে মন্ত্রী জাবেদ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এই মর্মে যে, আইএসআইএস-এ যোগদানকারী যেকোন বৃটিশ নাগরীককে তিনি বৃটেনে ফেরৎ আসতে আটকাবেন। তার ভাষায়, “আমার কথা পরিষ্কার- যদি বিদেশী সশস্ত্র কোন সংগঠনকে তুমি সমর্থন করে থাকো, আমি বৃটেনে তোমার প্রত্যাবর্ন আটকাতে একটুও ইতস্ততঃ করবো না।
শামিমার বাবা আহমেদ আলী(৬০), শামিমার আইএস-এর সাথে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে এবং সিরিয়ায় যাওয়ার বিষয়ে বৃটেন সরকারকেই দায়ী করেছেন। সূত্র: “ইন্ডিপেন্ডেন্ট” ও অন্যান্য