1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
হাফিজের কাব্য সুধা - মুক্তকথা
বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৩০ অপরাহ্ন

হাফিজের কাব্য সুধা

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : শুক্রবার, ১১ জানুয়ারী, ২০১৯
  • ৪০০১ পড়া হয়েছে

হারুনূর রশীদ।।

খাজা শামস-উদ-দীন মোহাম্মদ হাফিজ ই সিরাজী। কবি হাফিজের বিষয়ে পড়ছিলাম। সে আনুমানিক সাতশত বছর আগের কথা। পারস্যের(বর্তমান ইরাণ) সিরাজ শহরে মহাকবি হাফিজের জন্ম। এতো বড়মাপের কবি সে সময়ের দুনিয়ায় কেউ ছিল কি-না গবেষণার বিষয়। হাফিজের আসল নাম শামসুদ্দিন মোহাম্মদ। “হাফিজ” তাঁর কবিতার ভণিতায় ব্যবহৃত উপনাম। আমরা সবাই জানি, কোরান যারা মুখস্থ করতে পারেন, তাঁদেরকে আরবি ভাষায় “হাফিজ” বলা হয়। তাঁর জীবনী-লেখকগণও বলেছেন, হাফিজ তাঁর পাঠ্যাবস্থায় কোরান মুখস্থ করেছিলেন। অনেকেই ‘হাফেজ’ লিখেছেন। ইংরেজরা হাফিজ লিখতে গিয়ে ‘Hafez’ এভাবে লিখেছে। ফলে উচ্চারণ করতে গিয়ে বাংলায়ও অনেকেই ‘হাফেজ’ লিখেছেন। সিরাজ শহরে জন্ম বলে তার নামের সাথে ‘সিরাজী’ কথাটা যুক্ত।
স্বভাব কবি হাফিজ। হাফিজ সিরাজী, ইরানী কবি যাকে বুলবুল-ই-সিরাজ বলা হয়। সিরাজ ইরানিদের মদিনা, পারস্যের তীর্থভূমি। সিরাজেরই মোসল্লা নামক স্থানে বিশ্বনন্দিত কবি হাফিজ চৌদ্দ’শ শতাব্দীর প্রথম ভাগে জন্মগ্রহণ করেন। ইরানের একমাত্র নিশাপুর(ওমর খৈয়াম-এর জন্মভূমি) ছাড়া আর কোন বসতিই সিরাজের মত দুনিয়াজোড়া খ্যাতি লাভ করেনি। ইরানের প্রায় সমস্ত শ্রেষ্ঠ কবিরই লীলাভূমি এই সিরাজ। ইরানীরা হাফিজকে আদর করে “বুলবুল-ই-সিরাজ” বা সিরাজের বুলবুলি বলে সম্ভাষণ করে। হাফিজকে তারা শুধু কবি বলেই ভালোবাসে না; তারা হাফিজকে “লিসান-উল-গায়েব”(অজ্ঞাতের বাণী), “তর্জমান-উল-আসরার”(রহস্যের মর্মসন্ধানী) বলে আরো বেশী শ্রদ্ধা করে। হাফিজের কবর আজ ইরানের শুধু জ্ঞানী-গুণীজনের শ্রদ্ধার স্থান নয়, সর্বসাধারণের কাছে “দর্গা” বা পীরের মোকাম বা আস্তানা। তাঁর কবিতার অধিকাংশই গজল-গান বলে, সাধারণ মানুষের মুখে মুখে গীত হয়। ধর্মমন্দির থেকে শুরু করে পানশালা, সবখানেই তাঁর গান আদরের সাথে গীত হত এবং এখনও হয়। এখনও গোটা বৃহৎ ভারতে হাফিজের গান গীত হয়ে থাকে।
এই হাফিজ নেশায় বুদ হয়ে থাকতেন বলে তিনি নিজেই তার বহু কবিতায় লিখেছেন। নারী আর সুরা তার জীবনের এক বিশাল অধ্যায়। অসংখ্য অমর কবিতা তিনি রচনা করেছেন নারী আর সুরা নিয়ে। নেশা যেমন তাকে শ্রেষ্ঠ কবি বানিয়েছে ঠিক তেমনি “নেশার ঘোরে”(আমার কথা) লিখা কবিতার শব্দ নিয়ে তাকে জীবনে মহা বিপদেও পড়তে হয়েছিল। হাফিজের কারণে বাংলা-ভারতে সিরাজী বলতে মদকে বুঝানো হয়।

কবি হাফিজ। বাঁয়ে শিল্পীর তুলিতে হাফিজ ও তার সাকি। নিচে মহাকবি হাফিজের সমাধি

হয়তো আমরা অনেকেই জানি যে, হাফিজের কবিতা ও বিশ্ববিজয়ী বীর তুর্কী তৈমুরলং-কে নিয়ে একটি মজার কাহিনী এখনও কবি-সাহিত্যিকের আসরে শুনা যায় । হাফিজের ঐ কবিতার নাম বাংলায় দাড়ায়- “স্বর্গে যা নেই” এর প্রথম দুটি চরণ ততদিনে বিশ্বখ্যাতি পেয়ে গেছে –
“প্রাণ যদি মোর ফিরে দেয় সেই তুর্কী চাওয়ার মনচোরা
একটি কালো তিলের লাগি বিলিয়ে দেব সমরকন্দ ও বোখারা”!
(-প্রয়াত কবি নজরুল ইসলামের অনুবাদ)।
হাফিজের ঐ কবিতার বঙ্গানুবাদ সুভাষ মুখোপাধ্যায় করেছেন এভাবে-
“গালে কালো তিল সেই সুন্দরী,
স্বহস্তে ছুঁলে হৃদয় আমার,
বোখারা তো ছার, সমরখন্দও
খুশি হয়ে তাকে দেব উপহার।”
সেই সময় তৈমুর লং সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল সমরকন্দ। হাফিজ তাঁর প্রিয়ার গালের তিলের জন্য তৈমুরের সাম্রাজ্যের রাজধানী বিলিয়ে দিতে চান শুনে তৈমুর ভীষণ রাগান্বিত হয়ে পারস্য জয়ের সময় হাফিজকে ডেকে পাঠান। উপায়ন্তর না দেখে হাফিজ তৈমুরকে বলেন যে তিনি ভুল শুনেছেন, শেষের চরণের “সমরকন্দ ও বোখারা”র পরিবর্তে “দো মণ কন্দ ও সি খোর্মারা” হবে।  অর্থাৎ “আমি তার গালের তিলের বদলে দু মণ চিনি ও তিন মণ খেজুর দান করব!” অনেকেই বলেন, তিনি নাকি দীর্ঘ কুর্নিশ করে বলেছিলেন, “সম্রাট! আমি আজকাল ভীষণ অমিতব্যয়ী হয়ে পড়েছি!” এই জবাব শুনে তৈমুর আনন্দিত হয়ে শাস্তি দেয়ার বদলে হাফিজকে বহুমূল্য উপহার দিয়েছিলেন।
এই নেশার কারণে, তাঁর মৃত্যু সম্বন্ধে একটি বিস্ময়কর গল্প আছে। পারস্য সাহিত্যের সকল অভিজ্ঞ সমালোচকই এই ঘটনার উল্লেখ করেছেন। হাফিজের মৃত্যুর পর একদল লোক তাঁর ‘জানাজা’ পড়তে ও কবর দিতে অসম্মতি জানায়। হাফিজের ভক্তদলের সাথে এ নিয়ে বিবাদের সৃষ্টি হলে কয়েকজনের মধ্যস্থতায় উভয় দলের মধ্যে এই শর্তে ঠিক হয় যে, হাফিজের সমস্ত কবিতা একত্র করে একজন লোক তার যে কোন স্থান খুলবে; সেই পৃষ্ঠায় প্রথম দুই চরণ কবিতা পড়ে হাফিজের কি ধর্ম ছিল তা ধরে নেয়া হবে। আশ্চর্যের বিষয়, এভাবে নিম্নের দুই চরণ কবিতা পাওয়া গিয়েছিল –
“হাফিজের এই শব হ’তে গো তু’ল নাকো চরণ প্রভু
যদিও সে মগ্ন পাপে বেহেশতে সে যাবে তবু।”
(-নজরুল, রুবাইয়াত ই হাফিজ)
হয়তো তার গুণমুগ্ধরা পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছিল। এর পর উভয়দল মিলে মহাসমারোহে হাফিজকে একটি আঙ্গুরকুঞ্জে সমাহিত করেন। সে স্থান আজও “হাফিজিয়া” নামে খ্যাত। দেশ-বিদেশ হতে লোকজন এসে আজও কবির কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি রেখে যায়।
হাফিজ যৌবনে শারাব-সাকির উপাসক ছিলেন বলে শুনা যায়, তবে পরে যে তিনি সুফী-সাধকরূপে দেশ ও দশের শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন তা প্রত্যেক ইরানীই বিশ্বাস করে।
নিজেরই লিখা, হাফিজের কবর গাত্রে লিখা আছে-
“আমার গোরের পার্শ্ব দিয়া যেতে চেয়ো আশিস তুমি
এ গোর হবে ধর্ম-স্বাধীন নিখিল প্রেমিক তীর্থভূমি।”
সভ্যতার আদি থেকে নেশাপান বা গ্রহন মানুষের নিত্য সঙ্গী হয়ে আছে বিশ্বব্যাপী। কারণ মানুষ তার বিশেষ একটি আনন্দে এগুলোর ব্যবহার করতে ভালবাসে। তাইতো হাফিজ বলেন-
“হাফিজ, থেকো না ব’সে তিলার্ধ
মদ ও বধূর সঙ্গহীন;
চেয়ে দেখ, ফোটে যুঁই ও গোলাপ
এসে গেছে রোজা ভাঙ্গবার দিন।
– সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অনুবাদ
তথ্য সহায়তা-সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের হাফিজের কবিতা,  নজরুল কাব্যে আরবী ফারসী শব্দ অবলম্বনে।

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT