চা-শ্রমিক সংঘের দাবি
এনটিসিসহ সকল বাগানের চা-শ্রমিকদের
অবিলম্বে বকেয়া মজুরি প্রদান করতে হবে
চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভা থেকে সরকারি মালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানীর(এনটিসি) ১২টি চা-বাগানের শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি-রেশন অবিলম্বে পরিশোধ ও পিএফ চাঁদা জমা প্রদানের দাবি জানানো হয়। গত রোববার(১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরস্থ কার্যালয়ে চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভা থেকে এই দাবি জানানো হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, চা-শ্রমিকরা আজ হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছেন অতীতের সরকারগুলোর মতো অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছেও চা-শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকা উপেক্ষিত। শুধু এনটিসির বাগানই নয়, সমগ্র চা-শিল্পের শ্রমিকরা আজ কঠিন সময় পার করছেন। ২০২২ সালে ৩১ ডিসেম্বর চা-শ্রমিকদের মজুরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর প্রায় ২ বছর অতিবাহিত হতে চললেও ২০২৩-২৪ সালের মজুরি নির্ধারণ করা হয়নি। এব্যাপারে অতীতের ন্যায় বর্তমান অন্তবর্তী সরকার নির্বিকার।
বক্তারা আরো বলেন, এনটিসি, দেউন্দি টি কোম্পানী, সিলেট টি কোম্পানীসহ তারাপুর, ফুলতলা, ইমাম-বাওয়ানী, মোমিনছড়া সহ ব্যক্তিমালিকাধীন চা-বাগানের শ্রমিকদের মজুরি ও রেশন ঠিক মত পরিশোধ হচ্ছে না। আবার মাসের পর মাস অনেক বাগানের চা-শ্রমিকদের পিএফ চাঁদাও ফান্ড অফিসে জমা দেওয়া হচ্ছে না। মজুরি পরিশোধের ক্ষেত্রে চা-শ্রমিকরা নানা রকম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। চা-শ্রমিকদের এই সকল বঞ্চনার ব্যাপারে মালিক-সরকার ও দালাল নেতারা নির্বিকার। তাই চা-শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকার এই কঠিন সময়ে অতীতের শিক্ষা নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলে দাবি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রসর হতে শ্রমিকদের আহ্বান জানানো হয়।
সভা থেকে চা-শ্রমিক নেতারা সুস্থভাবে বেঁচে থাকা ও উৎপাদনে সক্রিয় থাকার প্রয়োজনে বর্তমান বাজারদরের সাথে সংগতি রেখে ৬ সদস্যের পরিবারে ভরণ পোষণের খরচ হিসাব করে ২০২৩-২০২৪ মেয়াদের জন্য নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ এবং একটি পরিবারের সাপ্তাহিক প্রয়োজনের অনুপাতে চাল, আটা, ডাল, তেল, চিনি, সাবান, চা-পাতাসহ পূর্ণ রেশন প্রদান, ভূমির অধিকার প্রদান, চা-শিল্পে নৈমিত্তিক ছুটি(বছরে ১০ দিন) কার্যকর ও অর্জিত ছুটি প্রদানে বৈষম্যসহ শ্রম আইনের বৈষম্য নিরসন করে গণতান্ত্রিক শ্রমআইন প্রণয়ন এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মজুরি ও উৎসব বোনাস প্রদানে সকল অনিয়ম বন্ধ করে শ্রমআইন মোতাবেক নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিস বুক প্রদান, বকেয়া মজুরিসহ নিয়মিত সকল চা-বাগানের শ্রমিকদের মজুরি-রেশন পরিশোধ, প্রতি মাসের পিএফ চাঁদা ফান্ড অফিসে জমা প্রদান এবং ৯০ দিন কাজ করলেই সকল শ্রমিককে স্থায়ী করণের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সহ-সভাপতি শ্যামল অলমিকের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস এবং ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হরিনারায়ন হাজরার পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন সুভাষ গৌড়, লক্ষ্মী রানী বাক্তি, কাজল হাজরা, সুনীল শব্দকর, শ্যামল রায়, সত্য নায়েক প্রমূখ।
সভায় বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এনটিসির ১২টি চা বাগানের প্রায় ১২ হাজার শ্রমিকসহ ৪০ হাজার চা-জনগোষ্ঠি গত ২২ আগষ্ট থেকে মজুরি-রেশন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন উর্দ্ধগতির সময়ে দৈনিক মাত্র ১৭৮.৫০ টাকা মজুরিতে এমনিতেই চা-শ্রমিকদের অর্ধাহার-অনাহারে কাটাতে হয়। তার উপর যদি শ্রমিকদের মজুরি ও রেশন বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে শ্রমিকদের কি অবস্থায় পড়তে হয় তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। এনটিসির বাগানের চা-শ্রমিকরা পতিত সরকারসহ অন্তবর্তী সরকারের নিকট মজুরি-রেশন পরিশোধের দাবিতে দীর্ঘদিন আবেদন-নিবেদন করেও কোন প্রতিকার না পেয়ে বাধ্য হয়ে গত ২০ দিন যাবত কর্মবিরতি পালন করছেন। তাতেও সরকারের টনক নড়ছে না।