1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
আদেখা কিশোর কায়রান কাজী - মুক্তকথা
শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৭ অপরাহ্ন

আদেখা কিশোর কায়রান কাজী

বিশেষ প্রতিবেদক॥
  • প্রকাশকাল : বুধবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৯১ পড়া হয়েছে

 

সারা আমেরিকার সর্বকনিষ্ঠ প্রকৌশলী বাংলাদেশের
কাজী কায়রান চৌধুরী

কাহিনী বলতে আমরা যা বুঝি তা হলো অতীত কোন ঘটনা বা জীবন তথ্য যা সত্য হতেও পারে আবার অনেক সন্দেহের অবকাশ থাকে। কিন্তু আজকের এ নিবন্ধটি অবিশ্বাস্য হলেও একেবারেই সূর্য্যের মত সত্য। কিছু কিছু ঘটনা সবসময়ই মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে, মনে অমৃতের আনন্দ ও শান্তির শক্তি যোগায়। “আশ্চর্য শিশু” কিশোর বিজ্ঞানী কায়রানের কাহিনী তেমনই এক অবিশ্বাস্য সত্য কাহিনী।

উইকিপিডিয়া লিপিবদ্ধ করেছে-১২ ডিসেম্বর ২০২৩ সালে মার্কিন মহাকাশ কোম্পানি স্পেসএক্স এর একজন কিশোর সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে।

কাইরান কাজী(জন্ম ২৭ জানুয়ারী ২০০৯) মার্কিন মহাকাশ কোম্পানি স্পেসএক্স এর একজন বাংলাদেশী মার্কিনী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। ১৪ বছর বয়সে, তিনি ২০২৩ সালে সান্তা ক্লারা ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে স্নাতক হন এবং তিনি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বকনিষ্ঠ স্নাতক। একই সাথে, কোম্পানির স্যাটেলাইট ইন্টারনেট দল স্টারলিংক এ সর্বকনিষ্ঠ প্রকৌশলী হওয়ার জন্য তাকে ২০২৩ সালের জুন মাসে স্পেসএক্স দ্বারা নিয়োগ করা হয়েছিল। তার অকাল শিক্ষাগত কৃতিত্বের জন্য, তাকে “আশ্চর্য শিশু” হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।


 

কায়রানের জীবন এবং পরিবার:
কায়রান ক্যালিফোর্নিয়ার প্লেস্যান্টনে বাংলাদেশী বাবা-মা মুস্তাহিদ কাজী এবং জুলিয়া কাজী ওরফে জুলিয়া চৌধুরীর গর্ভজাত সন্তান। তার বাবার বাড়ী বাংলাদেশের মানিকগঞ্জে। ওখানকার এক মুসলিম কাজী পরিবারের মানুষ তার বাবা। দাদা প্রয়াত হালিম কাজী ফরেন সার্ভিস শেষে বুয়েটে অধ্যাপনায় নিয়োজিত ছিলেন। দাদি ছালমা কাজী আদর্শ একজন গৃহিণী। বাংলাদেশে, তার বাবা একজন রাসায়নিক প্রকৌশলী এবং তার মা একজন ওয়াল স্ট্রিট কার্যনির্বাহী ছিলেন।

উইকিপিডিয়া কায়রানের মামা বাড়ী বা নানা বাড়ী নিয়ে কোন তথ্য লিপিবদ্ধ করেনি। সম্ভবতঃ তারা সে সময় সংগ্রহ করতে পারেনি। কায়রানের মা জুলিয়া চৌধুরী মৌলবীবাজারের মেয়ে আর নানা ছিলেন মৌলভীবাজার জেলার বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত এডভোকেট গজনফর আলী চৌধুরী। তার নানি সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য সৈয়দা হাছনা বেগম। কায়রানের বাবা পেশায় প্রকৌশলী আর মা আছেন ইনভেস্ট ব্যাংকিংয়ে।

চিকিত্সকরা ২ বছর বয়সে তার বুদ্ধিবৃত্তিক এবং মানসিক বুদ্ধিমত্তাকে “তালিকার বাইরে” হিসাবে মূল্যায়ন করেছিলেন। তিনি প্রথমে মেনসা ইন্টারন্যাশনাল এ প্রবেশ করেন, যা ছিল উচ্চ আইকিউ সম্পন্ন ব্যক্তিদের একটি কর্মসূচী এবং পরে ডেভিডসন ইনস্টিটিউট ইয়ং স্কলার হন। এরপর তিনি তার বাকি প্রাথমিক শিক্ষার জন্য দ্য কোয়ারি লেন স্কুলে যান। স্কুলে যখন তাকে বলা হয়েছিলো যে তিনি একজন প্রতিভাবান, এমন আলাপের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি তার মায়ের মন্তব্যের উত্তরটি ঘুরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন- “মা বলেছেন যে তিনি বাড়িতে একমাত্র প্রতিভা কারণ তাদের সংসারকে ভেঙে পড়া থেকে রক্ষা করার জন্য একজনের প্রয়োজন!” আর তিনিই সেই মানুষ! “মা আরো বলেছিলেন যে আইকিউ আসে ‘এক্স’ ক্রোমোজোম থেকে।

মেধাবী কায়রাণকে নিয়ে দৈনিক জনকণ্ঠ ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, সালে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সামান্য কিছু শব্দের রদবদল করে এবং কায়রানকে নিয়ে সর্বশেষ তথ্য সংযোজন করে তা এখান দেয়া হলো। জনকণ্ঠের কাছে এজন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি।

নিজের চেয়ে বেমানান আকারের বড় চেয়ারে বসে আছে এক খুদে মানব সন্তান। মুখে শিশুসুলভ সারল্যমাখা হাসি নিয়ে টিভি ক্যামেরার সামনে সাংবাদিকের সব কঠিন প্রশ্নের জবাব দিয়ে যাচ্ছিল খুদে এ কিশোরটি। ভবিষ্যত স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে বলছিল সে হতে চায় ডাক্তার, পুষ্টিবিজ্ঞানী কিংবা হতে পারে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। এ সেই কিশোর যার নাম কাইরান কাজী; তার কথার ভঙ্গিমায় মনে হচ্ছিল তার পক্ষে যেন কোনটাই অসম্ভব নয়। অসাধারণ মেধাবী এই বালক এখন সারা আমেরিকার আগ্রহের কেন্দ্রে। মাত্র নয় বছর বয়সে স্কুলের ফোর্থ গ্রেড থেকে সরাসরি ভর্তি হয়েছে লাস পসিটাস কলেজে। যেখানে তার বিষয় রসায়ন এবং গণিত।


 

গড় আইকিউ ৯৯.৯%
বিস্ময়ের শুরুটা আরও অনেক আগেই। মাত্র ৩ বছর বয়সেই শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকের ভুল শোধরায়। সে বয়সেই সহপাঠীদের ঘাবরে দিতেন সিরিয়ায় বাসার আল-আসাদের রাসায়নিক অস্ত্র সংক্রান্ত জটিল সব বিষয় নিয়ে লেকচার দিয়ে। তার এই দুষ্টুমীর মূল্য তাকে দিতে হয়েছে। তৃতীয় গ্রেডে বিজ্ঞান শিক্ষকের মধ্যাকর্ষণ সম্পর্কিত জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলে রীতিমতো বিপদেই পড়েন। নাম উঠে যায় দুষ্ট ছেলের তালিকায়। সে ঘটনার শেষে তাকে মুখোমুখি হতে হয় উপস্থিত বুদ্ধি পরীক্ষার(আইকিউ টেস্ট)। ফলাফল চমকে দেয় ডাক্তার, শিক্ষক এমনকি তার অভিভাবকদেরও। তার গড় আইকিউ ৯৯.৯%। আবেগজনিত বুদ্ধিমত্তাও যে কারও চেয়ে বেশি। পরীক্ষার  ফলাফলে কায়রান মহা খুশি। তবে তার কারণ কিন্তু ভিন্ন। তার মতে, এই ফলাফল সবাইকে বাধ্য করেছে তা’কে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে।

তার/কাংরানের নাম উঠলো ডেভিডসন ইনস্টিটিউট কিশোর মেধাবীর(ইয়ং স্কলার) তালিকায়। ফলে আমেরিকার নিয়মানুসারে এ ধরনের মেধা লালন পালনের জন্য তার বাবা-মাকে নিতে হয়েছে বিশেষ প্রশিক্ষণ। এত কিছু ঘটনার পরও কায়রানের জীবনচর্চ্চায় কোন পরিবর্তন আসেনি। এখনও সে আগের মতই সমান বিনয়ী। নিজেকে প্রতিভাধর(জিনিয়াস) ব্যক্তি ভাবে কিনা এমন জিজ্ঞাসার উত্তরে সে আগের মতই খুব সহজ করে বলে, ‘বাড়িতে আমাকে শিখিয়েছে জিনিয়াস হলো এমন কেউ যার মেধা মানবতার কাজে লাগে। আমি জানি, আমি ৯ বছরের এমন এক বালক যার বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে দক্ষতা আছে।’ রসিকাতায়ও কম যায় না কায়রান! হাসিমুখে রসিকতা করে এটাও বলে যে, ‘মায়ের দাবি হচ্ছে, আমাদের বাড়িতে তিনিই একমাত্র জিনিয়াস। কারণ তিনিই আমাদের পরিবারকে ধরে রেখেছেন।’


পিচ্চিটা তো দারুণ কিউট আর স্মার্ট
কলেজে ভর্তির ব্যাপারটা কায়রানের জন্য খুব সহজ ছিল না। অনেক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। এখন শিক্ষকরা তাকে নিয়ে সন্তুষ্ট। বয়স যত কমই হোক আর দশজন ছাত্রের মতোই দেখেন তাকে শিক্ষকরা। কায়রান নিজেও মেনে চলে সব নিয়ম। সে খুব ভালই বোঝে যে, তার একার জন্য নিয়মের পরিবর্তন সম্ভব নয়, সেটা ঠিকও হবে না। আর দশজনের মতো বেশি সুবিধাপ্রাপ্তির প্রত্যাশাও নেই তার। অন্যান্য সহপাঠীদের তুলনায় বয়সে ছোট হলেও কায়রান এর মধ্যেই প্রমাণ করেছে যে, সে রীতিমতো তাদের পড়াতে সক্ষম।

তারপরও বয়স নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে তাকে এখনও পাড়ি দিতে হবে অনেকটা পথ। কলেজে প্রথম দিকে তাকে মোকাবেলা করতে হয়েছে অনেক কৌতূহলী চোখের। সহপাঠীরা গোপনে তার ভিডিও করেছে, ছবি তুলেছে। এমনকি সহপাঠীদের ফিসফিস করে এও বলতে শুনেছে, ‘বাহ! পিচ্চিটা তো দারুণ কিউট আর স্মার্ট।’ কায়রান নিজ থেকে এগিয়ে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছে। এমনকি প্রথম দিন কলেজে যাওয়ার আগে শিক্ষকদের ই-মেইলে এমন বার্তাও দিয়েছে যে, শ্রেণীকক্ষে তাকে দেখে তারা যেন বিভ্রান্ত না হন। আর আজ সহপাঠীরা তার কাছে এগিয়ে এসে নানা বিষয়ে পরামর্শ চান।


 

পরীক্ষার আগে মাত্র ১ ঘণ্টায় ১৪টি অধ্যায় শেষ করে নম্বর পেয়েছিলেন শতভাগ
১০ বছরে পা দেয়ার আগেই কলেজ জীবনে প্রবেশ কায়রানের জন্য খুব বড় ব্যাপার নয়। পাঠ্য বিষয়গুলো খুব সহজেই আয়ত্ত করতে পারে সে। তার সমস্যা নিজের হাতের লেখা নিয়ে। নোট গ্রহণের দ্রুতগতির জন্য নিজের লেখা মাঝে মাঝে নিজেই বুঝতে পারে না। তা পাঠ্যোদ্ধার করে তার বাবা-মা তাকে টাইপ করে দিয়ে পড়তে সহায়তা করেন। এমন নয় যে সে সারাক্ষণ পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। রসায়ণের(কেমেস্ট্রি) চূড়ান্ত পরীক্ষার আগে মাত্র ১ ঘণ্টায় ১৪টি অধ্যায় শেষ করে নম্বর পেয়েছিলেন শতভাগ। পড়ালেখার পাশাপাশি ‘ইয়ংওঙ্কস্ কোডিং একাডেমির এ্যাডভান্সড প্যাইতন স্টুডেন্ট’ও সে।


কায়রান বাংলা শিখতে আগ্রহী
কায়রান শিখছে বাংলা এবং ম্যান্ডারিন ভাষা। আশা করছে আগামী ২ বছরের মধ্যে পা রাখবে বিশ্বখ্যাত এমআইটিতে। আগামী গ্রীষ্মে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে ইন্টারনিশিপ করতে যাচ্ছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ টেকনোলজি কোম্পানিতে। এতকিছুর পরও কায়রান কিন্তু সেই সব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কথা বলে, যারা ন্যূনতম সুযোগের অভাবে এগিয়ে যেতে পাড়ছে না। হয়ত একদিন সে তাদের জন্য কিছু করবে।

জানা যায় যুক্তরাষ্ট্রের কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির গড় বয়স ১৭ থেকে ১৯ বছর। খুব মেধাবী হলে ১৫ বা ১৪ বছর তবে এ পরিসংখ্যান খুবই কম। সেখানে কায়রান ক্যালিফোর্নিয়ার লাস পজিটাস কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন মাত্র ৯ বছর বয়সে। আর সেখানে পড়েছেন গণিত ও রসায়ন বিষয়ে। আর স্যান্টা ক্লারা ইউনিভার্সিটি থেকে মাত্র ১৪ বছর বয়সেই সম্পন্ন করেছেন ব্যাচেলর ডিগ্রি। ওই বিশ্ববিদ্যালয়টি তাদের প্রতিষ্ঠার ১৭২ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কেউ কম বয়সে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করলেন।

গত ২০২৩ সালের ১৮ জুন তারিখে স্যান্টা ক্লারা ইউনিভার্সিটি সমাবর্তন অনুষ্ঠানে কায়রান তার গ্রাজুয়েশনের সার্টিফিকেট গ্রহণ করেন একজন প্রযুক্তিবিদ হিসেবে।

 

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT