1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
এই জন জনপদে- মুক্তকথা
বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৩ পূর্বাহ্ন

এই জন জনপদে-

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : সোমবার, ৬ মার্চ, ২০১৭
  • ৩৭৮ পড়া হয়েছে
বাবর রোড

হারুনূর রশীদ।।

“বাঙ্গালী” নামের মিঠাই ঘরের মালিক অধিতি আগরওয়াল

কাল এসেছি আগ্রা। ছোটবেলায় ইতিহাস-ভূগোল পড়তে গিয়ে আগ্রা আর তাজমহলের নাম যে কত পড়েছি, এখন আর তা হিসেব করে বলা সম্ভব নয়। আমার দাদা বোম্বাই দেখেছেন। দিল্লী দেখেননি। দাদা বোম্বের গল্প করতেন আর দিল্লীর জন্য খুব আফসোস করতেন। তার খুব সখ ছিল, জীবনে সম্ভব হলে একবারের জন্য এসে দিল্লী বিশেষ করে তাজমহল দেখে যাবেন। দাদা একবারই কলকাতা এসে জাহাজে যোগ দিয়েছিলেন। জাহাজে কাজ ধরে মিশর অবদি গিয়েছিলেন। এই আসা যাবার পথে আদ্দিস আবাবা, বসরা, মাদ্রাজ, বোম্বে প্রভৃতি নগর বন্দর দেখে দাদার মনে খুব খায়েস জন্মেছিল ঘুরে দেখার। কিন্তু মহাকাল দাদাকে সে সুযোগ দেয়নি। দাদা যেখানেই থাকো, যে ভাবেই থাকো- তোমার অফুরান আশা তোমার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এই উত্তরসূরি যতটুকু সম্ভব পূরণ করে যাবে।

কাল যখন তাজমহল দেখছিলাম, তাজমহলের সেই শ্বেত পাথড়ের প্রতিটি কাজ দেখার মূহুর্তে মূহুর্তে তোমার নাম স্মরণে আসছিল। একা একা খুব কেঁদেছি দাদু। তোমার কাছ থেকেই জীবনের প্রথম তাজমহলের নাম শুনেছিলাম। মা-বাবা-মামারা আর নানীর সাথে তুমিও ছিলে আমার জীবনের পথ নির্দেশক। তোমার অজান্তেই তোমার সুন্দর জীবনকে অনুসরণ করেছি। আজও জীবনের প্রতিটি পরবে তুমিই মনের গভীরে মূর্তীমান হয়ে উঠো। আর কেউ তোমাকে স্মরণে রাখে কি-না জানিনা কিন্তু আমরণ আমি তোমাকে ধারণ করেই চলেছি জীবন পথে। দিল্লীর জামে মসজিদে তোমার জন্য প্রার্থনা করেছি।

আগ্রা আসার দিন সকাল। ঘুম ভাঙ্গতে খুব দেরি হয়ে গেলো। কাল দিনে ঘুরেছি সব কবরস্থান দেখতে। মহাত্মা গান্ধী, জহরলাল নেহরু, রাজিব গান্ধী, ইন্দিরা গান্ধী ও চরণসিং এর সমাধি সৌধ দেখেছি হেটে হেটে। সে অনেক কথা পরে লিখবো। রাত হেলেনাকে(আমার অগোছালো নিরীহ স্ত্রী) নিয়ে পাহাড়গঞ্জের অনেক পুরানো অলি-গলি ঘুরে দেখেছি। খুঁজে বেড়িয়েছি অতীত ইতিহাস। এখানকার প্রায় দোকান-পাটই ছোট ছোট ঘরের সমষ্টি। এতো ছোট দোকান ঘর আমি খুব কম দেখেছি।

দিল্লীর বাঙ্গালী মিষ্টির দোকান মালিক কিন্তু অধিতি আগরওয়াল।

দোকান ভাল, চলছেও ভাল কিন্তু পাশ এতো ছোট যে একজনের বেশী খদ্দের দাড়াতে পারবে না। অথচ এরা চুটিয়ে ব্যবসা করছে। আমার ধারণা, প্রাচীণ মালিকানা, শরিকানদের মাঝে ভাগাভাগিতে খন্ড খন্ড হয়ে বর্তমান রূপ ধারণ করেছে। বেশ কিছু দোকান-পাট দেখে মনে হলো অতি সম্প্রতি তাদের ভাগাভাগি হয়েছে। এখনও উন্নয়ন কাজ চলছে। এসব দেখে দেখে ঘুরতে গিয়ে আর রাতে আমার অনলাইনের লিখা পত্রস্ত করতে গিয়ে ঘুমুতে অনেক দেরি হয়ে যায়। তাই আজ আগ্রা যাবার জন্য ঘুম থেকে দেরিতে উঠি। হোটেলও খাতা-কলমে ‘থ্রিষ্টার’ কিন্তু আসলে ‘টুষ্টার’ মানের। হোটেলের ভেতরের মেটেলের সাজসরঞ্জামে জং ধরেছে। গোসল খানার সাজ-সরঞ্জামে মেরামতের হাত লাগেনি বহু বছর বলেই মনে হল। দরজার হাতল, ছিটকানি আর ‘সাওয়ার’এর উপর জং আর প্লাস্টিকের মগ-বালতি দেখে মনে হয়েছে ওরা আমার দিকে চেয়ে দাঁত বিটলিয়ে হাসছে। মনে হয়েছে যেনো আমাকে বলছে-‘যেমন পয়সা খরচ করেছো তেমন পেয়েছো’। আমার ‘লেপটপ’ নিয়ে বসার কোন চেয়ার পাইনি। খাটের উপর উপোর হয়ে কাজ করতে হয়েছে।
‘লেপটপ’ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে উপোর হয়ে বিছানায় কিছুক্ষণ কাজ করে কোমরে ধরে যায়। উঠেপরি, রাতের ভেতর লেখা শেষ করে অনলাইনে যদি না দেই পড়ে সব ভুলে যাবো। আর দেয়া হবে না। এমনই আমি সারা জীবন ধরে। ‘লেপটপ’ নিয়ে নিচে হোটেলের ‘রিসেপশনে’ গিয়ে বসি। ওখানেও ‘লেপটপ’ নিয়ে বসে কাজ করার কোন টেবিল-চেয়ার নেই। কি আর করি, মাথা ঝুঁকিয়ে সমউচ্চতার চেয়ার-টেবিলে ‘লেপটপ’ নিয়ে বসে পড়ি। আমার সাথে পাশে বসা স্ত্রী হেলেনা বেগম। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কেনো তিনি ঘুমুচ্ছেন না। হেলেনার উত্তর তিনি রাস্তায় গরম জিলেপি ভাঁজতে দেখেছেন। সেই জিলেপি খাবেন। একটু হেসে বললাম- তোমার না ভীষণ ডায়বেটিক! হেলেনাও খিলখিল করে হেসে বললেন, এক টুকরা খেয়ে নিলে এমন কিছু হবেনা। কথায় আছে না-“একেতো নাচিয়ে বুড়ি তার উপর মৃদঙ্গের তালি”। ডায়াবেটিক আমারও। লুকিয়ে লুকিয়ে মিষ্টি খাই। এবার সুযোগ পেলাম। হোটেলের একজনকে জিলেপির জন্য বললাম। মাত্র এক টুকরা জিলেপি খেলাম। লিখার কাজ শেষ করে উপরে উঠে ঘুমুতে গেলাম।

হেলেনার প্রাতঃভোজ

আমার পূর্ব নির্ধারিত ড্রাইভার বিহারের কাইয়ূম মিয়া ভোর ৭টায় এসে হাজির। কাইয়ূম লোকটি খুবই ব্যবসায়ী মনের মানুষ। হোটেলের দরজায় আমার খুঁজ নিতে এসে যখন শুনলো ঘুমুচ্ছি সে আর ডাকা-ডাকিতে না গিয়ে আমাকে ঘুমুতে দেয়। ঘুম থেকে উঠে গোসল সেরে সাড়ে দশটায় রওয়ানা হই আগ্রার পথে। কাইয়ূম মিয়াকে একটি বাঙ্গালী রেস্তোরাঁয় নিয়ে যেতে বলি। কাইয়ূম বললেন-“বাঙ্গালকো খানা মিলেগি মগর পাকানেওয়ালা বাঙ্গাল নেহি মিলেগি”। আমি বুঝলাম,  বাঙ্গালী আদলের রেস্তোরাঁ পাওয়া যাবে তবে মালিক বাঙ্গালী পাবো না। উত্তরে বল্লাম-“ঠিক হ্যায় লে চলো।”
দিল্লীর বাবর রোড। বাঙ্গালী নামের মিষ্টির দোকান কিন্তু মালিক এক মহিলা আগরওয়াল। লুচি আর চানার চটপটি খেয়ে আগরওয়ালের কাছ থেকে কয়েকটি বাঙ্গালী রেস্তোরাঁর ঠিকানা নিয়ে আগ্রার পথে বেরিয়ে পারলাম।

লন্ডন: সোমবার, …ই ফাল্গুন ১৪২৩

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT