মুক্তকথা সংবাদকক্ষ।। ঘোষিত হয়েছে ২০২০ সালের “স্বাধীনতা পদক”এর নাম। এবার সরকার মোট ১০জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে এ পদকে ভূষিত করবেন। ১০জনের এ তালিকায় রয়েছেন বীরমুক্তিযোদ্ধা, মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য আজিজুর রহমান। স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য তিনিও মনোনীত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য ২০২০ সালের মনোনীত ব্যক্তিত্বদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত উক্ত তালিকায় যারা রয়েছেন তারা হলেন- স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের জন্য সাংসদ গোলাম দস্তগীর গাজী, কমাণ্ডার আব্দুর রৌপ(মরণোত্তর), এম ডি আনোয়ার পাশা(মরণোত্তর) এবং আজিজুর রহমান; চিকিৎসা বিজ্ঞানে অবদানের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ ওবায়দুল কবির চৌধুরী ও অধ্যাপক একেএমএ মোক্তাদির; সাহিত্যে এস এম রাইজ উদ্দীন আহমদ; সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য কালিপদ দাস ও ফেরদৌসী মজুমদার এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ভারতেশ্বরী হোম।
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ৯জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে এ পুরষ্কার দেয়া হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৫ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনাতয়নে ২০২০ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার দেবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এটি দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর এ পুরস্কার দিয়ে আসছে। পদক প্রাপ্তগন সকলেই ১৮ ক্যারটের ৫০গ্রাম ওজনের একটি সোনার মেডেল সাথে ৩লাখ টাকা পেয়ে থাকেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭১এর বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে শুধু বাংলাদেশই নয় ভারত ও পাকিস্তানও নিজ নিজ দেশে অনুরূপ পদক দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ বহু বিদেশী নাগরীক ও রাষ্ট্র নায়ককেও এ পদক দিয়ে আসছে।
ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে মরণোত্তর বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা দেয়া হয়।
এ পর্যন্ত বিদেশী রাষ্ট্রনেতা-নেত্রীদের মধ্যে যাদেরকে “বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা” পদক দেয়া হয়েছে তারা হলেন- ভূটানের রাজা জিগমে দর্জি ওয়াংচুক, কিউবার প্রেসিডেন্ট প্রয়াত ফিদেল ক্যাস্ট্র, ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জী; ভারতের প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত আই কে গুজরাল, ভারতের প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত অটল বিহারী বাজপেয়ী, ভারতের প্রেসিডেন্ট রাম বরণ যাদব; নেপাল প্রেসিডেন্ট গিরিজা প্রসাদ কৈরালা, নেপাল প্রধান মন্ত্রী বিশ্বেশ্বর প্রসাদ কৈরালা, প্রাক্তন সোভিয়েট ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট প্রয়াত লিওনিদ লিচ ব্রেজনেভ; প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নিকোলাই ভিক্টোরোভিচ পদগর্নি, প্রাক্তন সোভিয়েত চেয়ারম্যান প্রয়াত আলেক্সি কোসিগিন, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত এডওয়ার্ড রিচার্ড জর্জ হীথ ও প্রাক্তন যোগস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট জোসেফ ব্রুজ টিটো(মার্শাল টিটো)।
আজিজুর রহমান |
মৌলভীবাজার জেলা সদরের গুজারাই গ্রামে ১৯৪৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ বীরমুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমানের জন্ম। পিতা প্রয়াত আব্দুল সত্তার, মাতা মরহুম কাঞ্চন বিবি। তার শিক্ষাজীবনের শুরু মৌলভীবাজার শহরের শ্রীনাথ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় হতে মাধ্যমিক ও মৌলভীবাজার সরকারী কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি হবিগঞ্জের বিখ্যাত বৃন্দাবন কলেজ থেকে ব্যবসায়ে স্নাতক অর্জন করেন।
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ২৬ মার্চ, ১৯৭১ পাক হানাদার বাহিনী তাকে বাড়ী থেকে তুলে নিয়ে যায়। ৭ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে সিলেট জেলের সকল কয়েদীরা জেল ভেঙ্গে বেরিয়ে আসলে মুক্তিবাহিনী তাকে সিলেট কারাগার থেকে মুক্ত করে এবং তিনি মৌলভীবাজারে বাড়ীতে ফিরে আসেন। ২ মে, ১৯৭১ তিনি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে প্রবেশ করে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে আত্মনিয়োগ করেন।
তার কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্যে জানা যায়, তিনি ভারতে প্রবেশের এক পর্যায়ে মুজিবনগর সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আহুত পশ্চিমবঙ্গের বাগডুগায়(দার্জিলিং) প্রথম পার্লামেন্ট অধিবেশনে যোগদান করেন। প্রবাসী সরকার কর্তৃক আয়োজিত সামরিক প্রশিক্ষণে সিলেট বিভাগের একমাত্র প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য হিসেবে তিনি সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ৪ নং সেক্টরের রাজনৈতিক কো-অর্ডিনেটর ও কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সক্রিয় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এবং গণপরিষদ সদস্য হিসেবে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর শমসেরনগর, ৬ ডিসেম্বর রাজনগর এবং ৮ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে মৌলভীবাজারকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করেন।
গণপরিষদের এই সদস্য স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য রচিত সংবিধানের একজন স্বাক্ষরকারী। তিনি ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হোন। ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় সংবিধানের একাদশ ও দ্বাদশ সংশোধনীতে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, মৌলভীবাজার জেলা শাখার দুই বারের সাধারণ সম্পাদক ও দুই বার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও পরবর্তীতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি মৌলভীবাজার জেলায় ১৪ দল ও মহাজোটের সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত।
বিবাহিত জীবনের বাইরে থাকা এই রাজনীতিক মৌলভীবাজার মহিলা কলেজ(বর্তমানে সরকারী) ও সৈয়দ শাহমোস্তফা কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হিসেবে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখেন। তিনি মৌলভীবাজার জেলার অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠক। সামাজিক কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, মৌলভীবাজার শাখার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।
২০ ডিসেম্বর, ২০১১ স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রজ্ঞাপনমূলে তিনি জেলা পরিষদ মৌলভীবাজারে প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬ বাংলাদেশে প্রথমবার অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দায়িত্বরত আছেন।