হারুনূর রশীদ।। এ কেমন মানুষ আমরা। দূর্ণীতি থেকে সরে আসতে পারছিনা। দূর্ণীতি নেই পৃথিবীতে তা বলা যাবে না। আছে। কিন্তু সে কি আমাদের মত? আমার মনে হয় না। দুনিয়ার সকল মানব সমাজ, এ দুনিয়ার কেউই দেখেননি। দেখা কোনদিন সম্ভব হবে কি-না জানিনা। তবে এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে কেউই বলতে পারবেন না যে সারা দুনিয়ার সকল মানব সমাজ তিনি দেখেছেন। বাস্তব চক্ষে এই দেখা না হলেও অত্যাধুনিক এই দূরনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের বৈজ্ঞানিক সামাজিক মাধ্যমের যুগে দুনিয়ার কোন সমাজে কি হচ্ছে আমরা ঘরে বসেই জানার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। গহীন আমাজনের জঙ্গলেও কি হচ্ছে সে খবরও আমরা বিজ্ঞানের কল্যাণে জানতে পারছি। সেই জানা থেকে এ অবদি, আমাদের মত দূর্ণীতির নিন্দিত মানব সমাজ, একমাত্র ভারত-পাকিস্তান ছাড়া আর কোন দেশ বা সমাজে অবস্থানের তথ্য আমার জানা-শুনায় পড়েনি। সেই ১৯৫৭ সালের পাকিস্তানী আমল থেকে শুরু করে অদ্যাবদি ষাট বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে এ দূর্ণীতির খবর দেখে ও পড়ে আসছি। তখন থেকেই শুরু করে আজ অবদি দূর্ণীতি কমেনি বরং বেড়েছে। এটি একদিকে যেমন উপহাসের বিষয় অন্যদিকে জাতিগতভাবে একটি চরম লজ্জ্বার বিষয়ও বটে। আর এ লজ্জ্বার কথা কে না বুঝেন! আমার এক সুপরিচিত ছোট ভাই সরকার জবলু তার ফেইচবুকে চাঁদাবাজী নামক দূর্ণীতির চমৎকার এক ছোট্ট কাহিনী তুলে ধরেছেন। জবলু সাংবাদিকতায় খুবই উৎসাহী এবং জেলা সদরের একজন সাংবাদিক। আমাদের জলপথে কোন চাঁদাবাজী হয় কি-না তা স্বচক্ষে দেখার প্রবল ইচ্ছায় এক বন্ধুর সহায়তা নিয়ে কার্গো জাহাজে চড়ে বসেন। বালি বোঝাই কার্গো। যাবে সুনামগঞ্জ থেকে মাদারীপুর। বন্ধুর কার্গোতে ব্যবসার শরিক সেজে বসে বসে দেখলেন পুলিশ ও অপুলিশ চাঁদাবাজদের চাঁদা সংগ্রহের বে-শরম নমুনা। তিনি তার ভাষায় বেশ সরসভাবেই লিখেছেন। তার ওই কাহিনী পড়ে আমারও মনে পড়লো অনেক পুরনো এক বৈঠকের কথা। সে অনেক দিন আগের কথা। নাম না বলাই ভাল। আমাদেরই এক শ্রদ্ধেয় রাজনৈতিক নেতা এক ঘরোয়া বৈঠকে এই দূর্ণীতি বিষয়ে আলাপ করতে গিয়ে হেসে হেসে বলেছিলেন, জানো এখন দূর্ণীতি কারা করে। খুবই উগ্রীব হয়ে আমরা কয়েকজন জানতে চেয়েছিলান, কারা? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, দুই ধরনের মানুষ এই দুর্ণীতির সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয়ভাবেই জড়িত থাকে। প্রথমতঃ যারা ছিন্নমূল। তারা তাদের জীবন রক্ষার তাগিদে এবং যাদের আশ্রয়ে বেড়ে উঠেছে তাদের হুকুমে বিভিন্ন কাজে শরিক হয়, এসব কাজের কোনটা দূর্ণীতি আর কোনটা সুনীতি তারা নিজেরাই জানেনা। জানার সুযোগ তাদের জীবনে ঘটেনি। জীবনের তাগিদে তাদের করতেই হয়। আর এক শ্রেণীর মানুষ যাদের খারাপ কাজের জন্য বকুনি দেয়ার কেউ নেই, এরা বড় হয়েছে এমন এক পরিবেশে যে পরিবেশ তাদের শেখায়নি ভাল-মন্দ বিষয়, জেন-তেন প্রকারে শুধু উপরে উঠাই শিখিয়েছে, তারা করে। এদের না আছে নিজস্ব কোন সংস্কৃতি না আছে ভাল মন্দের বোধ। যেহেতু তাদের নিজস্ব কোন সংস্কৃতি নেই তাই এরা অতি সহজেই ভিন্ন ধর্ম বা সংস্কৃতিকে গ্রহন করতে পারে। এই গ্রহন বর্জনে তাদের কোন বোধই কাজ করেনা। এরা শুধু বুঝে, তাদের নিজেদের প্রয়োজনে কাউকে যদি মেরে ফেলতে হয় তাও করা যায়। পাপপূণ্য কিংবা অপরাধবোধ এদের আসলেই নেই। এ ধরনের মানুষ কোন একটি জনগোষ্ঠীতে উপরেও আছে তলায়ও আছে। এদের হাত থেকে সমাজ, দেশ তথা সাধারণ ব্যাপক জনগোষ্ঠিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে দু’টি রাস্তাই আছে যা দুনিয়ার বিভিন্ন মানব সমাজে ক্রিয়াশীল। আর সে দু’টি পথ হলো- একটি সংস্কারমূলক পথ আর অপরটি বৈপ্লবিক পথ। এর মাঝামাঝি আর কোন রাস্তা নেই। কোন দেশ বা সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হলে এ দু’টোর একটিকে গ্রহন করতেই হবে। কিশোর বয়সের সেদিন তার কথা খুব একটা গুরুত্বদিয়ে বুঝার চেষ্টা করিনি। আজকের এ দূর্ণীতিপ্রবণ সময়ে কেনো জানি খুব মনে পড়ছে তার সেই কথা।