নতুনত্ব বটে! ইতিপূর্বে এমন ঘটনা অন্ততঃ মৌলভীবাজারে শুনা যায়নি। অবশ্য এমন সহমর্মিতা মানব প্রেমেরই পরিচায়ক নিঃসন্দেহে। কারো অশুভ সময়ে সামান্য কিছু কথা দিয়ে কিংবা অতি সামান্য কিছু উপহার সামগ্রী পাঠিয়ে পাশে দাঁড়ানো আমরাতো ভুলে যেতেই বসেছি। মানবতাবোধকে সকলের মাঝে জাগিয়ে তুলেছে
সাংবাদিক কাঁকনের সে অসামান্য ভালবাসার উপহার।
এ. এস. কাঁকন মৌলভীবাজার জেলা শহরের একমাত্র মহিলা সাংবাদিক। স্থানীয় প্রেসক্লাবের তিনি ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদিকা। অতি সম্প্রতি মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকসহ তাদের গোটা পরিবার করোণা আক্রান্ত হলে সংবেদনশীল এই সাংবাদিক মমতামাখানো একখানা ছোট্ট চিরকুট লিখে কিছু ফল উপহার হিসেবে নিজে গিয়ে পৌঁছে দেন। তার সেই চিরকুটটি যেমন আবেদনময়ী একখানা ভালবাসার পত্র তেমনি মানুষের অসময়ে মানবিক আচরণের এক দূর্লভ উদাহরণ!
নিচের এই বার্তা লিখে করোনা ভাইরাসে সপরিবারে আক্রান্ত মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান এর বাসভবনে ফল উপহার নিজে গিয়ে পৌঁছে দেন। এ.এস.কাঁকন, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র সিলেট শাখার সদস্য সচিব একই সময় তিনি মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক। শহরে বেশ আলোচনা সৃষ্টিকারী তার সেই চিরকুটখানি নিচে হুবহু তুলে দেয়া হলো।
“আমি জেনে অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছি যে, দুর্ভাগ্যক্রমে আপনি সপরিবারে কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন আছেন। আমি প্রত্যাশা করছি যে, আপনি এবং আপনার পরিবার দ্রুত পুরোপুরি সুস্থ হয়ে নিজের কর্মস্থলে ফিরবেন এবং সেই সঙ্গে আগামী দিনগুলোতে করোনাভাইরাস ও এ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বলিষ্ঠ ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে স্বকর্মে ফিরে আসতে সক্ষম হবেন এবং সরকারের পক্ষে জেলায় নেতৃত্ব দেবেন।
এই অনাকাঙ্কিত দুঃসময়ে আমার সহমর্মিতা আপনার ও আপনার পরিবারের সঙ্গে রয়েছে। আমি আপনার ও আপনার পরিবারের দ্রুত সুস্থতা, শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্যে দোয়া করছি!”
বুধবার(৭ জুলাই) বিকেলে সম্পূর্ন সামাজিক দূরত্ব মেনে জেলা প্রশাসকের বাসভবনে তিনি ফলগুলো পৌছে দেন। গত ৫ জুলাই সোমবার এন্টিজেন টেস্টে জেলা প্রশাসক, তাঁর স্ত্রী ও তাদের দুই সন্তানের রিপোর্ট করোনা পজেটিভ আসে। এরপর থেকে তিনি ও তার পরিবার হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন আছেন। এ অবস্থায় মনস্তাত্বিকভাবে দূর্বল না হওয়া ও মানসিকভাবে শক্ত থাকার সাহস যোগাতে সাংবাদিক কাঁকন জেলা প্রশাসককে উপহার সরুপ এই ভিন্ন জাতের ফল পাঠান। তিনি বলেন, সব সময় জেলা প্রশাসক নিজ উদ্যোগে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির মনে সাহস যোগাতে তাদের বাড়িতে ফল পাঠিয়ে খোজ-খবর নেন, সবাইকে সাহস যোগানো সেই মানুষটি আজ যখন স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে মাঠে কাজ করতে গিয়ে সপরিবারে আক্রান্ত তখন তাদের এই দুঃসময়ে তাদের পাশে থেকে আমি জেলা প্রশাসক মহোদয় ও তার পরিবারের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। ইনশাআল্লাহ করোনাকে জয় করে তিনি খুব দ্রুত আমাদের মধ্যে তার কর্মস্থলে ফিরবেন।
এসময় জেলাবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, এ মহামারী করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে ঘরে থাকার কোন বিকল্প নেই, আপনারা ঘরে থাকুন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, অহেতুক জনসমাগমে চলা ফেরা করবেন না, ১৪ দিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে থাকলে করোনা ভাইরাস সংক্রমন থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া যায়। |