লন্ডন: একটি সংবাদ। লিখেছেন জয়ন্ত সেন। মালদহ থেকে আনন্দবাজারে। সংবাদের লেখনি মন ছুঁয়ে যায়। তন্ময় হয়ে পড়ার ইচ্ছে হয়। তিনি লিখেছেন- ধর্মের বেড়া ভেঙে নজির গড়েছিল শেখপুরা। আরও এক বার সেই পথে হাঁটার প্রস্তুতি নিচ্ছে মানিকচকের এই প্রত্যন্ত গ্রাম। গ্রামের একমাত্র হিন্দু পরিবারের যুবক সদস্যের চিকিৎসা, মৃত্যুর পরে সৎকারের জন্য এগিয়ে এসেছিলেন যাঁরা, গ্রামের সেই মুসলিম বাসিন্দারাই এ বার এগিয়ে এলেন বিশ্বজিৎ রজকের পারিবারিক রীতি রক্ষা করতে নাম সংকীর্তনের আয়োজনেও।
মৃত্যুর ১৩ দিনে শ্রাদ্ধের নিয়ম রয়েছে রজক পরিবারে। আর শ্রাদ্ধের তিন দিন আগে থেকে বাড়িতে নাম সংকীর্তনের রীতি। কিন্তু সেই আয়োজনের সামর্থ্য নেই কার্যত কপর্দকশূন্য পরিবারের। তাই চাঁদা তুলে কীর্তনের দল ঠিক করে তিন দিনের সেই নাম সংকীর্তনের ব্যবস্থাও করছেন মুসলিম প্রতিবেশীরা।
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য মহম্মদ ইয়াসিন বলেন, “তিন দিনের কীর্তনের খরচ রজক পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। তাই আমরা প্রতিবেশী সমস্ত মুসলিম পরিবার সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি কীর্তন তিন দিনই হবে এবং সমস্ত খরচ আমরা দেব। মানিকচকের একটি কীর্তন দল বৃহস্পতিবার থেকে কীর্তন করবে।”
বছর দুয়েক আগে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন বছর তেত্রিশের বিশ্বজিৎ। তাঁর আয়েই চলত বৃদ্ধ বাবা মা, স্ত্রী ও তিন শিশু কন্যাকে নিয়ে সাত জনের সংসার। বিশ্বজিৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় কার্যত পথে বসে গোটা পরিবার। বিশ্বজিতের দাদা পরিবার নিয়ে পাশে থাকলেও তাঁর অর্থনৈতিক অবস্থাও তথৈবচ। চাঁদা তুলে তখন তাঁর মুসলিম প্রতিবেশীরাই বিশ্বজিৎকে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় পাঠান। এসএসকেএম হাসপাতালে কিছু দিন চিকিৎসাও হয় তাঁর। কিন্ত এখানকার চিকিৎসকরা তাকে মুম্বই নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলে তা আর সম্ভব হয়নি প্রতিবেশীদের পক্ষে। তাই বিশ্বজিৎকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। গত সোমবার রাতে মৃত্যু হয় তাঁর।
শোক ছাপিয়ে তখন বিশ্বজিতের পরিবারকে গ্রাস করে চিন্তা। কী ভাবে দাহ হবে? কারণ হাতে যে কানাকড়িও নেই। রজক পরিবারের পাশে আবারও দাঁড়ান সেই মুসলিম প্রতিবেশীরাই। অন্তেষ্টির জন্য এগিয়ে আসেন হাজি মকলেসুদ্দিন, হাজি মালেক, শেখ কায়সুল, আবুল কালামরা। চাঁদা তুলে সমস্ত জোগাড় করে প্রায় ৬ কিলোমিটার হেঁটে গঙ্গার ধারে শ্মশানে নিয়ে যান তাঁরা। দাঁড়িয়ে থেকে প্রথা মেনে অন্ত্যেষ্টিও করেন। মুখাগ্নি করে বিশ্বজিতের দাদার ছেলে।
শুক্রবার রজক বাড়িতে যান মালদহ জেলা পরিষদের সহকারি সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল। বিশ্বজিতের শ্রাদ্ধের জন্য ব্যক্তিগতভাবে পাঁচ হাজার টাকা তিনি তুলে দেন পরিবারের হাতে। তাঁর তিন সন্তানের পড়াশোনার যাবতীয় দায়িত্ব নেবেন বলে জানান। তিনি বলেন,”জাতীয় পারিবারিক সহায়তা প্রকল্পে বিশ্বজিতের স্ত্রী সরমাদেবী যাতে ৪০ হাজার টাকা হাতে পান তার জন্যেও উদ্যোগ নেব।”