-কৃষিমন্ত্রী
চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ কোটি ২২ লক্ষ মেট্রিক টন
দেশে এবার ২ কোটি ২২ লক্ষ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার৷ সোমবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের উত্তরসুর এলাকার হাইল হাওরে আয়োজিত বোরো ধান কর্তণ উৎসবে এ কথা জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুস শহীদ এমপি৷
বোরো ধান কর্তণ উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের উৎপাদিত চালের চাহিদার অর্ধেকেরও বেশী জোগান দেয় বোরো ধান৷ বোরো ধানের আবাদ বাড়াতে সরকার কৃষকদের ২১৫ কোটি টাকারও বেশী প্রণোদনা দিয়েছে৷ এবার ২ কোটি ২২ লক্ষ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে৷ হাওরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে রোপণ করা ধানগুলো সঠিকভাবে ঘরে তুলতে পারলে আমাদের চালের আর ঘাটতি থাকবে না৷
তিনি বলেন, হাওর অধ্যুষিত সাতটি উপজেলায় ৪ লাখ ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে৷ ইতিমধ্যে গড়ে প্রায় ২০ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গিয়েছে৷ আমরা কোন হাওরেই জমি খালি না রাখার চেষ্টা করছি৷ তাই শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরেও আমরা কোন জমি খালি রাখবো না যাতে বোরো চাষ করে আমরা যেন আরও বেশী চাল উৎপাদন করতে পারি৷ বাংলাদেশের ধান গবেষণা কেন্দ্র উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল জাতের ধান চাষ করে কৃষকরা অভূতপূর্ব ফলন পেয়েছেন৷ এ জাত ধানের বিঘাপ্রতি ফলন হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ মণ৷ প্রতি শতক জমিতে ১ মণ ফলন পেয়েছেন কৃষকরা৷ এই উচ্চপলনশীল ধানগুলো চাষ করে আমরা যেন এগুলো বিদেশে রপ্তানী করতে পারি সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে৷ কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বিদেশেও রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে৷
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর আয়োজনে ও উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, শ্রীমঙ্গল এর সহযোগিতায় আয়োজিত ধান কর্তণ উৎসবের সভাপতিত্ব করেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য জিল্লুর রহমান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক(গ্রেড-১) ড. মো: শাহজাহান কবীর, কৃষি মন্ত্রনালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহ্ মো: হেলাল উদ্দিন, খামারবাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইং এর পরিচালক মো: তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী, মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার মো: মনজুর রহমান, বিপিএম, পিপিএম (বার), ঢাকা খামারবাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক ড. সুরজিত সাহা রায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ভানুলাল রায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো: মতিউজ্জামান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আবু তালেব।
‘লোকজ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালনের লক্ষ্যে’ অনুশীলন চক্র শ্রীমঙ্গল আয়োজন করেছে “বাংলা নববর্ষ বরণ ও বৈশাখী উৎসব ১৪৩১ বঙ্গাব্দ”। ‘গৌরব ও ঐতিহ্যির’ ধারায় এবার তাদের ছিল ‘তিন যুগ পূর্তি উৎসব’।
ব্যাপক আয়োজনের মাধ্যমে বাংলা নতুন বছর ১৪৩১ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিল ঐতিহ্যবাহী সংগঠন অনুশীলন চক্র। এবারের আয়োজন ছিল ৫ দিন ব্যাপী। কোভিড মহামারী এবং রমজানের কারণে পরপর চার বছর স্থগিত ছিল অনুশীলন চক্রের আয়োজন।
বাংলা আর বাঙালির প্রাণের এই সার্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ বরণে বরাবরের ন্যায় এবারও উৎসব প্রাঙ্গণের মুক্তমঞ্চে উদীচী শ্রীমঙ্গলের বর্ষ আবাহনের মধ্য দিয়ে বরণ করা হয় ১৪৩১ বঙ্গাব্দকে। এরপর অনুষ্ঠিত মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষে পাঁচ দিনব্যাপী বৈশাখী উৎসবের শুভ উদ্বোধন করেন গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি। এবারের উদযাপন পরিষদের আহ্বায়কের দ্বায়িত্বে ছিলেন অনুশীলন চক্রের সভাপতি দ্বীপেন্দ্র ভট্টাচার্য এবং সদস্য সচিবের দ্বায়িত্বে ছিলেন অনুশীলন চক্রের সাধারণ সম্পাদক মোঃ কাওছার ইকবাল। উৎসবের শেষ দিন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবু তালেব উপস্থিত থেকে সাহিত্য-সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।
উৎসবে প্রতিদিন সকাল ১১ টা থেকে শুরু হয় শিশু-কিশোরদের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। ছিল যেমন খুশী তেমন সাজো, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, দেশাত্মবোধক গান, রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল সংগীত, লোকসংগীত, কবিতা আবৃত্তি, একক অভিনয়, সাধারণ নৃত্য, লোকনৃত্য, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ, কুইজ প্রতিযোগিতা, স্বরচিত কবিতা পাঠ, সংবাদ পাঠ ইত্যাদি।
এছাড়াও শ্রীমঙ্গলের ৩০টি সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তমঞ্চে তাদের অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। পাঁচ দিনব্যাপী এই উৎসবে পরিবেশিত হয়েছে নৃত্য, আবৃত্তি, ধামাইল নাচ, বাউলগান, জারিগান, কবিগান ইত্যাদি।