মৌলভীবাজারে তৃণমূল পর্যায়ে সরকারি সেবার মানোন্নয়নে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রকল্প’-এর আওতায় রোববার জেলার জাতীয় মহিলা সংস্থার কার্যালয়ে এ গণশুনানির আয়োজন করে জেলা এডভোকেসি নেটওয়ার্ক কমিটি।
ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের আর্থিক ও ক্রিশ্চিয়ান এইড’র কারিগরি সহযোগিতায় গণশুনানি অনুষ্ঠান সফল করতে এডভোকেসি নেটওয়ার্ক কমিটিকে সহায়তা প্রদান করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়েভ ফাউন্ডেশন। জেলা এডভোকেসি নেটওয়ার্ক কমিটির চেয়ারপার্সন মইনুল ইসলাম শামীম এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রিংকু চক্রবর্তীর সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক হাবিবুর রহমান। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শাহেদা আক্তার, কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিলকিস বেগম, সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউপি চেয়ারম্যান আখতার উদ্দিন প্রমুখ।
গভার শুরুতে প্রকল্প সম্পর্কে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সিলেট ডিভিশনাল ফ্যাসিলেটেটর শাহজাহান মিয়া। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ‘কাউকে বাদ দিয়ে নয়’-এর সিলেট ডিভিশনাল কোয়ালিশন কমিটির সভাপতি জালাল উদ্দিন রুমি। সামাজিক নিরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে চিহ্নিত সমস্যার আলোকে অনুষ্ঠানে সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন করেন অংশগ্রহণকারীরা। পরে সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ প্রশ্নের উত্তর প্রদানসহ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলার ৭টি উপজেলা এডভোকেসি নেটওয়ার্ক কমিটির নেতৃবৃন্দ ও প্রকল্পের উপকারভোগী দলিত, প্রতিবন্ধী, হিজরা ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধিবৃন্দ।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ বাজারে তিন মাস পূর্বে গভীর নলকূপ বসানোর সময় তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে গত রোববার (২৪ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের নারায়নপুর গ্রামে ভানুগাছ বাজারের দুই ব্যবসায়ীর উপর হামলা চালায় তিন দুর্বৃত্ত। এসময় ব্যবসায়ীদের চিৎকারে আশপাশের বিপুল সংখ্যক লোক জড়ো হয়ে তিনজনকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। গনপিটুনিতে একজন গুরুতর আহত হয়।
আটককৃতরা হলেন- হবিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার গদাইনগর গ্রামের সৈয়দ আলীর ছেলে মো. লিটন (২৪), আব্দুল ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে রুবেল মিয়া(৩০) ও রিচি গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে সোহাগ মিয়া(২৩)।
স্থানীয়রা কমলগঞ্জ থানা পুলিশকে জানালে তারা দ্রুত ঘটনাস্থল পৌঁছে উত্তেজিত জনতার হাত থেকে তাদের উদ্ধার করে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এদের মধ্যে লিটন ও সোহাগকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয় এবং রুবেলের আঘাত গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
কমলগঞ্জ থানা পুলিশ সুত্রে জানা যায়, তিন মাস পূর্বে ভানুগাছ বাজারের ব্যবসায়ী কেশব কান্তি পালের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গভীর নলকূপ বসানোর কাজে আসামীরা শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো। এসময় তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে গ্রেফতারকৃত লিটনের সাথে কেশব কান্তি পালের সাথে তর্কবিতর্ক হয়। পরে এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে লিটনসহ গ্রেফতারকৃতরা কেশব পালের উপর হামলার পরিকল্পনা করে। গত রোববার রাতে ব্যবসার কাজ শেষ করে কেশব কান্তি পাল এবং ভানুগাছ বাজারের অপর ব্যবসায়ী অনন্ত দাস কাছাকাছি সময়ে নিজ নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথিমধ্যে ঘটনাস্থল নারায়নপুর গ্রামের জহুর মিয়ার বাড়ির সামনে পৌছালে আসামীরা পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কেশব কান্তি পাল মনে করে রাতের অন্ধকারে অনন্ত দাস এবং তার সাথে থাকা তপন দাসের উপর মরিচের গুঁড়া নিক্ষেপ করে এবং লোহার রড দিয়ে হামলা করে।
এই ঘটনায় অনন্ত দাস বাদী হয়ে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে কমলগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করলে গ্রেফতারকৃত লিটন ও সোহাগকে মৌলভীবাজার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। অপর আসামী রুবেল পুলিশ প্রহরায় মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল আলম জানান, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ভানুগাছ বাজারের দুই ব্যবসায়ীর উপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামী লিটন ও সোহাগকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে এবং অপর আসামী রুবেল মৌলভীবাজারে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ বড়দিন’ পালনে প্রস্তুত গির্জাগুলোও। গোশালা, ‘ক্রিসমাস ট্রি’, যজ্ঞবেদি সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। শিশুদের জন্য নানা উপহার নিয়ে অপেক্ষায় সান্তা ক্লজ। কমলগঞ্জ উপজেলার ৪৪টি গির্জায় চলছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসবের আয়োজন। ঘরে ঘরে চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। বড়দিন উৎসবটি পালন করতে গীর্জাগুলোতে সাজ সাজ রব বিরাজ করছে।
কমলগঞ্জের সব গির্জায় নানা আলোয় সাজানো হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি। গির্জাগুলোতে রকমারি ফুলে সাজানো হচ্ছে যজ্ঞবেদি। যেখান থেকে প্রার্থনা অনুষ্ঠান পরিচালনা করা হবে। গির্জায় অপেক্ষায় আছেন সান্তা ক্লজ। শিশুদের জন্য চকলেটসহ নানা উপহার সামগ্রী নিয়ে প্রস্তুত তিনি।
রোববার(২৪ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বিভিন্ন গির্জায় গিয়ে দেখা গেছে, বড়দিনকে সামনে রেখে গির্জাগুলোতে চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। আলপনা একে নতুন করে রং করা, ধোয়ামোছার কাজের পাশাপাশি জীবানুনাশক স্প্রে ছিটাতে দেখা গেছে। এছাড়াও বিভিন্ন খাসিয়া পুঞ্জি, চা বাগানের গারো লাইন এলাকায় গীর্জাগুলো সাজাতে মেয়েরা আল্পনা একে সৌন্দর্য্য বাড়ানোর কাজ করে চলেছে।
কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জি প্রেসবিটারিয়ান চার্চের সদস্য শাকিল পামথেত বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও আমরা জাঁকজমকভাবে বড়দিন উৎসব পালন করতে সবধরনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। রোববার রাত ১২.০১টায় গির্জায় সমবেত প্রার্থনার মধ্যদিয়ে বড়দিনকে বরনের আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে।’
সিলেট প্রেসবিটারিয়ান সিনডের সহ-সাধারণ সম্পাদক ফিলা পতমী বলেন, সব গির্জায় বড়দিনের বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। তিনি বলেন সাধারণত ডিসেম্বর মাসের ১তারিখ থেকে বড়দিনের আগেরদিন পর্যন্ত প্রতিটি গির্জা মণ্ডলীগুলোর আয়োজনে ঘরে ঘরে কীর্তন-প্রার্থনা সভার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।
কমলগঞ্জের থানা ও পুলিশও বড়দিন উপলক্ষে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। প্রত্যেকটি চার্চের নিরাপত্তায় পোশাকে ও সাদা পোশাকে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য থাকবে। কোনো সমস্যা হবে না। তাছাড়া বড়দিন অনুষ্টান আয়োজনের সাথে যারা জড়িত আছেন তাদের সবার সাথে পুলিশের নিয়মিত যোগাযোগ আছে বলে থানা পুলিশ জানায়। যে কোনো ঘটনা জানালে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানায় পুলিশ।