মৌলভীবাজার প্রতিনিধি॥ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কোরবানপুর গ্রামে ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে গ্রাম্য সালিশ না মানায় ৩ পরিবারকে ৫ বছরের সমাজচ্যুত করার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার দুপুরে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ভূক্তভোগী কাজল আহমদ ও তার পরিবারের সদস্যরা।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, জায়গা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তার দাদার ভাই তোরাব আলীর নাতী পাখি মিয়ার সাথে বিরোধ চলছিল। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সালিশকারী ও পঞ্চায়েত কমিটিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কাছে গেলে তারা উভয়পক্ষের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা জামানত নিয়ে সালিশের সময় দেন ২০২০ সালের ১৯ জুন। সালিশের দিন জায়গার কাগজপত্র নেন। সালিশে তিনি কাগজ অনুযায়ী ন্যায় বিচারের দাবি করেন। রেকর্ডে এক শতাংশ জায়গার মালিক হলেও গ্রাম্য পঞ্চায়েতে সালিশকারীগণ তাদের জায়গা বুঝিয়ে দেননি। এটি নিয়ে ন্যায় বিচারের জন্য গত ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার সিনিয়র সহকারি জজ আদালতে স্বত্ব মামলা(মামলা নং ৯৭/২০২০ ইং) দায়ের করেন কাজল।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন সমাজচ্যুত কাজল আহমদ। ছবি: মুক্তকথা
আদালতে মামলা করায় সালিশকারীগণ ক্ষীপ্ত হয়ে গত ৫ ডিসেম্বর ২০২০ইং তারিখে মামলার বিবাদীর বাড়িতে বসে তার পরিবারকে কোরবানপুর গ্রাম থেকে সমাজচ্যুত করেন। সালিশকারীগণ এলাকার লোকদেরকে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে না যাবার জন্য কঠোরভাবে নিষেধ দেয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গেলে তাদেরও পরিণতি তার মতো হবে বলে হুমকি দেয়। সমাজচ্যুত করার পর মসজিদের ইমামের বেতন ও মক্তবের সাপ্তাহিক ওই পরিবারের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে না। এই নিষেধের ফলে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কয়েক লক্ষ বকেয়া টাকা আদায় সম্ভব হচ্ছেনা। এর জন্য তিনি অর্থনৈতিকভাবে মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। এমনকি তার পরিবারের কেউ মারা গেলে বা অসুস্থ হলে বাড়িতে না যাবার জন্য নিষেধ করেছেন মোড়লরা।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, সমাজচ্যুত করার কারণে গত ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ইং তারিখে চরম দুর্ব্যবহার, স্থানীয় মসজিদে নামাজ আদায়ে বিভিন্ন ধরণের বাধা বিপত্তি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লোকজন না আসা এমনকি গ্রামের লোকজনের সাথে কথা বলতে না দেয়া সহ স্বাভাবিক জীবন যাত্রা পরিচালনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি, মৌলিক অধিকার হরণ, মানবাধিকার লঙ্গনের জন্য বিবাদী পাখি মিয়া, পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নজরুল মিয়া, সদস্য চেরাগ মিয়া, চুনু মিয়া, হান্নান মিয়া, কাদির মিয়ার নামোউল্লেখ করে সমাজচ্যুত করার কারণ জানতে চেয়ে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। ঐ লিগ্যাল নোটিশের কোন সন্তেুাষজনক জবাব তারা দেয়নি। উপরন্তু তাদের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করায় আরও ক্ষীপ্ত হয় সালিশকারীগণ। বিবাদী পাখির মিয়ার বাড়িতে আবারও বসে তাদেরকে ৫ বছরের জন্য চুড়ান্তভাবে সমাজচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয়।
কাজল আহমদ অভিযোগ করে বলেন, পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নজরুল মিয়া প্রভাবশালী ক্ষমতাসীন দলের লোক। তার বিরোদ্ধে এলাকায় কেউ কথা বলতে চায় না। তার বিরোদ্ধে কেউ গেলে তাদেরকেও সমাজচ্যুত করা হয়।
কাজল আহমদ আরও বলেন, সালিশে আমাদের জমাকৃত টাকা ও জায়গার কাগজপত্রাদি সমূহ সালিশকারীগণ আমাদের এখনো বুঝিয়ে দেননি। এছাড়াও বর্তমানে তাদের ছেলে-সন্তানরা মক্তবে গিয়ে কুরআন শিক্ষা করতে পারছে না। তাদেরকে সমাজের অন্যান্য ছোট্ট সন্তানরা হেয় করে কথা বলে। যার জন্য তারা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। ফলে সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা শঙ্কিত। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তার ভাই আকমল হোসেন ও সমাজচ্যুত অন্য একটি পরিবারের সদস্য জুবেল আহমদ।
এ বিষয়ে গ্রাম্য পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নজরুল মিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বর্তমানে আমি ব্যস্ত আছি। এ বিষয়ে কোন কথা বলবো না। তবে পঞ্চায়েত কমিটির অপর সদস্য চুনু মিয়া সমাজচ্যুতের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
ভূকশিমইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এই পঞ্চায়েত কমিটির মধ্যে সমস্যা আছে। তারা একেক সময় একেক পরিবারকে সমাজচ্যুত করে।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। এরকম হয়ে থাকলে ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। সভ্য সমাজে এরকম সমাজচ্যুতের ঘটনা ঘটতে পারে না। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
|