হারুনূর রশীদ
চিন্তা ছাড়া কোন উদ্ভাবনাই হয় না। সে ইলিশ মাছের চরচরা রান্না থেকে শুরু করে চাঁদে যাবার অভিযান সবকিছুতেই চিন্তার প্রয়োজন রয়েছেই শুধু নয় চিন্তা অপরিহার্য্য। অবশ্যই চিন্তা এককভাবে হাওয়ায় ঘুরে বেড়ানো কোন ইলেক্ট্রন ক্ষমতা নয়। চিন্তার আঁধার প্রাণীজগত। মানুষের জ্ঞান বলে, প্রাণীকূল কোন কর্ম সাধন করতে চাইলে অদেখা-আছোঁয়া যে শক্তির আশ্রয়ে যায় তা-ই সর্বজন স্বীকৃত সেই চিন্তা শক্তি। এ বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে স্বয়ংক্রিয় কিছুই নয়। সব কাজের পেছনে একটা কারণ ও উদ্দেশ্য আছে এবং থাকবেই। আর এই কারণ বা উদ্দেশ্যই মানুষের চিন্তার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। মানুষ যখনই কিছু করতে যায় তখনই শুরু হয় তার চিন্তার আশ্রয়ে যাওয়া। কাজটি করবে কি-না? এর ফল কি হবে? আদৌ কোন ফল পাবে কি-না? ইত্যাদি, ইত্যাদি। যদিও জ্ঞানীগুণীজন বলে গেছেন যে, ফলের আশা না করে কাজ করে যাও নিরন্তর। কিন্তু দুনিয়ার বেশীরভাগ মানুষ ভুলেও তা স্মরণ করে না। লোভ আর লাভের চিন্তা থেকেই কাজ করে। যে কারণেই করুক না কেনো চিন্তার জগতে তাকে যেতেই হয়। সে এক অদেখা মহাজগত! সাগর সেখানে রেখাতূল্য। যোজন যোজন দূরের মহাকাশ এক লহমায় ঘুরে আসা যায় চিন্তা জগতে প্রবেশ করে।
চিন্তার ভেতর দিয়ে মানুষ বা মানুষের চিন্তা পলকে পাড়ি দিতে পারে বেহিসাব দূরত্ব যা সাদা-মাটা মন নিয়ে ভাবাই যায় না। তবে একটি জায়গায় চিন্তা সীমাবদ্ধ। সে হল জানাশুনা বা জ্ঞান। যে যা জানে বা শুনেছে, তার চিন্তাশক্তি ততটুকুই যেতে পারে। সংখ্যায় অতি নগন্য হলেও কিছু কিছু মানুষ আছেন, যারা এই জানা আর শুনার বাইরে গিয়েও চিন্তা করতে পারেন। তবে আমাদের মত সাদা-মাটা মানুষ চিন্তা জগতে ডুব দিয়ে দেখা আর শুনার বাইরে গিয়ে চিন্তা করতে পারেনা। দেখা-শুনার ভেতরেই তাদের ঘুরপাক খেতে হয়। যে বিষয় বা বস্তু সম্পর্কে আপনার কোন ধারণাই নেই অর্থাৎ আপনি কিছুই জানেন না বা শুনেননি, এমন বিষয়ে আপনার চিন্তাশক্তি বেশীদুর যেতে পারবে না। জানা এবং শুনাকেই বিম্বিত করতে পারবে আপনার মন-মনিকোঠায়।
ধরুণ, আপনি সৃষ্টির রহস্য বুঝতে চান। অনেক বড় বড় লেখকের পুস্তক পড়েও আপনার মন তৃপ্ত নয়। পৃথিবীর লক্ষকোটি মানুষের মত আপনার মনও জানতে চায়, মানুষ কোথা থেকে কিভাবে এলো? একাজে চিন্তা তো আপনাকে করতেই হবে। চিন্তার জগতে প্রবেশ করা ছাড়া বিকল্প কোন ব্যবস্থা বা বিধান নেই। এই যে চিন্তার জগতে প্রবেশ, এখানেই আসে ধ্যানের কথা।
ধ্যান!
হ্যাঁ ধ্যান! অর্থাত কি-না নিবিষ্ট মনে নির্দিষ্ট বিষয়ের মূল খুঁজে পাওয়ার লক্ষ্যে একটি অনুশীলন। এভাবেই দুনিয়ার সকল উদ্ভাবনার পেছনে যেমন রয়েছে মানুষের জানার আর সৃষ্টির চিন্তা। ঠিক তেমনি, চিন্তার সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে নিবিষ্টমনের ধ্যান। বলা যায়, চিন্তা মানেই ধ্যান। ধ্যান ছাড়া যে কোন খুঁজাখুঁজির গভীরে প্রবেশ একেবারেই সম্ভব নয়। আর গভীরে যেতে না পারলে সমাধান আসবেনা বের হয়ে। তাই বলা যায় চিন্তার রথ হল ধ্যান। ধ্যান রথে চড়ে চিন্তার জগতে ঘুরতে সক্ষম হলে আবিষ্কার একটি হবেই হবে। এই ঘুরাঘুরি কিন্তু বলতে যেটুকু সহজ, কাজে ততটুকুই কঠিণ, এই ধ্যান রথে চড়ে চিন্তার জগতে প্রবেশ করা। এখানেও অনুশীলনের কাজ আছে। এ কাজেও অনুশীলনের কোন বিকল্প নেই। একমাত্র নির্জন অনুশীলনই ধ্যানের সূক্ষ্মতা আনে আর ধ্যানের সূক্ষ্মতাই চিন্তা জগতের গভীরে পৌঁছাতে পারে। এ দেখা থেকে বলা যায়, চিন্তা আর ধ্যান মনোজগতের দুই সখা আর সখি!