ফ্রাঙ্কফুর্ট, ২৬ ফেব্রুয়ারিঃ যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুট নগরীতে পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ জার্মান শাখার কার্যনির্বাহী পরিষদের অভিষেক অনুষ্ঠান।
ফ্রেশেনহাইম এর মিলনায়তনে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের তালে তালে একে একে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান অনুষ্ঠানে উপস্থিত জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদ, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন জার্মানির সভাপতি ইউনুস আলি খান এবং আগত প্রবাসী ও জার্মান অতিথিবৃন্দ। সকল ভাষা সৈনিক ও শহীদদের প্রতি এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
ফাউন্ডেশনের জার্মান শাখার সভাপতি ইউনুস আলী খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা ও অভিষেক অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদ। বিশেষ আতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আহমেদ ফিরোজ এবং বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, নেদারল্যান্ডস শাখার সভাপতি ডেভিড রহমান।
ফাউন্ডেশনের জার্মান শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং সহ-সভাপতি যথাক্রমে খন্দকার মাহমুদুল গণি বিজু এবং হাকিম টিটুর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে ফাউন্ডেশনের সাংস্কৃতিক সম্পাদক কনা ইসলাম,কোলন থেকে আগত জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী আব্দুল মুনিম, কবি ও আঁকিয়ে মীর জাবেদা ইয়াসমিন ইমি, শিল্পী জালাল আবেদিন, রবি রায়, নাচিয়ে লিপিকা আহমেদ এবং আরও প্রবাসী কলাকুশলীরা গান, নাচ ও কবিতা পরিবেশন করেন।
বক্তারা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব ও প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, ভাষার জন্য এমন আন্দোলন পৃথিবীর ইতিহাসে একক ও অনন্য। এই ভাষা আন্দোলন থেকে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের সর্বক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দক্ষ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের উপর আলোকপাত করে বক্তাগণ বলেন, তাঁর বিচক্ষণ এবং প্রজ্ঞাময় নেতৃত্বের সাথে বাঙালি সাহসী দামাল ছেলে-মেয়েদের আত্মোৎসর্গের কারণে পাকিস্তান বারবার হার মানতে বাধ্য হয়েছে। উভয় আন্দোলন ও সংগ্রাম ছিল একটি মহান প্রচেষ্টা, যার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখেছে। তবে এসব মহান ভাষাসৈনিক এবং শহীদদের আত্মত্যাগ শুধুমাত্র তখনই অর্থবহ ও সার্থক হবে, যখন দেশে এবং প্রবাসে সর্বস্তরের এবং সকল প্রজন্মের মানুষ নিজেদের মাতৃভাষার চর্চা ও বিকাশে আন্তরিকভাবে নিজেদের নিয়োজিত করবে।
মান্যবর রাষ্ট্রদূত আহমেদ ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের সকল সৈনিক ও বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘দেশে ও দেশের বাইরে সবসময় এসব বীর শহীদদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা এবং সম্মান জানানোর জন্য আমাদের ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধ ও শহীদ মিনারের গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা পর্তুগালের দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শহীদ মিনার নির্মাণে সক্ষম হয়েছি। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা চালালে জার্মানিতেও কোন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করা কঠিন কাজ হবে না’।
এদিকে, ফ্রাঙ্কফুর্টে নিজেদের স্কুল ভবনে অনাড়ম্বরভাবে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করেছে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান দেশ স্কুল। মঞ্চের উপরে একটি অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে সেখানে একে একে লাইন ধরে ফুল দেন দেশ স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবক, সংগঠক ও অতিথিবৃন্দ।
আলোচনা পর্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দেশ স্কুলের প্রধান সমন্বয়কারী মিঠু কবির। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় দেওয়ান শফিক ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রবাসে বড় হওয়া শিশুদের মাঝে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির ব্যাপক চর্চা ও প্রসারে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। দেশ স্কুলের অন্যতম সংগঠক শিশিরার্দ্র মামুন এবং খলিলুর রহমান রতনের পরিচালনায় একুশের এই অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন জনপ্রিয় শিল্পী আব্দুল মুনিম, শিরিন আখতার, তাপসী রায় এবং দেশ স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-শিক্ষিকা। এছাড়া কবিতা আবৃত্তি করেন কবি ও আঁকিয়ে মীর জাবেদা ইয়াসমিন ইমি, সাংবাদিক হোসাইন আব্দুল হাই, খলিলুর রহমান রতন এবং সাইফুল ইসলাম।
দেশ স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, দেশ সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর উদ্যোগে এ বছরের নিয়মিত বৈশাখী আড্ডা আগামী ২৯শে এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে আসবেন বাংলাদেশের কিংবদন্তী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব খুরশিদ আলম এবং জনপ্রিয় শিল্পী কনা। এছাড়া বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গণে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য খুরশিদ আলমকে দেশ স্কুলের পক্ষ থেকে দেশ গুণীজন পদক ২০১৭ প্রদান করা হবে বলেও জানিয়েছেন ত্রৈমাসিক দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শিশিরার্দ্র মামুন।