বাংলাদেশের পার্বত্য চট্রগ্রামে আদিবাসী জনগোষ্টী গুলোকে জাতিগত ভাবে নির্মূল করার চক্রান্ত এবং সাম্প্রতিক সহিংতার প্রতিবাদে জুম্মা পিপলস নেটওয়ার্ক ইউকে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল, ব্রিটিশ মানবাধিকার সংগঠন সারভাইভাল ও ফ্রেন্ডস অব চিটাগাং হিলটেক্ট (সিটিএইচ) সহ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে শান্তিপূর্ন প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। ব্রিটেনে বসবাসরত আদিবাসী সম্প্রদায়ের শতাধিক নারী-পুরুষ শিশু ব্রিটেনের বিভিন্ন শহর থেকে এসে এই সমাবেশে যোগ দেয়। তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে একাধিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এবং সাধারন ব্রিটিশ নাগরিকরাও।
শনিবার ১৯ অক্টোবর ২০২৪ লন্ডন সময় দুপুর ১টা ত্রিশ থেকে বিকেল তিনটা পযর্ন্ত শান্তিপূর্ন এই প্রতিবাদ সমাবেশে কয়েক শত মানুষ অংশ নেয়। এছাড়াও তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে তাদের সাথে একাত্মতা ঘোষনা করে সমাবেশে যোগদেয় ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম ফর স্যাকুলার বাংলাদেশ, ইউকে এবং ইউরোপসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন।
বিক্ষোভে বক্তারা ১লা অক্টোবর খাগড়াছড়িতে সহিংসতার ভয়াবহ প্রভাবের বিবরণ দেন, যা ১৮, ১৯, এবং ২০ সেপ্টেম্বর দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি এবং রাঙ্গামাটিতে পূর্বে সহিংস হামলার পর থেকে শুরু হয়েছিল।
জুম্মা পিপলস নেটওয়ার্ক ইউকে বাংলাদেশে চলমান মানবিক সংকট নিরসন ও আদিবাসী নিধন বন্ধে ব্রিটিশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানিয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কেয়ার ষ্টারমার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানিয়ে আদিবাসী নেতৃবৃন্দ বলেন যুগ যুগ ধরে বাংলদেশের আদিবাসীরা অত্যাচারিত হয়ে আসছে। বর্তমান অবস্থায় আদিবাসীদের উপর অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গেছে কয়েকগুন। আদিবাসীদের জন্মভূমি ও বসত ভিটে থেকে উচ্ছেদ করতে একটি মহল গভীর ষঢ়যন্ত্র করছে। এযাবত ১০ জনেরও বেশী আদিবাসীকে হত্যা করেছে অভিবাসী বাঙালীরা আদিবাসীদের বাড়ী ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্টানে হামলা করছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিনা কারনে আদিবাসীদের হয়রানি করছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের সমন্বয়ক জেরেমি অ্যালেন বান্দরবানে বসবাস ও কাজের অভিজ্ঞতা বলে শুনান। তিনি জমি দখল এবং মহিলাদের উপর হামলা প্রত্যক্ষ করেছেন বলে জানান। তিনি আরও বলেন, “অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে জনতার সহিংসতা বন্ধ করতে এবং এলাকায় সহিংসতার আরও বৃদ্ধি রোধে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে”।
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ থেকে এযাবত শতাধিক আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাড়ী ও দোকান আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। চারজন নীরিহ আদিবাসীকে প্রকাশ্যে হত্যা করেছে। সেটেলার বাঙ্গালীদের হামলায় ৫০ জনেরও বেশী আদিবাসী নারী পুরুষ আহত হয়েছেন। প্রতিদিনই আদিবাসী নারীরা ধর্ষনের শিকার হচ্ছে।
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খাগড়াছড়ি এবং দিঘিনালা, ২০ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটি ১ অক্টোবর খাগড়া ছড়িতে বাঙ্গালী সেটেলারা আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাড়ী-ঘর ব্যবসা প্রতিষ্টান ধর্মীয় উপাষনালয়ে হামলা করে আদিবাসীদের বসতঘর ব্যবসা প্রতিষ্টান লুটপাটের পর আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। এসব হামলায় শত শত আদিবাসী নারী পুরুষ আহত হয়েছেন।
তারা বলেন, ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তি চুক্তি আজও বাস্তবায়িত হয়নি। সমাবেশ শেষে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরাবরে একটিস্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারক লিপিতে আদিবাসীদের জানমাল রক্ষায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
অনুষ্টিত সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- উজ্জয়িনী রায়, জেরেমি অ্যালেন, ওমবাশি গ্রেচ ক্যাটো, রুমানা হাশিম ও নোয়েল হিউম, সুব্রত চাকমা, অভি বড়ুয়া, পবন বড়ুয়া, আশু চাকমা, রেগা চাকমা, জেসি চাকমা, আনন্দ ভিক্ষু, ভান্তে সুমনশ্রী, জুনসান চাকমা, নিপুন চাকমা, রোমানা হাসেম, এন্ডু পিলিপ, মিঃ মাইকেল প্রমুখ।
বিক্ষোভের শেষে, উজ্জয়িনী রায়, জেরেমি অ্যালেন, ধর্মপ্রিয়া শ্রমন, ওমবাশি গ্রেচ ক্যাটো এবং ভ্যালেন্টাইন হার্ডিং ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারকে স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন।