হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ বাংলার চিত্র, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিসহ তিন প্রজন্মের বেড়ে ওঠা জীবন-সংগ্রাম। শৈশবের সোনালি দিনের গ্রামীণ বিনোদন আর গ্রাম থেকে শহরে পড়াশোনাসহ জীবনপ্রবাহের এক প্রাণবন্ত রূপ ফুটে উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, স্থানীয় রাজনীতি নিয়ে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের প্রভাষক শফিকুল ইসলামের রচিত উপন্যাস ‘কালের প্রতিধ্বনি’ এখন পাঠকের প্রশংসা কুড়াচ্ছে। মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ জেলার বই প্রেমি মানুষের কাছে এখন অন্যতম প্রিয় বই কালের প্রতিধ্বনি।
পাঠক তোফায়েল আহমেদ ফাহিম বলেন, এবারের বই মেলায় প্রকাশিত হয়েছে আমার প্রিয় শিক্ষক শফিকুল ইসলাম স্যারের প্রথম উপন্যাস “কালের প্রতিধ্বনি”। বইটি নিছক কোনো ভালবাসার গল্প নয়, রূপময় প্রকৃতির বন্দনা কিংবা দারিদ্র ক্লিষ্টের মর্মন্তুদ কাহিনীও নয়, বরং বইটি গোটা একটা জনপদের যাপিত জীবনের প্রতিচ্ছবিকে তুলে ধরেছে। জীবন ও প্রকৃতির রসে পরিপুষ্ট, মানবিকতায় উচ্চকিত আর আধ্যাত্মবোধে সমৃদ্ধ এই বইটি আবহমান সরল গ্রামীন পটভূমিকায় লেখা হলেও সর্বোপরি তাতে ব্যক্ত হয়েছে গতিশীল মহাকাল ও মহাজগৎ-সম্পর্কিত এক নিগূঢ় জীবনদর্শন আর মানুষের অন্তিম পরিণতি।
বইয়ের পাঠক রাজিব সূত্র ধর বলেন, আদর্শ উপন্যাসের মানদন্ডে বইটির অবস্থান কেমন হবে সেটা মূলত বিদগ্ধ পাঠকই বলতে পারবেন। সাধারণ পাঠক হিসেবে বলতে পারি কালের প্রতিধ্বনি অবশ্যই সুখপাঠ্য। আপনারা যারা “হাজার বছর ধরে” কিংবা “তিতাস একটি নদীর নাম” উপন্যাস পড়েছেন তাদের কাছে অনেকাংশেই সে সকল উপন্যাসের সমগোত্রীয় মনে হবে। লেখক বহুচরিত্রের অবতারণ করেছেন ঠিকই কিন্তু কারো সাথে কারো বিরোধ সম্পর্ক নয় বরং প্রত্যেক চরিত্রের মাধ্যমে আবহমান বাংলার গ্রামীণ সমাজের চিরায়ত রূপ তুলে ধরেছেন।
সাইয়েদ নিজাম বলেন, অসাধারণ বই, অনেকদিন পর এমন একটি বই পড়লাম, বইটি পড়ে আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম শৈশবে, ইট পাথরের শহুরে জীবন থেকে লেখক আমাকে নিয়ে গেছেন প্রকৃতির নিঃস্বার্থ আঙ্গিনায়।
পাঠক প্রিয়ম আহমেদ বলেন, লেখকের প্রথম উপন্যাসটি পাঠক হিসেবে আমাকে অনেক আশ্চর্য করেছে। উপন্যাসটিতে গ্রাম বাংলার সাধারণ পেশাজীবীদের আশা- আকাঙ্ক্ষা, সুখ-দুঃখ এবং গ্রামে বেড়ে উঠা শৈশবকালের স্মৃতি, সংস্কৃতি ঐতিহ্য সহ বাংলার প্রতিটি অনুভূতি অতুলনীয়ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই বইটি বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের জন্য এক বিরাট উপহার।
গত ১২ মার্চ মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে লেখক শফিকুল ইসলামের প্রথম উপন্যাস ‘কালের প্রতিধ্বনি’এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বইটি এবারের একুশে বইমেলায় প্রকাশ করে অন্তরা প্রকাশন। প্রকাশের পরই কয়েকমাসের মধ্যে বইটি বাজারে সাড়া ফেলে। বইটির লেখক শফিকুল ইসলাম ১৯৯১ সালের ১০ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার অন্তর্গত পূর্বভাগ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করেন। এরপর বিসিএস(সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে প্রভাষক হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। তার প্রথম উপন্যাস ‘কালের প্রতিধ্বনি’ প্রকাশকালে তিনি মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে অধ্যাপনায় নিয়োজিত রয়েছেন।
লেখক শফিকুল ইসলাম বলেন, কালের প্রতিধ্বনি আমার লেখা প্রথম সামাজিক উপন্যাস। এটি মূলত গ্ৰামীণ বাংলার মানুষের বেরে উঠা ও অন্তীম পরিণতি পর্যন্ত উপন্যাস রচনা করেছি। বইয়ে আমাদের জীবনের বাস্তব বিষয়গুলো তুলে ধরেছি। হারিয়ে যাওয়া গ্ৰামের খেলাগুলোও রয়েছে এই উপন্যাসে। উপন্যাসটি লিখতে প্রায় আড়াই বছর সময় লেগেছে। নিজের কাছেও অনেক যাচাই বাছাই করেছি। বইটি যারা পড়বেন তারা সহজেই ধরতে পারবেন যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আসার আগে কেমন ছিল মানুষের জীবন, সেই বিষয়গুলো তুলে ধরেছি।