মুক্তকথা: ১লা জুন: সময় ১১টা:
আজ উদ্ভোধন হল দুনিয়ার দীর্ঘতম রেল সুড়ংপথের। অাল্পস পাহাড়ের পেট বা তলদেশ দিয়ে ৫৭ কিলোমিটারের এই সুদীর্ঘ সুড়ংএর শুভ উদ্বোধন হল আজ বুধবার, ১লা জুন, ২০১৬। কাজ শুরুর ২০ বছর পর আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হল বিশ্বের এই দীর্ঘতম রেল সুড়ংপথটি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে নকশা তৈরির প্রায় ৭০ বছর পর সুইৎজারল্যান্ডে নির্মিত হল বিশ্বের এই অষ্টম আশ্চর্য্য। গথার্ড বেস টানেল নামের এই সুড়ংপথে পুরোপুরি রেল চলাচল শুরু হবে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর থেকে।
এতে খরচ হয়েছে ৮.৮৫ বিলিয়ন ইউরো বা ১০.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আল্পস পর্বতের পেটের ভেতর দিয়ে ছুটে চলা এই সুড়ঙ্গটি সুইজারল্যান্ডের এর্স্টফেল্ড(উরি) এলাকা থেকে বদিও(তিসিনো) পর্যন্ত বিস্তৃত। মঙ্গলবার প্রথম বারের জন্য একটি ট্রেনকে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই সুড়ঙ্গের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত চালানো হয়েছে। ডিসেম্বর থেকে গথার্ড বেস দিয়ে নিয়মিত ট্রেন চলাচল শুরু হবে। এতে জুরিখ আর মিলানের দূরত্ব অনেক অনেক কমে যাবে। এখন রেল পথে জুরিখ থেকে মিলান পৌঁছতে সময় লাগে প্রায় আড়াই ঘণ্টা। সুড়ঙ্গ দিয়ে ট্রেন চলাচল পুরোদস্তুর শুরু হয়ে গেলে জুরিখ থেকে মিলান পৌঁছতে সময় বাঁচবে ৫০মিনিট।
নকশা তৈরি হয়েছিল ১৯৪৭ সালে। অথচ, সুইজারল্যান্ডের মতো একটি উন্নত ধনবান দেশ এমন প্রয়োজনীয় একটি সুড়ঙ্গ তৈরি করতে ৭০ বছর সময় নিল কেনো, এমন প্রশ্নের জবাব একটাই, ১৯৪৭ সালে নকশা তৈরি হলেও সেটি ছিল কল্পলোকের বাসনা। অবশ্য বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আমলাতান্ত্রিক জট ও বিশেষজ্ঞসহ সাধারণ মানুষের মতামত নিতে গিয়ে এতো সময় ব্যয় হয়, আটকে থাকে ছাড়পত্র। ১৯৯৯ সালে সবুজ সঙ্কেত পায় গথার্ড বেস প্রকল্প। ১৭ বছর সময় লেগেছে সুড়ং এর কাজ শেষ হতে আর খরচ হয়েছে ১০.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
আল্পসের তলদেশ কেটে এই সুদীর্ঘ সুড়ঙ্গ তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছিল ৩০০০টন ওজনের ও ৪৪০ মিটার(১৪৪০ফুট) লম্বা দৈত্যাকারের টানেল বোরিং মেশিন। প্রায় ৪৪ হাজার ঘন্টা অবিরাম কাজ করেছেন ১২৫ জন শ্রমিক। সর্বমোট ২৮,২০০,০০০ (দুইশত বিরাশী লক্ষ) টন পাষাণ পাথর কাটা হয়েছে যা কিনা মিশরের ৫টি গিজা পিরামিডের সমান। কালজয়ী সুবিশাল এই কর্মযজ্ঞ চালাতে গিয়ে ২০০২ সাল থেকে ২০১২ সাল সময়ের মধ্যে এই দৈত্যাকৃতির পাথরকাটা অভিযানে প্রানবলিদান দিয়েছেন ৯জন মানুষ। গথার্ড বেস চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত বিশ্বের দীর্ঘতম সুড়ঙ্গের শিরোপা ছিল জাপানের সেইকান টানেলের মাথায় আর ইংল্যান্ড-ফ্রান্সের সংযোগকারী ৫০.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৫৩.৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেই সুড়ংটি এখন তৃতীয় স্থানে চলে গেলো।( উইকিপেডিয়া থেকে অনুদিত)