মুক্তকথা নিবন্ধ।। দেশের সুশীল সমাজের একটি অংশ একটা নতুন দল তৈরী করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন বলে কথা উঠেছে। জানা গেছে মার্কিন দূতাবাসসহ কয়েকটি বিদেশি দূতাভাস এই নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছে। নতুন চিন্তা-ভাবনার এই দলের মূল লক্ষ্য হচ্ছে জামাত, তারেক ও ভারত বিরোধীতা।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. মাহবুবুর রহমান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর(অব.) হাফিজুর রহমানসহ একাধিক শীর্ষ নেতা সম্প্রতি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি এই পদত্যাগের ব্যাপারে কিছু এখনও বলেনি। অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনকে অন্য মঞ্চ থেকে বেগবান করতে গিয়ে কর্ণেল অলির দল ভেঙ্গেছে, বিভক্ত হয়েছে এলডিপি। বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মাহি বি চৌধুরী এখন দুদকের তদন্তের মুখোমুখি আছেন। আর ভারত বিরুধী পাকিস্তানী কৌশলের পথে হাটাকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেকেই ইতিবাচক মনে করেননা। এ সমস্ত বাস্তবতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নীরবে মেরুকরণ ঘটছে বলে বিভিন্ন বিশ্বাসযোগ্য সূত্র থেকে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা থেকে পাওয়া কথায় জানা গেছে যে, উদারপন্থী যারা জামাত বিরোধীতা করে এবং তারেকের কর্তৃত্বকে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে এমন অন্তত ৮ জন নেতা বিএনপি থেকে পদত্যাগ করতে পারেন। এদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির অন্তত ২ জন সদস্য রয়েছেন। তাদের মধ্যে ড. আব্দুল মঈন খানের কথা এখন বিএনপিতে প্রকাশ্যেই আলোচনা হচ্ছে যে তিনি যেকোন সময় পদত্যাগ করতে পারেন।
অপর একটি সূত্র থেকে জানাগেছে, মঈন খান ইতিমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন। তবে বিএনপি’র উর্ধ্বতন নেতৃত্ব তার সঙ্গে এখনও আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও বিএনপিতে বিভিন্ন স্তরের যারা জামাত বিরোধী হিসাবে পরিচিত, যারা জামাতের সাথে জোটে থাকতে চায় না এবং তারেক জিয়ার স্বৈরকর্তৃত্ব ও খারাপ আচরণের জন্য দীর্ঘদিন থেকে ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন এমনকি যারা তারেক জিয়াকে দলের জন্য ক্ষতিকর মনে করছেন তারা দল ত্যাগ করছেন।
দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক সূত্রের মতে, বিএনপির এই দলত্যাগ যে শুধু তারেক জিয়ার প্রতি ক্ষোভ বা জামাতের সঙ্গে সম্পর্ক না গড়া কেবল তা-ই নয়। বরং রাজনীতিতে একটি নতুন মেরুকরণের প্রক্রিয়া হিসেবে বিএনপিতে এই পদত্যাগ চলছে। ওই রাজনৈতিক সূত্রটির মতে, বিএনপি- এলডিপির ভাঙন এবং বদরুজ্জোদা চৌধুরীর সঙ্গে হঠাৎ করে সরকারী দলের শীতল সম্পর্ক, সব মিলিয়ে রাজনীতিতে একটা নতুন প্রক্রিয়া চলছে। যে কোন দেশেরই রাজনীতিতে এমন নতুনত্ব আসতেই পারে। এরূপ প্রক্রিয়ার মূলে কাজ করে রাজনীতিকে নতুন দিশায় নিয়ে যাওয়া।
বিগত ডিসেম্বরে নির্বাচনের আগে রাজনীতিতে এরকম একটা মেরুকরণ ঘটেছিল। সেখানে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল। কিন্তু ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বের ব্যাপারে এখন আস্থাশীল নয় বিএনপির একটি বড় অংশ। ঐক্যফ্রন্টের অনেক নেতারা এখন ড. কামাল হোসেনের আচরণে সন্তুষ্ট নয়। তাছাড়া ড. কামাল হোসেন বয়স্ক এবং অসুস্থ। দলনেতা হিসেবে রাজনৈতিকভাবে দলকে এগিয়ে নেওয়ার সময় কিংবা শারীরিক অবস্থার কোনটাই তার নেই।
এই বিবেচনা থেকেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মাহমুদুর রহমান মান্না, আ.স.ম আব্দুর রব, বিএনপি এবং এলডিপির একটি অংশ, বিকল্পধারা মিলিয়ে একটা মধ্যপন্থার রাজনৈতিক দল গঠনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এই রাজনৈতিক দলটির মূল বিষয় হলো ভারত বিরোধীতা করা, পারিবারিক রাজনীতি এবং জামাতের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করা।
তবে অন্য একটি মহল বলছে ভারত বিরোধীতা না করলে বিএনপির যে ভোটব্যাংক সেই ভোটব্যাংক পাওয়া যাবে না। মূলত এটি বিএনপির একটি বিকল্প রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে যাতে শুধু বিএনপি নয়, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও থাকবে। এই দল বা জোটটির মূল লক্ষ্য হবে আওয়ামী লীগের বিরোধীতা করা। আওয়ামী লীগের সমালোচনা করা।
রাজনীতির চলমান অবস্থায় বলা যায়, আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে বিএনপির অস্তীত্ব এখন আর নেই। এদিকে, এরশাদের মৃত্যুর পর রাজনীতিতে বিরুধী হিসেবে জাতীয় পার্টির উপস্থিতিও অনিশ্চিত। রাজনীতির এমন বাস্তবতায় একটি প্রতিযোগীতা মূলক শক্তিশালী বিরোধী মঞ্চ দেশের জন্য অতীব প্রয়োজন। আর সে দায় মেটাতেই এমন আয়োজন বলে মনে হচ্ছে। তবে কবে নাগাদ এই আয়োজন দৃশ্যমান হবে সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তথ্য সূত্র: গণমাধ্যম
লণ্ডন, ২১শে নভেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০১৯