চা বাগান অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলায় প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের বসবাস। জেলার অধিকাংশ মানুষ প্রবাসে থাকেন। তাই এ জেলাকে প্রবাসী জেলা হিসেবেও অখ্যায়িত করা হয়। কিন্তু চাকুরির ক্ষেত্রে উচ্চ পর্যায়ে নারীরা নেই বললেই চলে। অনেক পরিবার নারীদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত কিংবা চাকুরি করার সুযোগ দিচ্ছে না। প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পরেই পশ্চিমা কিংবা উন্নত দেশে বসবাসরত বাংলাদেশী প্রবাসী পাত্র দেখে মেয়েদের বিয়ে দেয়াই পিতা-মাতার মূল লক্ষ্য। এই অনগ্রসর জেলার নারীদের এগিয়ে নিতে কাজ করছেন মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবরিনা রহমান। নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে তিনি এ উপজেলার মহিলাদের উচ্চ শিক্ষা ও চাকুরির ক্ষেত্রে অগ্রসর করতে আন্তরিকতার সহিত কাজ করছেন। তার কর্মপরিধি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলাপকালে তিনি বলেন।
সাবরিনা ইসলাম নাটোর জেলার নলডাঙ্গ উপজেলায় ১৯৮৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন। বাবার চাকুরির সুবাদে থাকতেন বগুড়ায়। বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৯ সালে এসএসসি এবং পরবর্তীতে ঢাকার কলেজ অব ডেভলাপমেন্ট অলটার নেটিভ কোডা থেকে ২০০১ সালে এইসএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে বুয়েট থেকে সিভিল ইঞ্জিণিয়ারিংয়ে বিএসসি করেন। সড়ক ও জনপদ বিভাগে ৩২ তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তির্ণ হন। পরবর্তীতে ফের প্রশাসনে ৩৩ তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তির্ণ হন সাবরিনা। সাবরিনার বাবা বজলুর রহমান ৮৪ ব্যাচের বিসিএস কর্মকর্তা ছিলেন। সর্বশেষ তিনি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ডিজি থাকাবস্থায় অবসরে যান। এসময় তিনি অতিরিক্ত সচিব ছিলেন। ৩ বোন ও ১ ভাইয়ের মধ্যে ইউএনও সাবরিনা সবার বড়। সাবরিনার স্বামী সড়ক বিভাগ মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিও ৩০তম ব্যাচের বিসিএস কর্মকর্তা।
এ জেলায় বাল্য বিয়ে ও নারীদের অনগ্রসতার বিষয়ে তিনি যুগান্তরকে বলেন, মৌলভীবাজারের দুই তৃতীয়াংশ পরিবার মেয়েদের উন্নত দেশের প্রবাসী স্বামীর কাছে বিয়ে দিতে চায়। চাকুরির ক্ষেত্রে তাদের আগ্রহ নেই। দেশে থাকতে চায়না তারা। এ থেকে তাদের বের করে আনতে আমি নিয়মীত উঠান বৈঠক ও সচেতনতা মূলক অনুষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছি। প্রতিটি কর্ণার থেকে নারীদের সচেতন ও জনকল্যাণমুখি করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। বিশেষ করে কিশোরীদের নিয়ে কিশোরী সমাবেশ করা হচ্ছে। উচ্চ শিক্ষায় নারীদের এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি বলেন, কিছু কিছু পরিবার বাঁধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তারা মেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষা দিয়েই পাত্রস্থ করতে চায়। তাদের ধারণা মেয়ে মানুষ লেখাপড়া করে কি করবে। বিদেশী জামাই দেখে বিয়ে দেয়াই ভালো।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবরিনা ইসলাম অফিসিয়াল দায়িত্বের পাশাপাশি সামাজিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত। বিগত করোনাকালীন সময়ে তিনি কারো সহযোগীতার প্রয়োজন হলে তার সাথে যোগাযোগ করার কথা বলে ফেইসবুকে একটি পোষ্ট দেন। পরবর্তীতে প্রায় ২’শ মানুষ যোগাযোগ করলে তার ব্যক্তিগত তাহবিল থেকে তাদের ঘরে খাবার পৌঁছান। এর মধ্যে প্রায় ১৫-২০ জন প্রতিবন্ধী ছিল।
একজন নারী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে কোনো প্রতিবন্দ্বকতা মোকাবেলা করতে হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা মানুষিকতার বিষয়। কাজ করতে হলে নারী পুরুষের কোনো বেদাবেদ নেই। অনেকে বলে নারীরা মাঠে দৌঁড়াতে পারে না। পরিশ্রম করতে পারে না। এ কথা ঠিক নয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারী। তিনি যেভাবে দক্ষতা ও আন্তরিকতার সহিত দায়িত্ব পালন করছেন। চেষ্টা করলে সব নারীরাই এভাবে কাজ করতে পারেন। নারীরা কাজ করতে পারে না বলে প্রথমেই তাদের দুর্বল করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ নারী সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেও সম্পৃক্ত। তিনি ২০০৬ সালে ক্লোজাপ ওয়ান শীর্ষ ১০ এর মধ্যে ছিলেন।