লণ্ডন।। এবারের শৈতপ্রবাহ গোটা ইউরোপকে এক বড় ধরনের ঝাকুনি দিয়ে গেল। জোতির্বিজ্ঞানের ধারায় এবারের শীত বৃটেনে শুরু হয়েছিল ২১ ডিসেম্বর থেকে এবং শেষ হবার কথা ২০শে মার্চ ২০১৮ তারিখে। শীতের শুরুতে তেমন একটা অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা যায়নি। বলতে গেলে হঠাৎ করেই গত ২৭ মার্চ থেকে শীতের প্রকোপ ভয়ানকভাবে বেড়ে যায়। প্রচণ্ড শীতে ঘর থেকে বের হওয়া মুষ্কিল হয়ে উঠে।
শীতের এই ভয়াবহতা লক্ষ্য করে প্রায় সকল এলাকায়ই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। টেলিগ্রাফ লিখেছে ১ হাজারেরও উপরে স্কুল বন্ধ করতে হয়েছিল এবং ৭বছর বয়সের একটি মেয়ে মারা যায়। ফলে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ১০জন। প্রচণ্ড তূষারপাতে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় ৮হাজার দূর্ঘটনা ঘটে যার প্রায় ৬হাজারই ছিল বরফে রাস্তা ঢেকে যাওয়ার কারণে।
বিবিসি, গার্ডিয়ানসহ এ পর্যন্ত পত্রিকান্তরে পাওয়া খবরে জানা যায় সারা ইউরোপে শীতের প্রকোপে ২৪জনের মত মানুষ মারা গেছেন এর মধ্যে কেবল বৃটেনেই মারা গেছেন ১০জন।
এ সময় রাজধানীর প্রানকেন্দ্র কেমডেনে খাবার পানির সংকট দেখা দিলে ‘থেমস ওয়াটার’ হ্যাম্পস্টীড এলাকায় বিনামূল্যের খাবার পানি সরবরাহ করে। একই সময় পার্শ্ববর্তী এলাকা হাইগেট, ক্রাউচ এণ্ড, মাজওয়েল হীল, পূর্ব ফিন্সলি, কেন্টিশ টাউন ও ব্রেন্টক্রস এলাকায়ও খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছিল। ‘থেমস ওয়াটার’এর ভাষায় প্রচণ্ড শীতে পানি সরবরাহ লাইনে পানি চুয়ানি দেখা দেয়ায় এই সংকট সৃষ্টি হয়েছিল। কেমডেন হেম্পস্টীড-কিলবার্ণের এমপি টিউলিপ সিদ্দীক তার নির্বাচনী এলাকার মানুষজনকে, যাদের খাবার পানির সমস্যা রয়েছে, তাকে কেবলমাত্র জানাতে অনুরোধ করেছেন।
গত ১লা মার্চ বৃহস্পতিবার গ্যাসের নেটওয়ার্ক পরিচালক গ্যাস গ্রাহকদের জানিয়েছিল শীতের তীব্রতার কারণে গ্যাসের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। এই জানান দেয়ার মূল উদ্দেশ্য মনে করা হচ্ছে গ্যাস লাইনে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে করা হয়েছিল। অবশ্য পরে গ্যাস সমস্যা সামাল দেয়া হয়।
প্রচুর বিমান উড়ান ও রেল চলাচল বাতিল করা হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা আংশিক বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এর মাঝেই ঘূর্ণীঝড় ‘এমা’ আক্রমণ করে। শতাধিক গাড়ী রাস্তায় আটকা পড়ে তূষারপাতের কারণে। উত্তর-পশ্চিম বৃটেনে ২০ হাজার বাড়ী-ঘরে বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হয়। একটি পরিবেশ এজেন্সি ১৫টি বন্যার বিপদসংকেত ও ৩৬টি বন্যা সতর্কসংকেত লিপিবদ্ধ করে। বৃটেনের কোন কোন জায়গায় তাপমাত্রা -৫.২ তে গিয়ে পৌঁছায়।
যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কামব্রিয়ার একজন খামারীর ৪ হাজার মোরগের খাবার শেষ হয়ে গিয়ে মহা বিপদে পড়েছিলেন।
গত শুক্রবারে বৃটেন ও আয়ারল্যান্ডে ১২৫০টি বিমান উড়ান বাতিল হয়ে গিয়েছিল।
হাসপাতালের জরুরী যোগাযোগ নিশ্চিত করতে সামরিক বাহিনীর সহায়তা নেয়া হয়।
বিশেষ করে ২রা ও ৩রা মার্চ ছিল সবচেয়ে ভয়াবহতম শীত।