মুক্তকথা প্রতিবেদন।। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, সাবেক গণ পরিষদ’র সদস্য, বর্ষিয়ান রাজনিতিবিদ ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমানের জানাযা সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় মৌলভীবাজার ঈদগাহ(পৌরসভা ঈদগাহ) মাঠে তার জানাজা সম্পন্ন হয়। কোভিড-১৯ এর এই পরিস্থিতিতেও তার জানাজায় প্রায় ৩ হাজার মানুষ অংশ নেয়।
আজিজুর রহমান ছিলেন ২বারের সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক হুইপ, বাংলাদেশ সংবিধানে স্বাক্ষরকারী গণপরিষদ সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামীলীগ এর সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, মহান স্বাধীনতা পদকে ভূষিত বীর মুক্তিযোদ্ধা।
সর্বশেষ মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি মৌলভীবাজার ইউনিটের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। গত ৫ আগষ্ট বুধবার বিকেলে বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদের শরীরে করোনা পজেটিভ ধরা পরে। উন্নত চিকিৎসার জন্য বুধবার রাতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর মৌলভীবাজার রাডার ইউনিট থেকে করোনা রোগীবাহী এয়ার এম্বুল্যান্সে করে ঢাকাস্থ বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বিমান বাহিনীর মৌলভীবাজার রাডার ইউনিট পর্যন্ত বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদকে উন্নত চিকিৎসায় এগিয়ে দিতে যান জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মোঃ ফজলুর রহহমানসহ অন্যান্যজন।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তড়িৎ ব্যবস্থাপনায়, বিমান বাহিনীর সহযোগীতায় ও জেলা প্রশাসনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত আজিজুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার এম্বুল্যান্সে করে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আজিজুর রহমান একজন সাংস্কৃতিক ও নাট্যকর্মী থেকে নিজের সততা, প্রজ্ঞা ও দুরদর্শিতায় হয়ে উঠেন দেশ-মাটি ও গণমানুষের নেতা। স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট রাজনৈতিক অনুগামী মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ৪নং সেক্টরের মুক্তিযুদ্ধ কালীন মৌলভীবাজার জেলা রাজনৈতিক সমন্বয়কারী ছিলেন।
আজিজুর রহমান ১৯৪৩ সালে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের গুজারাই গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। শুধু মুক্তিযোদ্ধা নয়, তিনি পাকবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন এবং পাক হানাদারদের হাতে নির্যাতীত একজন মুক্তিযোদ্ধা।
তিনি ১৯৫৯ সালে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৬২ সালে মৌলভীবাজার কলেজ থেকে আইকম পাশ করেন এবং হবিগঞ্জের বৃন্দাবন কলেজ থেকে বি-কম পাশ করেন।
তিনি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালে টানা ২ বার মৌলভীবাজার-৩ আসন থেকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়ে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। একবার জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় হুইপ ও একবার কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন।
বর্তমান রুগ্ন রাজনীতি, পেশিশক্তি নির্ভর রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার এক অনুকরনীয় নাম আজিজুর রহমান। তিনি সততা, অসাম্প্রদায়িকতা ও অহিংস রাজনীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন মৌলভীবাজার জেলায়।
রাষ্ট্র ও সরকারের এবং দলের এতোসব গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থেকেও দেশ ও সাধারণ গরীব দু:খি মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য আজীবন কাজ করে গেছেন। এতোসব গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার পরও কোন দিন ব্যক্তিগত ষ্টাফ, গ্যানম্যান রাখেননি। সরকারি সুযোগ সুবিধাও ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেননি।
আজিজুর রহমান, যে কোন দুর্যোগে মানুষের পাশে থেকে সহায়তা ও সাহস যুগিয়েছেন। সর্বশেষ করোনা মহামারি সহ ঝড়বৃষ্টি বন্যা, নদী ভাঙ্গনসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে রাত দিন মানুষের সহায়তায় কাজ করা একজন সাদা মনের মানুষ ছিলেন আজিজুর রহমান। এর আগেও তিনি মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের প্রশাসকের দায়িদ্ব সফলতা ও সততার সঙ্গে পালন করেন।
আজিজুর রহমানের গ্রহনযোগ্যতার মাত্রা বুঝা যায়, তার জানাজার পূর্বে তাকে নিয়ে কিছু কথা বলতে এগিয়ে আসেন জেলার সকল দলের নেতৃবৃন্দ। তার নিজের দল আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীতো ছিলই এছাড়াও স্থানীয় বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, জামায়াত, খেলাফত মজলিসের নেতা-কর্মীসহ আরো অনেকে তাদের প্রিয় ‘আজিজভাই’কে নিয়ে কথা বলেন। পরে তাকে সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের নিজ গ্রাম গোজারাই-এর শাহ কামাল-এর মাজার সংলগ্ন পারিবারিক কবরস্থানে শায়িত করা হয়।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) রাত আড়াইটার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আজিজুর রহমান। করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ৫ আগস্ট তিনি বিএসএমএমইউ-তে ভর্তি হয়েছিলেন। সংকলনে সহায়তা করেছেন আব্দুল ওদুদ