1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
প্রাচীন গুরুকূল - শেষাংশ - মুক্তকথা
শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১২ অপরাহ্ন

প্রাচীন গুরুকূল – শেষাংশ

তনিমা রশীদ
  • প্রকাশকাল : শুক্রবার, ১১ জুন, ২০২১
  • ৮৪৫ পড়া হয়েছে

এবার আসি প্রাচীন ভারতের নারী শিক্ষা প্রসঙ্গে। প্রথমেই বলে ছিলাম যে প্রাচীন ভারতে নিচু জাত ও নারীদের শিক্ষা গ্রহণের অধিকার ছিলো না। কিন্তু প্রাচীন ভারতে উচ্চ শ্রেণির অর্থ্যাৎ রাজার মেয়েরা শিক্ষা গ্রহণের অধিকার পেত। তারপর এক পর্যায়ে প্রাচীন ভারতে নারী ও পুরুষের, জাত-ধর্মে সম-অধিকার হয় এবং লিঙ্গ-বৈষম্য বা নারী-পুরুষ ভেদাভেদ বলে কিছু ছিল না, বরঞ্চ তখন ভারতে নারীদের অতি উচ্চস্থান ছিল। তা আগেও ছিল কিন্তু শুধু রাজপরিবারের মেয়েদের।

সংগীত, নৃত্যে ও বাদ্যে প্রাচীন ভারতীয় নারীরা অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন। নারীরা বয়ন, সূচিশিল্প ও চারুশিল্প নিয়ে অধ্যয়ন করতেন। ছাত্রীরা গুরুগৃহ থেকে বেদ, বেদান্ত, উপনিষদ ইত্যাদি পাঠ করত। ভবভূতি তার ‘উত্তররামচরিত’-এ লিখেছেন (গুগল থেকে প্রাপ্ত) যে আত্রেয়ী বাল্মীকির আশ্রমে লব কুশের সঙ্গে বেদান্ত পড়েছিলেন। তৎকালীন নারীরা অধ্যাপনা এবং পুস্তক রচনাও করতেন এমনকী যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করতেন। আসলে, বৈদিক সমাজে বাল্যবিবাহ বলে কিছু ছিল না। আর অথর্ববেদ থেকে তথ্য পাই যে ছাত্রজীবন শেষ না হলে কুমারীদের বিবাহ করার অধিকার ছিল না(গুগল থেকে প্রাপ্ত)। জানা যায় যে, প্রাচীন ভারতে নারীরা ব্রহ্মবিদ্যা সম্পর্কিত গৃঢ় আলোচনা ও বিতর্কসভায় অংশ নিতেন এমনকী কেউ কেউ মন্ত্রদ্রষ্টাও ছিলেন অর্থাৎ তারা মন্ত্রের পরম তত্ত্ব প্রত্যক্ষলাভ করেছিলেন। এতটাই উন্নত ছিল প্রাচীন ভারতের নারী সমাজ ও নারী শিক্ষা আর প্রাচীন ভারতে গার্গী, মৈত্রী, আত্রেয়ীর মতো বিদুষীদের আমরা দেখতে পাই।

নীরস নোটস লিখিয়ে শিক্ষার্থীদের ‘তোতাপাখি’তৈরি করা প্রাচীন ভারতের শিক্ষা ধারার উদ্দেশ্য ছিল না। বরং প্রকৃত শিক্ষার্জনের সঙ্গে সঙ্গে যাতে শিক্ষার্থীরা সঠিক চরিত্র গঠন লাভ করে, আত্মসংযম ও আত্মবিশ্বাস যাতে বৃদ্ধিলাভ করে, সামাজিক কর্তব্যবোধ যাতে তারা পালন করতে পারে এবং শিল্প-সংস্কৃতির ধারাকে যাতে অব্যাহত রাখতে পারে বা শিল্প-সংস্কৃতি যাতে তাদের হাতে অক্ষুন্ন থাকে ইত্যাদি সব বিষয় নজর দেওয়াও শিক্ষারই নিরবচ্ছিন্ন অংশ হিসেবে ধরা হতো। প্রাচীন ভারতের শিক্ষা পদ্ধতির ফলে শিক্ষার্থীরা যে মনুষ্যত্বলাভ এবং সুচরিত্র লাভ করেছিল তা ভারতের নানা পৌরাণিক বা ঐতিহাসিক কাহিনিতে তো পাওয়াই যায় এমনকী বিদেশি পর্যটকদের রচনাতেও তা প্রতিফলিত হয়। উদাহরণ হিসেবে দেখতে পাই যে, খ্রিস্টপূর্বাব্দে যেসব স্বনামধন্য বিদেশি পর্যটকরা এসেছিলেন যেমন মেগাস্থিনিস, পিলনি, স্টাবো তাদের কথায় ভারতীয়রা সাধারণত মিথ্যা কথা বলতো না, ওই সময় চোর-ডাকাতের উপদ্রব ছিল না বললেই হয়, একে অপরের প্রতি ছিল অটুট বিশ্বাস আর এসবের জন্যই হয়তো কোনোরূপ মামলা-মোকদ্দমার বিষয় ছিল না। পরবর্তীকালে সপ্তম শতাব্দীতে বিখ্যাত চৈনিক পর্যটক হিউয়েন সাঙ এবং তারও পরের ই-ভসি দুজনেই ভারতীয়দের নৈতিকতার বা নৈতিক জীবন-যাপনের প্রশংসা করে গেছেন। শতাব্দীর আগে পর্যন্ত সমস্ত বিদেশি পর্যটকরা ভারতীয়দের নীতিবোধ, আচার-আচরণ ও চরিত্র সম্পর্কে প্রশংসা করেছিলেন। এই পৃথিবীতে যতগুলি প্রাচীন সভ্যতা গড়ে উঠেছিল ভারতীয় সভ্যতা ছিল তাদের মধ্যে উন্নত। বিভিন্ন বিষয় বা শাস্ত্রে প্রাচীন ভারতীয়দের কৃতিত্ব বা অবদান সম্পর্কে বলতে গেলে গোটা একটা বৃহৎ পুস্তক রচিত হলেও তা হয়তো শেষ হবে না। একাধিক বিষয়ে অবদান রেখেছেন এমন ব্যক্তিও বিরল নয় প্রাচীন ভারতে। প্রাচীন ভারতের এই সর্বিক উন্নয়নের পেছনে নিঃসন্দেহে রয়েছে সে সময়ের শিক্ষাপদ্ধতি যা এতই সুপরিকাঠামো যুক্ত, সুচিন্তিত ছিল যে পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে তা দেখা যায়নি এবং আজও হয়তো দুর্লভ। আর এই প্রাচীন ভারতীয় আশ্রমভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থাই গত শতাব্দীর গোড়ায় রবীন্দ্রনাথ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তার শান্তিনিকেতনে।

এখানে উল্লেখ্য যে, রবীন্দ্রনাথ ছিলেন প্রবলভাবে প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি মনে-প্রাণে চাইতেন শহরের রুক্ষ চার দেওয়ালের আবদ্ধে শিক্ষাদান নয়, এবং প্রাচীন ভারতবর্ষের মতো প্রকৃতির সঙ্গে শিক্ষার্থীর মনের এক মিলন ঘটানো। আজ, এত নামি-দামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্জন করে কতজন পারছি নিজেদের অর্জিত শিক্ষাকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে? বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থাই বা আমাদের কতটা চরিত্রবান করে তুলছে বা নৈতিকতায় ভরিয়ে দিচ্ছে? গুরু-শিষ্যের সেই পিতা-পুত্রের মতো সম্পর্কটা আদৌ আছে কী? সব গুরুই কি আজ সমান শ্রদ্ধাশীল বা সবাই কি শিষ্যের প্রকৃত নৈতিক বন্ধু হয়ে উঠতে পারছেন? গরীব শিক্ষার্থীদের বিনা পয়সায় শিক্ষা ক’জন দিচ্ছেন? এইসব বিষয়গুলো নিয়ে যতই ভাবি ততই আমরা প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠি। আর ঠিক তখনই আমরা ফিরে যেতে চাই প্রাচীন ভারতের এক শিক্ষাপ্রাঙ্গণে, প্রকৃতির মাঝে কোনো এক আশ্রমে, একজন বাস্তব জ্ঞানী গুরুর কাছে নিজেদের অর্জিত বিদ্যা প্রয়োগ করতে। আর শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে আত্মোপলব্ধি ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভের মাধ্যমে এক পরম শান্তিলাভ করতেও চাই। সর্বোপরি মানুষের মতো মানুষ হতে চাই যে!

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT