চা বাগান অধ্যুষিত ও হাওর বেষ্টিত মৌলভীবাজার জেলায় প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের বসবাস। জেলার অধিকাংশ মানুষ প্রবাসে থাকেন। তাই এ জেলাকে প্রবাসী জেলা হিসেবেও অখ্যায়িত করা হয়। কিন্তু চাকুরির ক্ষেত্রে উচ্চ পর্যায়ে নারীরা নেই বললেই চলে। অনেক পরিবার নারীদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত কিংবা চাকুরি করার সুযোগ দিচ্ছে না। প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পরেই পশ্চিমা কিংবা উন্নত দেশে বসবাসরত বাংলাদেশী প্রবাসী পাত্র দেখে মেয়েদের বিয়ে দেয়াই পিতা-মাতার মূল লক্ষ্য। এই অনগ্রসর জেলার পিচিয়ে পড়া নারীদের এগিয়ে নিতে সরকারী দায়ীত্বের পাশাপাশি কাজ করছেন মৌলভীবাজারের চা বাগান ও হাওর বেষ্টিত রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়াংকা পাল। নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে তিনি এ উপজেলার বাল্যবিয়ে বন্ধ, মহিলাদের উচ্চ শিক্ষা ও চাকুরির ক্ষেত্রে অগ্রসর করতে আন্তরিকতার সহিত কাজ করছেন। তার কর্মপরিধি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলাপকালে তিনি তার কর্মক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতার নানা কথা বলেন।
প্রিয়াংকা পাল বরিশাল জেলার গেীড়নদী উপজেলায় ১৯৮৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী জন্ম গ্রহণ করেন। প্রশাসনে ৩১তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তির্ণ হন প্রিয়াংকা। তার বাবা জীবনকৃষ্ণ পাল একজন ব্যবসায়ি ছিলেন। ছাত্রজীবনে পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি স্বপ্ন দেখতেন সমাজের পিঁচিয়ে পড়া মানুষদের নিয়ে কাজ করার।
এ জেলায় বাল্যবিয়ে ও নারীদের অনগ্রসতার বিষয়ে তিনি বলেন, মৌলভীবাজারের দুই তৃতীয়াংশ পরিবার মেয়েদের উন্নত দেশের প্রবাসী স্বামীর কাছে বিয়ে দিতে চায়। চাকুরির ক্ষেত্রে তাদের আগ্রহ নেই। দেশে থাকতে চায়না তারা। এ থেকে তাদের বের করে আনতে আমি নিয়মিত উঠান বৈঠক ও সচেতনতা মূলক অনুষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছি। প্রতিটি কর্ণার থেকে নারীদের সচেতন ও জনকল্যাণমুখি করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। বিশেষ করে কিশোরীদের নিয়ে কিশোরী সমাবেশ করা হচ্ছে। নারীদের নিয়ে নারী সমাবেশ করছেন। উচ্চ শিক্ষায় নারীদের এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি বলেন, হাওর পার ও চা শ্রমিক জনগোষ্টির অনেক পরিবার মেয়েদের পড়ালেখার ক্ষেত্রে অনেকটা উদাসীন। এছাড়াও জেলার বেশির ভাগ পরিবার তাদের মেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষা দিয়েই পাত্রস্থ করতে চায়। তাদের ধারণা মেয়ে মানুষ লেখাপড়া করে কি করবে। বিদেশী জামাই দেখে বিয়ে দেয়াই ভালো।
মৌলভীবাজার রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়াংকা অফিসিয়াল দায়িত্বের পাশাপাশি সামাজিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত। বিগত করোনাকালীন সময়ে তিনি আন্তরিকতার সহিত কাজ করে গেছেন।
একজন নারী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে কোনো প্রতিবন্দ্বকতা মোকাবেলা করতে হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা মানষিকতার বিষয়। কাজ করতে হলে নারী পুরুষের কোনো ভেদাভেদ নেই। অনেকে বলে নারীরা মাঠে দৌঁড়াতে পারে না। পরিশ্রম করতে পারে না। এ কথা ঠিক নয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারী। তিনি যেভাবে দক্ষতা ও আন্তরিকতার সহিত দায়িত্ব পালন করছেন। চেষ্টা করলে সব নারীরাই এভাবে কাজ করতে পারেন। নারীরা কাজ করতে পারে না বলে প্রথমেই তাদের দুর্বল করা হয়।