বহুল আলোচিত বৈষম্য বিরুধী ছাত্র আন্দোলনের ১৭ মামলা
আসামী ২৬০০জন, আটক ২৬০
এখনও গ্রেফতার হয়নি প্রকৃত দোষীরা অভিযোগ ছাত্রনেতার
২০২৪ এর আগষ্ট আন্দোলন ও স্বৈর-সরকার পতনের পরবর্তী সময় জুড়ে মৌলবীবাজারে আলোচিত ছাত্র আন্দোলনের মোট মামলা ১৭টি। মৌলভীবাজারে বৈষম্য বিরুধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা ওই মামলা দায়ের করেছে। মামলায় এজহারভুক্ত ও অজ্ঞাতসহ মোট আসামী করা হয়েছে ২ হাজার ৬শ’ জনকে। সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে মৌলভীবাজার সদর মডেল থানায়। এ থানায় মোট মামলা দায়ের করা হয়েছে ১৩টি। মামলায় মোট আসামীর সংখ্যা ২ হাজার ১শ ৪৮ জন। এ থানা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে মোট ১৮৫ জনকে।
অন্যান্য ৬টি থানার মধ্যে বড়লেখায় আবুল হাসান নামের এক শিক্ষার্থীর দায়ের করা ১ মামলায় এজহারভুক্ত ৪৬ জনসহ আসামী করা হয়েছে ১২৬ জনকে। এ মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন ১০ জন। জেলার কুলাউড়া থানায় পৃথক দুটি মামলায় এজহারভুক্ত ১০২ আসামীসহ আসামী করা হয়েছে ১৬২ জনকে। এ থানা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৫৫ জন আসামীকে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ গোলাম আফসার। এদিকে জুড়ী উপজেলায় ১ মামলায় ৬৪ জনের নামোল্যেখসহ আসামী করা হয়েছে ১৬৪ জনকে। আটক করা হয়েছে মাত্র ১২ জনকে। জেলার কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল ও রাজনগর উপজেলায় এ বিষয়ে কোন মামলা কেউ দেয়নি।
সব মিলিয়ে পুরো জেলা থেকে আসামী গ্রেফতার করা হয়েছে মোট ২৬০জন।
এদিকে মৌলভীবাজার শহরে ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের উপর হামলাকারী গ্রেফতার না হওয়ায় আতঙ্ক ও ভীতির মধ্যে আছেন ছাত্রনেতারা। এক ছাত্র নেতা বলেছেন, পুলিশ ইচ্ছে করেই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করছে না।
এদিকে গেল ৪ঠা আগষ্ট বৈষম্য বিরুধী ছাত্র আন্দোলের ছাত্রদের উপর হামলার ঘটনায় মৌলভীবাজার সদর মডেল থানায় দায়ের করা মামলার বাদী আব্দুল কাদির বলেন, ৪ আগষ্ট শহরের চৌমুহনায় ছাত্রদের উপর প্রকাশ্যে চিহ্নিত আ’লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়ে আমাদের ভাইদের আহত করেছে। কেউ কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ প্রশাসন আসামীদের পূণর্বাসন দিতে সর্বোচ্ছ সহযোগীতা করছে। এ জন্য তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না।
ঢাকায় যোগ দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মৌলবীবাজার জেলা সমর্থকগন। ফেইচবুক থেকে সংগৃহীত। |
তিনি আরও বলেন, ৪ঠা আগষ্টের আগে আমাদের ফেসবুক আইডি দেখে দেখে পুলিশ বাড়ি ঘর ঘেরাও করে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের আটক করেছিল। বিগত ১৫ বছর ধরে আ’লীগ নেতা-কর্মীদের সাথে পুলিশের একধরনের সুসম্পর্ক গড়ে উঠায় তাদের গ্রেফতার করতে এখন গরিমসি করা হচ্ছে।
এদিকে সম্প্রতি মৌলভীবাজার সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলার এক আসামী সাংবাদিক মামুনুর রশীদ। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, তিনি সাপ্তাহিক মুক্তকথা পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। মিথ্যা ও ভিত্তিহীন একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, কারা এ মামলা দিয়েছে এবং আমাকে আসামী করা হলো, আমি কিছুই জানিনা। তিনি বলেন, নির্দোষ-নিরীহ কেউ যেন মামলায় পড়ে না যায়, এটি পুলিশকে ন্যায্য দৃষ্টিতে আন্তরিকতার সাথে দেখতে হবে। তিনি মিথ্যা এ মামলা থেকে তার নাম বাদ দেয়ার জন্য পুলিশ প্রশাসনের প্রতি দাবী ও অনুরোধ জানান।
এদিকে কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে শনিবার রাত ৯টায় ফোনে কথা বললে তিনি এ বিষয়ে কোন তথ্য দিতে রাজি হননি। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, “পুলিশ সুপারের মিডিয়া সেল থেকে কমলগঞ্জের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে নেন”।
মৌলভীবাজার শহরের চৌমুহনায় ৪ঠা আগষ্ট ছাত্রদের উপর হামলাকারীদের ভিডিও ফুটেজ পাবার পরও কেন আসামীরা গ্রেফতার হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে মৌলভীবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গাজী মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা এ পর্যন্ত ১৮৫ জনকে গ্রেফতার করেছি। ভিডিও ফুটেজে ধারণকৃত হামলাকারীরা পলাতক থাকায় গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না। মূল আসামীদের ধরতে চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি। যারা বলেন আমরা প্রকৃত হামলাকারীদের আটক করছি না, তাদের উদ্দেশ্যে গাজী মাহবুবুর রহমান বলেন, ওই আসামীদের অবস্থান জানান দিতে, পুলিশ তাদের ধরে আনবে।