আব্দুল ওয়াদুদ।।
শুক্রবার, ১৪ই পৌষ ১৪২৩।। তিনদিনব্যাপী বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী উৎসব ও ব্যবসায়ী সম্মেলনের শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দি মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির আয়োজনে মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এর শুভ উদ্বোধন করেন, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
প্রধান অতিথি বিচারপতি বলেন, আমি এই সম্মেলনে আগত ভারতীয় ব্যবসায়ীদের আহবান জানাচ্ছি, আপনারা এখানে বিনিয়োগ করেন। আপনাদের যদি বিনিয়োগ করতে আইনের কোন বাঁধার মুখে পড়তে হয়। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে, বিদেশী বিনিয়োগ করতে কোন বাঁধা যাতে না হয় এ বিষয়ে আমি দেখবো এবং আইনী সহায়তা করবো।
তিনি আরও বলেন, এই অনুষ্ঠানে আমি শুনেছি মৌলভীবাজার কারাগারে মা-ছেলে মিলে দুজন ভারতীয় নাগরিক রয়েছে। যদি আপনাদের সেই নাগরিকদের নিয়ে যেতে চান তাহলে আমি বিচার বিভাগ থেকে যে সহযোগিতা প্রয়োজন সেটা করে দেবো।
প্রধান বক্তা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বাণিজ্য, শিক্ষা, শিল্প ও আইন মন্ত্রী তপন চক্রবর্তী শুরুতে মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা স্বিকার করেন। তিনি বলেন বাংলাদেশ হচ্ছে ত্রিপুরার এক এবং অভিন্ন প্রতিবেশী। দুটি দেশকেই হাত ধরে সামনের দিগে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন আমাদের ত্রিপুরা রাজ্যের ৩দিকেই বাংলাদেশের সীমানা থাকায় বাংলাদেশীদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অধিক প্রাধান্য পায়। কাজেই ব্যবসা-বানিজ্য বৃদ্ধির জন্য দুই দেশের স্থলবন্দরকে সংস্কার করতে হবে। অর্থনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করতে দু দেশের সীমান্ত এলাকায় আরো ব্যবসা বানিজ্য করতে পারি এ নিয়ে দু দেশকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আগরতলা-আখাউড়া রেল সংযোগ যাতে দ্রুত সম্পন্ন হয় সেই চেষ্টা চলানো হচ্ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, তিনটি কারনে আমার মৌলভীবাজার আসা। প্রথমতঃ প্রধান বিচারপতির কথা শুনা, ত্রিপুরার নের্তৃবৃন্দকে স্বাগত জানানো ও মৌলভীবাজার চেম্বারের কর্মসুচি দেখা। আমি জাতি সংঘে কাজ করেছি। এর সুবাদে ১৯৩টি দেশের সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। তিনি বলেন, উন্নয়নের অক্সিজেন হলো রাজস্ব। কাজেই দূর্নীতি ও চোরাচালানা রাজস্ব বোর্ডের বড় শত্র“। আর এই রাজস্বের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন আভ্যন্তরীন সম্পদ দিয়েই আমরা দেশের উন্নয়ন করবো। কাজেই তুমি রাজস্ব বোর্ডে কাজ কর।
সভাপতির বক্তব্যে দি মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি মো. কামাল হোসেন বলেন, চেম্বার কর্তৃক এই বাণিজ্য সম্মেলন আয়োজনের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ভারতের সাথে এই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের কিভাবে প্রসার ঘটানো যায়। সিলেট বিভাগের সীমান্তের ওপারে রয়েছে ভারতের ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয়, মণিপুর, কৈলাসহর ইত্যাদি এলাকার অবস্থান। তাই মৌলভীবাজারের শেরপুরে হতে পারে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইকোনোমিক জোন। মৌলভীবাজারে রয়েছে দেশের সবচেয়ে বেশী চা বাগান, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, হামহাম জলপ্রপাত, হাকালুকি, বাইক্কা বিলসহ অসংখ্য হাওর। যেসব হাওরের মিটা পানি থেকে সুস্বাদু মাছ পাওয়া যায়। যা পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায়না। এসব বিবেচনা করে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আজকের এই আয়োজন বলে তিনি জানান। তিনি ত্রিপুরাসহ ভারতের ব্যবসায়ীদের মৌলভীবাজারের শেরপুরে অবস্থিত ইকোনমিক জোনে ব্যবসায় অংশগ্রহনের আহবান জানান। এর আগে প্রধান অতিথিসহ আগত অতিথিরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের উদ্দেশ্যে পুষ্পস্তবক অর্পন ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর দু’দেশের জাতীয় সঙ্গীতের সাথে সাথে পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে মৈত্রী উৎসব ও ব্যবসায়ী সম্মেলনের শুভ উদ্বোধন করা হয়।
দি মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. কামাল হোসেন এর সভাপতিত্বে উৎসবে প্রধান বক্তা ছিলেন, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বাণিজ্য, শিক্ষা, শিল্প ও আইন মন্ত্রী তপন চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিছবাহ উদ্দিন সিরাজ, সংসদ সদস্য সাবিহা নাহার বেগম, বিভাগীয় পুলিশ কমিশনার কামরুল আহসান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সদস্য রফিকুর রহমান, জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহ জালাল, নারী উদ্যোক্তা আয়েশা আক্তার ডালিয়া, সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সালাউদ্দিন আলী আহমদ, পৌর মেয়র ফজলুর রহমান, জেলা আইনজীবী সমিতি সভাপতি এডভোকেট কামাল উদ্দিন চৌধুরী, দৈনিক উত্তর ত্রিপুরা পত্রিকার সম্পাদক ও মৈত্রী উৎসব উদযাপন পরিষদ সমন্বয়ক মোহিত পাল প্রমুখ।