ঢাকা, ১০ আগস্ট: বয়স মাত্র চার। কিন্তু তাকে দেখলে মনে হয় ৮০ বছরের বৃদ্ধ। এমনই এক জটিল রোগে আক্রান্ত বাংলাদেশের মাগুরা জেলার প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম নেওয়া বায়েজিদ শিকদার। মাত্র চার বছর বয়সে বৃদ্ধদের মতো তার হাত, পা ও মুখের চামড়া ঝুলে গিয়েছে। হাত ও পায়ের গঠনও বৃদ্ধ মানুষের মতো হয়ে গিয়েছে। একইসঙ্গে শিশুটি ঠিকমতো শুনতে ও কথা বলতেও পারে না।
ঢাকার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভরতি বায়েজিদের রোগ দেখে চিকিৎসকরাও অবাক হচ্ছেন। চিকিৎসকরা প্রাথমিকভাবে মনে করছেন, শিশুটি ‘প্রোজেরিয়া’ জাতীয় রোগে আক্রান্ত। এটা একটা বিরল জিনগত রোগ। প্রতি এক কোটি মানুষের মধ্যে একজনের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এদিকে বায়েজিদের খবর বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর আলোড়ন পড়ে যায়। শিশুটিকে দেখতে তার বাড়িতে মানুষজন ভিড় করতে থাকেন। বায়েজিদের চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়া সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। শিশুটির বাবা লাভলু শিকদারের কথায়, তাঁর ছেলে অলরাউন্ডার। ফুটবল ও ক্রিকেট খেলতে পারে। আয়নার সামনে গিয়ে মাথা নাড়তে পারে। তার মাথা কোনটা হাত দিয়ে দেখাতে পারে। একইভাবে কান, নাক, মুখ কোনটা বলতে পারে। গাড়ি কেমন শব্দ করে চলে, তা মুখ ও অঙ্গভঙ্গি করে দেখাতে পারে। ছেলের বুড়ো মানুষের মতো চেহারা ছাড়া আর কোনও সমস্যা নেই। বায়েজিদের মা বলেন, তাঁর ছেলের জন্মের পর কোনও সমস্যা ছিল না। কিন্তু ওর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক গঠন বদলে যেতে থাকে। আস্তে আস্তে বয়স্ক মানুষের মতো হতে থাকে। মাত্র ৯ মাসের মধ্যে দাঁত ওঠে। লাভলু শিকদার বলেন, বায়েজিদ ভাত, মাছ ও মাংস খেতে ভালোবাসে। চকলেট ও অন্যান্য খাবার তেমন পছন্দ নয়। স্কুলে যেতে চায়। তিনি বলেন, এই চার বছরে ছেলের চিকিৎসার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছেন। চিকিৎসকরা যেমন বলেছেন সেই অনুযায়ী তার চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু কোনও সমাধান হয়নি। এরপর মাগুরা হাসপাতালের চিকিৎসক দেবাশিস বিশ্বাসের মতামত নিয়ে ছেলেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভরতি করিয়েছি।
এদিকে চিকিৎসকরা শিশুটির কিছু পরীক্ষা করে দেখেন যে তার হৃদযন্ত্র, কান, চোখ ও লিঙ্গের সমস্যা রয়েছে। জিনগত কারণে শিশুটি এই বিরলতম রোগের শিকার বলে জানানো হয়েছে। তাকে সর্বক্ষণ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তার চিকিৎসা চলছে। (এএফপি’র পাঠানো খবর বর্তমান প্রকাশ করেছে)