সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক
তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন।
ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি, বিশ্বাস ভঙ্গ ও শেখ হাসিনা সরকারকে অনৈতিক সুবিধা দেয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার আবেদন করেছেন ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইমরুল হাসান।
গত রোববার ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক দিলরুবা আফরোজ তিথির আদালতে এ আবেদনটি করা হয়। আদালত আবেদনটি গ্রহণ করে পরে আদেশ দিবেন বলে জানান। আইনজীবী ইমরুল হাসান একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহালের প্রকৃত রায় পরিবর্তন করে জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করেন। তিনি পূর্ণাঙ্গ রায় পাল্টে দেন। এর মধ্যে দিয়ে তিনি জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২০/৪০৬/৪৬৭/৪৬৮ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
আদালত মামলাটি গ্রহণ করেছেন। এ বিষয়ে পরে আদেশ দিবেন বলে জানিয়েছেন। মামলার আবেদনে বলা হয়, ‘২০১৪ইং সনের নির্বাচন আগাইয়া আসিলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে চিরকাল ক্ষমতায রাখার জন্য সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী রায়ের ১৬ মাস ০৩ দিন পর পরে তথা বিগত ১৩-০৯-২০১২ ইং তারিখে পূর্নাঙ্গ রায়ে স্বাক্ষর করেন।
ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলায় প্রকাশ্যে আদালতে ঘোষিত রায়ে সুপ্রিম কোর্ট দুই মেয়াদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পথ খোলা রেখেছিল। কিন্তু প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক ১৬ মাস ০৩ দিন পর যে রায় প্রকাশ করলেন সেখানে তিনি এ অংশটি রাখেননি। আপিল বিভাগের দুই জন বিচারপতি এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। দৃশ্যত আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তই অনুসরণ করেছিলেন খায়রুল হক। বিচারপতি খায়রুল হকের এ রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমীন চৌধুরী। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্টে এক আলোচনা সভায় এ নিয়ে কথা বলেন তিনি। যদিও বিচারপতি খায়রুল হকের নাম মুখে নেননি।
বিচারপতি মাহমুদুল আমিন চৌধুরী বলেছিলেন, পদ্ধতিগত কারণে আপিল বিভাগের রায়ে দেরি হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে সেটা যৌক্তিক সময়, যেমন এক মাসের মধ্যে হতে পারে। কিছুতেই এক থেকে দেড় বছর হতে পারে না। আর অবশ্যই পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদেশের কোন অংশ কোনোভাবেই পরিবর্তন করা যাবে না। সেটা করতে গেলে পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন ও শুনানি হতে হবে। কিন্তু তা না করেই যদি রাতের অন্ধকারে, এক থেকে দেড় বছর পর রায় পরিবর্তন করে ফেলেন, তাহলে সেটা ফৌজদারি অপরাধ।
মাহমুদুল আমীন চৌধুরীর এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় দেয়া এক স্বাক্ষাৎকারে বলেন, রায়ে এ ধরনের পরিবর্তন ফৌজদারি অপরাধ। আবেদনে আরো বলা হয়, বিচারকদের ওপর অর্পিত দায়িত্বের মূল হলো আস্থা ও বিশ্বাস। অভিযুক্ত প্রধান বিচারপতির পদে আধিপত্যের ভারপ্রাপ্ত হইয়া সেই পদকে ইচ্ছামত নিজের পছন্দের দলকে চিরকালের জন্য ক্ষমতায় বসিয়ে রাখার জন্য নির্বাচনহীন একটি প্রহসনের দেশ তৈরী করার জন্য অসাধুভাবে প্রধান বিচারপতির পদ ব্যবহার করিয়া ঘোষিত রায় পরিবর্তন করা ফৌজদারি অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ এবং পুরো জাতির সাথে প্রতারণা করেছেন।
বিধায় দণ্ডবিধি আইনের ৪২০/৪০৬ ধারায়, বাংলাদেশের জনগণের ক্ষতি বা অনিষ্ট করার জন্য প্রকাশিত রায় আইনিপন্থা ব্যাতিরেকে অর্থাৎ কোন রিভিউ পিটিশন ছাড়াই অত্র রায়ের অংশবিশেষ বাতিল করে ১৬ মাস ০৩ দিন পর চাকরি না থাকা অবস্থায় স্বাক্ষর করে রায় প্রচার করায় দ:বি: আইনের ৪৬৭/৪৬৮ ধারায় অপরাধ করিয়াছে।