স্কটল্যাণ্ডের হোলিরুডে ঈদুল আজহার অভ্যর্থনা
এ যেনো আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এক স্কটল্যান্ডের আহ্বান।
এখনো আমাদের সমাজে বর্ণবাদ ও বৈষম্য বিদ্যমান-
-ফয়সল চৌধুরী, এমএসপি
বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন, স্কটিশ পার্লামেন্ট একটি সর্বদলীয় ঈদুল আজহার অভ্যর্থনার আয়োজন করে, যা ইসলামি ক্যালেন্ডারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। সন্ধ্যাটি ছিল চিন্তন, সংহতি ও যৌথ উদ্দেশ্যের প্রতীক।
অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়েছিল ফয়ছল চৌধুরী এমএসপি(লেবার), ড. পাম গোসাল এমএসপি(কনজারভেটিভ) এবং উইলি রেনি এমএসপি(লিবারেল ডেমোক্র্যাট)-এর পৃষ্ঠপোষকতায়। অনুষ্ঠানটি গার্ডেন লবিতে অনুষ্ঠিত হয় এবং এতে অংশগ্রহণ করেন এমএসপি, কূটনীতিক, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা, যারা স্কটল্যান্ডের মুসলিম সম্প্রদায়ের অবদানকে স্বীকৃতি দেন এবং সমতা ও অন্তর্ভুক্তির প্রতি পার্লামেন্টের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
ফয়ছল চৌধুরী এমএসপি বলেন- “এমন অনুষ্ঠানগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আমাদের বৈচিত্র্যকে উদযাপন করতে হবে এবং একটি আরও সহনশীল স্কটল্যান্ডের দিকে একসঙ্গে অগ্রসর হতে হবে। এখনো আমাদের সমাজে বর্ণবাদ ও বৈষম্য বিদ্যমান এবং এটি আমাদের সম্মিলিত দায়িত্ব যে আমরা এমন একটি দেশ গড়ে তুলি, যেখানে সকল মানুষ, তাদের পটভূমি যাই হোক না কেন, সমানভাবে বিকশিত হতে পারে।”
অনুষ্ঠানে ব্যাপক সমর্থন দেখা যায়, যাঁদের মধ্যে ছিলেন নিল বিবি, লিয়াম কের, শ্যারন ডোয়ে, প্যাট্রিক হারভি(স্কটিশ গ্রিন পার্টির সহ-নেতা), কাউকাব স্টুয়ার্ট(সমতা বিষয়ক মন্ত্রী) এবং সদ্য নির্বাচিত ডেভি রাসেল—যাঁরা সবাই একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুবাদী স্কটল্যান্ডের প্রতি সমর্থন জানান।
বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুম্মার জাভেদ, গ্লাসগোতে পাকিস্তানের কনসাল জেনারেল; তুরস্কের ডেপুটি কনসাল জেনারেল এবং ড. আদরিস, মুসলিম কাউন্সিল অব স্কটল্যান্ড-এর চেয়ার—যাঁরা এই অনুষ্ঠানের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বকে তুলে ধরেন।
![]() |
স্কটল্যান্ডের প্রথম মন্ত্রী(First Minister), মাননীয় জন সুইনি এমএসপি বলেন- “আজ পার্লামেন্টে ফয়ছল ও আমি স্কটল্যান্ডে সদয়তা, অন্তর্ভুক্তি ও সহনশীলতার অগ্রদূত স্যার জিওফ পামারের উত্তরাধিকারের কথা স্মরণ করেছি। তাঁর চেতনা অনুসরণ করে আমি আবারও জানাতে চাই, আমি এমন একটি স্কটল্যান্ডে বিশ্বাস করি যেখানে সব পটভূমির মানুষ একত্রিত হয়ে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বোঝাপড়া ও সামষ্টিক কল্যাণের ভিত্তিতে সমাজ গড়ে তোলে।”
তিনি আরও বলেন- “যখন মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকে উদ্বেগ ও ভয়ের মধ্যে রয়েছেন, তখন আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই- স্কটল্যান্ডের প্রথম মন্ত্রী হিসেবে, আমি এমন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক স্কটল্যান্ডে বিশ্বাস করি যেখানে সব সম্প্রদায়ের মানুষ ঐক্য ও সৌহার্দ্যের ভিত্তিতে একটি যৌথ সমাজ গড়ে তোলতে পারবে।”
ফয়ছল চৌধুরী তাঁর শুভেচ্ছা জানান তাঁদের, যারা উপস্থিত থাকতে পারেননি—যাঁদের মধ্যে ছিলেন এলিসন জনস্টোন(প্রেসাইডিং অফিসার), রাসেল ফিন্ডলে এমএসপি(স্কটিশ কনসারভেটিভ পার্টির নেতা) এবং আনাস সারওয়ার এমএসপি(লেবার পার্টির নেতা)—যাঁরা নাগরিক সম্পৃক্ততা, সামাজিক সংহতি ও ন্যায়বিচারের প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন।
তিনি বলেন- “২০২১ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আমি বর্ণবাদবিরোধী শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। আমি এটি করি রেসিয়াল ও রিলিজিয়াস প্রেজুডিস সংক্রান্ত সর্বদলীয় গ্রুপের মাধ্যমে অথবা সম্প্রদায়ভিত্তিক এমন আয়োজনের মাধ্যমে, যা মানুষকে তাদের ঐতিহ্য উদযাপনে একত্র করে। এটি আমার হৃদয়ের খুব কাছের একটি বিষয় এবং আমি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সহানুভূতিশীল স্কটল্যান্ড গঠনে কাজ চালিয়ে যাব।”
অনুষ্ঠানটি মুসলিম কাউন্সিল অব স্কটল্যান্ড এবং গ্লাসগোতে পাকিস্তান কনস্যুলেটের সহযোগিতায় আয়োজিত হয়। এটি ছিল এক শক্তিশালী বার্তা—যে পাবলিক ইনস্টিটিউশনগুলো ঐক্য গড়ে তুলতে পারে, বিশেষ করে বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার সময়ে।
উপসংহারে উইলি রেনি বলেন- “আজকের রাতটি বৈচিত্র্য ও ঐক্যের প্রতীক। ফয়ছল যদি পার্লামেন্টে না থাকতেন, তবে এ কণ্ঠস্বর এতটা শক্তিশালী হতো না।”