লন্ডন: রোববার, ২রা পৌষ ১৪২৩।। বিশেষজ্ঞদের হিসেবে ২০ হাজার মানুষের বাসস্থান ছিল এই ভূগর্ভস্ত “দেরিনকুয়ু” শহরে। শুধু কি তাই, খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় পাকশালা থেকে শুরু করে ঘোড়াশালা, গীর্জা, সৌধ, স্কুল এমনকি সাধারণের ব্যবহারের বৈঠকখানাও ছিল এবং এখনও আছে ওই ভূগর্ভস্ত শহরে।
২০১৫ সালের ২৬শে মার্চ “জাতীয় ভূগোল” খবরটি ছাপায়। তারও আগে ২৮শে ডিসেম্বর ২০১৪ সালে “মুলত প্রাচীন” নামের একটি ওয়েব সাইট প্রকাশ করেছিল।
সাড়ে তিন মাইল বা ৭ কিলোমিটার লম্বা ভূ-গর্ভস্ত ‘টানেল’, এ সব কিছুই অবাক করার মত।
আবিষ্কারের পর পরই ২০১৪ সালের তুর্কির “হুরিয়াৎ” পত্রিকা বলেছিল কাপ্পাদোসিয়া অঞ্চলের নেবশেহির দূর্গের নিচে এবং আশ-পাশ এলাকা নিয়ে বিস্তৃত দুনিয়ার সবচেয়ে প্রাচীনতম ভূ-গর্ভস্ত শহর পাওয়া গিয়াছে যা কম করে হলেও ৫ হাজার বছর আগের।
তুর্কির “বাড়ীঘর উন্নয়ন প্রশাসন” কর্তৃক নতুন বাড়ীঘর নির্মাণের উদ্দেশ্যে ওই দূর্গ এলাকার প্রায় ১৫শত পুরনো দালাল ভাঙ্গার পর এই শহরের দেখা পাওয়া যায়। এই “নেবশেহির” প্রদেশের “দেরিনকুয়ু” এলাকায় ইতিপূর্বেও ভূ-গর্ভস্ত শহর আবিষ্কৃত হয়েছিল। যেখানে একসাথে প্রায় ২০ হাজার মানুষ বসবাসের উপযোগী ব্যবস্থা আছে। ওটি প্রায় ১১ তলা পরিমাপে গভীর। এখানে ৬০০ টি প্রবেশ পথ আছে এবং লম্বা লম্বা ভূ-গর্ভস্ত রাস্তা দিয়ে দূরের অন্যান্য ভূ-গর্ভস্ত শহরের সাথে যোগ করার রাস্তাও পাওয়া যায়। এখন এগুলো দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ পুরাকীর্তি ও দর্শনীয় স্থান। বিশেষজ্ঞদের মতে “নেভশেহির”এর এই শেষের আবিষ্কার, অচিন্তনীয়! হাজার হাজার বছর লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা দুনিয়ার বৃহত্তম ভূ-গর্ভস্ত একটি শহরকে মানুষের সামনে তুলে আনা হয়েছে।
নতুন শহর গড়ে তুলতে গিয়ে এ পর্যন্ত সরকারের খরচ হয়েছে ৯০ মিলিয়ন তুর্কি লিরা। এখন বাড়ী নির্মাণ প্রকল্পের কাজ অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হবে। এই এলাকাকে জাতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষন বোর্ডের তালিকাভুক্ত করা হবে। “তুর্কির বাড়ী-ঘর উন্নয়ন প্রশাসন” বলেছেন এ খরচ তাদের জন্য কোন ক্ষতি নয় বরং এই খরচের বিনিময়ে তারা পেয়েছেন দুনিয়ার সেরা ভূ-গর্ভস্ত শহর যা পৃথিবীর আর কোথায়ও আছে বলে তাদের জানা নেই।
যুগের পর যুগ, কালের আসা যাওয়ায় কত মানুষের পদস্পর্শে ধন্য হয়েছে আনাতোলিয়া রাজ্যের এই ‘কাপ্পাদোসিয়া’ অঞ্চল। হিটাইট থেকে শুরু করে পারসিয়ান, মহাবীর আলেক্সান্ডার, রোম, বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য, ওট্টোমান সাম্রাজ্য আর এখন তুরস্ক। সকলেই শাসন করেছেন অনিন্দ্যসুন্দর এই কাপ্পাদোসিয়া। একশত বর্গমাইল এলাকার মধ্যে ২শ’য়েরো অধিক ভূ-গর্ভস্ত গ্রাম আর যোগাযোগের রাস্তা নিয়ে শহরময় এই গুহাবাসী সভ্যতা সত্যই পৃথিবীর অনেক কিছুর চেয়ে সেরা ও আলাদা এক দৃষ্টিনন্দন মাধুর্য্যে ভরপুর!