বস্তার সুত্র ধরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অজ্ঞাত পরিচয়ে উদ্ধার হওয়া লাশের পরিচয় সনাক্ত করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ ঘটনার মুল আসামী খুনী মসুদ মিয়া(৫২)কে আটক করেছে।গতরাতে শহরের আশিদ্রোন ইউনিয়নের রামনগর(জোড়া পুল) নিজ বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়। আটককৃত মসুদ মিয়া ওই এলাকার মৃত এখলাছ মিয়ার পুত্র এবং নিহত ডলি আক্তার(২৮) আসামী মসুদ মিয়ার ৪র্থ স্ত্রী। নিহত ডলি আক্তার ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বধনপুর এলাকায় মৃত ফেলু মন্ডলের মেয়ে। বুধবার(১৯ মে) দুপুর ১টার দিকে পুলিশ সুপার কার্যালয় হলরুমে মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া প্রেস ব্রিফিংয়ে হত্যার মূল ঘটনা তোলে ধরেন।
গত মঙ্গলবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সিন্দুর খান ইউনিয়নের উদনার ছড়া সেতুর নিচে একটি সাদা রংয়ের প্লাস্টিকের বস্তার ভিতর পা বাধা অবস্থায় অজ্ঞাতনামা মহিলার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ সুপার জানান, মঙ্গলবার সকাল অনুমান ৯.২০ ঘটিকার সময় এসআই/মুহাম্মদ আসাদুর রহমান শ্রীমঙ্গল থানাধীন ৪নং সিন্দুরখান ইউনিয়নের অন্তর্গত পশ্চিম বেলতলী সাকিনস্থ উদনার ছড়া ব্রিজের নিচে একটি সাদা রংয়ের প্লাস্টিকের বস্তার ভিতর পা বাধা অবস্থায় অজ্ঞাতনামা মহিলার লাশ পান। উক্ত ঘটনায় রুজুকৃত মামলার তদন্তকারী অফিসার পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) জনাব মোঃ হুমায়ুন কবির বস্তায় লিখা “মোঃ অনিক শ্রীমঙ্গল” এর সূত্র ধরে সাইফুর রহমান মার্কেটের পুরাতন কাপড় ব্যবসায়ী অনিক এবং তার ভাই জুয়েল মিয়াকে সনাক্ত করেন।
সংবাদ সম্মেলন শেষে অভিযুক্ত মসুদ মিয়াকে পুলিশ নিয়ে যাচ্ছে। ছবি: মুক্তকথা
তারা জানান যে, গত মঙ্গলবার রাত ৮:১৫ ঘটিকায় গ্রেফতারকৃত আসামী মসুদ মিয়া উক্ত বস্তাটি চা পাতা ভরার কথা বলে তাদের কাছ থেকে নিয়ে যায়। আসামী মসুদ মিয়া একজন সুদের ব্যবসায়ী। সে ৪/৫ টি বিবাহ করেছে। মসুদ মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় অজ্ঞাতনামা মৃত মহিলা তাহার ৪র্থ স্ত্রী ডলি আক্তার। গত ৭/৮ মাস পূর্বে ঝিনাইদহ সদর থানায় বধনপুর গ্রামের মৃত ফেলু মন্ডলের মেয়ে ডলি আক্তারের সাথে শ্রীমঙ্গল নতুনবাজারে পরিচয় সুবাধে বিবাহ হয়। সিন্দুরখান রোডের আসামীর বসতঘরে ডলি আক্তার এবং আসামী মসুদ মিয়া ঘর সংসার করে আসছে। বিভিন্ন মেয়েদের সাথে তার পরকিয়ার সম্পর্ক রয়েছে। তার ঘরে বিভিন্ন ধরনের যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট পাওয়া যায়।
তদন্তকালে জানা যায় গত ১৭/০৫/২১খ্রিঃ আসামী মসুদ মিয়ার সহিত ডলি আক্তারের ঝগড়া বিবাদ হয়। ঐ দিন রাত অনুমান ৩:৩০ ঘটিকায় আসামী মসুদ মিয়া তার স্ত্রী ডলি আক্তার (২৮)কে কাপড়/রশি দিয়া গলায় ফাঁস লাগিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। পরে মসুদ মিয়া মৃত ডলি আক্তারকে বস্তাবন্দি করে। রাত প্রায় ৮:০৫ ঘটিকায় সিন্দুরখান রোডের সিএনজি স্ট্যান্ড ম্যানেজার মনফর মিয়াকে ফোন দিয়ে একটি সিএনজি পাঠানোর কথা বলে। মনফর মিয়া সিএনজি ড্রাইভার বেলাল মিয়াকে আসামী মসুদ মিয়ার বাড়িতে পাঠান। মসুদের বাড়িতে বেলাল উপস্থিত হলে বস্তাটি গাড়িতে তুলতে বলে। বেলাল মিয়া বস্তার ভিতর কি আছে জিজ্ঞাসা করলে মসুদ মিয়া কোন উত্তর দেয় না। একপযায়ে সিএনজি গাড়িটি মসুদ মিয়ার নির্দেশে বেলাল মিয়া হুগলিয়া বাজারের দিকে যেতে থাকে। হুগলিয়া বাজারে যাওয়ার সময় বস্তাটি উদনাছড়া ব্রিজের উপর হতে নিচে ফেলে দেয়। বেলাল মিয়া আবারও বস্তার ভিতরে কি আছে জিজ্ঞাসা করলে মসুদ মিয়া জানায় বস্তার ভিতর গরুর মৃত বাছুর রয়েছে। লাশ ভর্তি বস্তাটি আসামী মসুদ মিয়াকে দেখালে তিনি জানান যে, বস্তাটি সে অনিক এবং জুয়েল এর কাছ থেকে নিয়েছিল মর্মে স্বীকার করে। কোনো স্ত্রীর সাথেই তার দাম্পত্য জীবন ভাল ছিল না।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(অপরাধ), হাসান মোহাম্মদ নাছের রিকাবদার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর), এ,বি,এম, মোজাহিদুল ইসলাম(পিপিএম), সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আশরাফুজ্জামান, শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুছ ছালেক প্রমুখ।
|