হারুনূর রশীদ।। আসলেই কি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অবনতি ঘটতে চলেছে। ভারতের ‘নয়া নাগরিকত্ব আইন’, পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশকে একই পাল্লায় রেখে ভারতের মন্ত্রী অমিত শাহের বার বার সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা বলা, নতুন করে আবারো ভারত থেকে বাংলাদেশে শরণার্থী যাওয়ার আশংকা, এমনকি সাম্প্রতিক শেখ হাসিনার কলকাতা সফরের সময় দিল্লীর কোনও প্রতিনিধির উপস্থিত না থাকা, এমনকি আজ অবদি তিস্তা পানি বন্টনের কোন সুরাহা না হওয়া; সর্বোপরি অতি সম্প্রতি তিন তিনজন বাংলাদেশী মন্ত্রীর ভারত সফর বাতিল প্রভৃতি কারণে বিশেষজ্ঞমহল মনে করছেন যে দু’দেশের সম্পর্কে একটা চির ধরতে শুরু করেছে। আর এমনটাই খুব রসিয়ে লিখেছে ভারতের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সংবাদপত্র আনন্দবাজার পত্রিকা।
আগামীকাল সোমবার থেকে দিল্লীতে শুরু হতে চলেছে এ বছরের প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘রাইসিনা আলোচনা’। বাংলাদেশের শুধু প্রতিনিধিত্ব নয় আলোচনার প্রধান বক্তা হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি যেতে পারবেন না বলে ঢাকা থেকে জানানো হলে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু তিনিও যেতে পারবেন না বলে ঢাকার সরকারী সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার এ খবর দিয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে এ আলোচনায় বাংলাদেশের অনুমেয় অনুপস্থিতিকে সামনে রেখে আনন্দবাজার একে লক্ষ্যনীয় তিক্ততা বলে অভিহিত করেছে। লিখেছে ২০০৯ সালে ভোটে জিত নিয়ে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পরে ভারত-বাংলাদেশের এমন তিক্ততা আগে কখনও দেখা যায়নি। কোন কারণেই অতীতে কখনও বাংলাদেশ পক্ষের ভারত সফর বাতিল হয়নি।
কূটনীতিকদের সূত্রে জানা তার প্রধান প্রধান কারণগুলির মধ্যে ‘নয়া নাগরিকত্ব আইন পাশ করার বিষয়’ একটি। পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশকে একই ভাবে দেখে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বার বার সে সব দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের উল্লেখ এবং রোহিঙ্গার পর নতুনকরে আবার ভারত থেকে বাংলাদেশে শরণার্থী যাওয়ার আশঙ্কা আরেকটি। এ ছাড়াও শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক কলকাতা সফরে কেন্দ্রের কোনও প্রতিনিধির উপস্থিত না থাকা, এ সমূহ অবস্থা ও মতামতের উপর ভিত্তি করে আনন্দবাজার মনে করছে সারা বাংলাদেশে ভারত বিরুধীতার একটি ঢেউ ধীরে ধীরে তৈরী হয়েছে। আর এসবের ফলেই সম্প্রতি তিন তিন জন বাংলাদেশের মন্ত্রী এবং সরকারি প্রতিনিধির ভারত সফর বাতিল করে দিয়েছেন ঢাকা নেতৃত্ব। কিন্তু তার পরে সম্পর্ক কিছুটা সহজ করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বছরের প্রথম দিন ফোন করেন হাসিনাকে। দুই নেতার মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় হয়। এসময় আগামী ১৭ মার্চ থেকে বাংলাদেশে শুরু হতে চলা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের সাফল্যও কামনা করেন মোদী। কিন্তু তাতে যে চিঁড়ে ভিজছে না, সেটা স্পষ্ট বলে মন্তব্য করেছে আনন্দবাজার।