গত ২২ সেপ্টেম্বর ‘জেলায় চোখ ওঠা রোগের প্রকোপ’ শিরোনামে মুক্তকথায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেই থেকে শুরু করে অদ্যাবদি খুব ধীর গতিতে হলেও এ রোগের যন্ত্রণা কমছে না ববং চলমান রয়েছে। কোনভাবে নিরসন হচ্ছেনা। অদ্য ১ অক্টোবর শনিবার, ২০২২ইং মৌলবীবাজার থেকে ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি জানাচ্ছেন যে, মৌলবীবাজারে চোখ উঠা রোগের প্রকোপ বাড়ছে। তিনি লিখেছেন-
মৌলভীবাজারে বাড়ছে চোখ উঠা বা চোখের প্রদাহ রোগীর সংখ্যা। আক্রান্তদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। তবে সব বয়সের মানুষকেই আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। প্রত্যেকটি এলাকায় এই রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই স্থানীয় হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে বেড়েছে এ রোগীর সংখ্যা। দেখা দিয়েছে চোখে ব্যবহৃত ড্রপ সংকট।
চিকিৎসকরা বলছেন, গরমে আর বর্ষায় চোখ উঠার প্রকোপ বাড়ে। একে বলা হয় ‘কনজাংটিভাইটিস’ বা চোখের আবরণ প্রদাহ। সমস্যাটি চোখ ওঠা নামেই পরিচিত। রোগটি ছোঁয়াছে। ফলে দ্রুত অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
মৌলভীবাজার বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, আউটডোরে দেখানো রোগীদের ৪০ শতাংশই এই ‘চোখের আবরণ প্রদাহ’ রোগী। তবে এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা বেশি। ‘কনজাংটিভাইটিস’ রোগটি আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে ছড়ায়। রোগীর ব্যবহার্য রুমাল, তোয়ালে, বালিশ অন্যরা ব্যবহার করলে এতে আক্রান্ত হয়।
|
তিনি বলেন, অপরিষ্কার বা নোংরা জীবনযাপন চোখ ওঠার অন্যতম কারণ। চোখ ওঠা রোগে চোখ লাল হয়ে যায়। আর এমনটি হয় এই ‘কনজাঙ্কটিভার’ রক্তনালিগুলো প্রদাহর কারণে ফুলে বড় হয়ে যাওয়া এবং তাতে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ার কারণে। ঘুম থেকে ওঠলে চোখ আঠা আঠা লাগা, সব সময় চোখের ভেতর কিছু একটা পড়েছে এমন অনুভূতি, চোখ চুলকানো এবং জ্বালাপোড়া করা, আলোর দিকে তাকালে অস্বস্তি লাগা, সবকিছু ঘোলা ঘোলা দেখা, চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখের কোনায় ময়লা জমা, চোখ ফুলে যাওয়া চোখ ওঠার লক্ষণ। দৃষ্টি ঝাঁপসা হলে, চোখ খুব বেশি লাল হলে, খুব বেশি চুলকালে বা অতিরিক্ত ফুলে গেলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার একজন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী আয়শা জান্নাত বলেন, চোখ ওঠার পর থেকেই চোখে কাটা কাটা লাগে এবং চুলকায়। আলোর দিকে থাকাতে পারি না। ঘুম থেকে উঠে দেখি দুই চোখ জট লেগে আছে।
অপর একজন দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র সামির আহমদ জামি বলেন, চার দিন আগে প্রথমে আমার চোখ ওঠে। দুই দিন পরে আমার আপুরও চোখ ওঠে। চোখ ওঠার পর পরিবারের পক্ষ থেকেই আমাদেরকে স্কুলে যেতে নিষেধ করা হয়।
রাজনগর উপজেলার হংসখলা গ্রামের দয়াময় দেব বলেন, আমার চোখে সমস্যা দেখা দিলে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে ড্রপ পাওয়া যায়নি। পরে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন ফার্মেসিতে গিয়েও পাইনি। অতঃপর অনেক খোঁজাখুজি করে মৌলভীবাজার শহরের একটি ফার্মেসিতে পাই।
জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ির আবিদ হোসাইন বলেন, প্রথমে আমাদের বাড়ির এক শিশু আক্রান্ত হয়। তারপরই আমি আক্রান্ত হয়ে যাই। ফোনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ড্রপ ব্যবহার করেছি। এখন কমতে শুরু করেছে। আমাদের গ্রামেই প্রায় ৫০ জনের মতো আক্রান্ত আছেন। একজনের কাছ থেকে আরেকজন আক্রান্ত হচ্ছেন।
সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দীন মুর্শেদ বলেন, চোখ উঠা রোগকে আমরা ‘ভাইরাস কনজাংটিভাইটিস’ বলে থাকি। এটি ঋতুভিত্তিক একটি রোগ। গরমে এই রোগ বেশী হয়। ঋতু পরিবর্তনের ফলে এই ‘ভাইরাস ইনফেকশন’ হচ্ছে। ফোটা(ড্রপ) সংকটের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল গুলোতে ‘ড্রপ’ বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।
|