মৌলভীবাজার জেলায় ৯২টি চা বাগান ছাড়া অন্যান্য এলাকায় সকাল থেকে ভোটার উপস্থিতি একেবারেই কম ছিল। মৌলভীবাজার-৩ আসনে(সদর ও রাজনগর উপজেলা) ভোটার উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। তবে চা বাগানে ভোটারের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। মৌলভীবাজার-২ আসনের একটি ভোট কেন্দ্রে সকাল ৯টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত ৫টি বুথে ৫৪টি ভোট প্রয়োগ হয়। উপজেলার ভুকশিমইল স্কুল এন্ড কলেজে ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ৫ শ ৪৩ জন। এই কেন্দ্রে ৮টা থেকে সকাল ৯টা ৪৫ পর্যন্ত ১শ ৫৭টি ভোট পড়ে। একই আসনের মনসুরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ হাজার ২শ ৩৩টি। এই কেন্দ্রের ১০টি বুথে সকাল ১০টা পর্যন্ত ভোট প্রয়োগ হয়েছে মাত্র ১৭৬টি। তবে চা বাগান এলাকায় ভোটার সংখ্যা অনেকটা বেশি। জেলার ৪টি আসনের সবক’টি চা বাগানে নারী পুরুষ ভোটারদের উপস্থিত ছিল লক্ষনীয়। মৌলভীবাজার-৩ আসনের(কুলাউড়া) লংলা চা বাগান বিদ্যালয়ে সকাল সাড়ে ১১টায় গেলে ভোটারদের সারিবদ্ধ হয়ে ভোট দিতে দেখা গেছে। এখানকার প্রিজাইডিং অফিসার জানান, ১০টি বুথের ৪ হাজার ৩শ ২৬ ভোটারের মধ্যে ৫শ ৮৩টি ভোট প্রয়োগ করেছেন চা শ্রমিকেরা। এই কেন্দ্রে পুরুষ ভোটার ২ হাজার ২শ ৪৭ ও নারী ভোটার ২ হাজার ৮০ জন।
মৌলভীবাজার-৩ আসনের(সদর-রাজনগর উপজেলা) নিজ গ্রামের তারাপাশা স্কুল এন্ড কলেজে সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে ভোট দিতে আসেন আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান। তিনি ভোট প্রয়োগ করে সবাইকে শুভেচ্ছা জানান।
এদিকে ভোট কারচুপি, জালিয়াতি, কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেওয়া, পেশি শক্তির প্রয়োগসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেন মৌলভীবাজার-৩(সদর ও রাজনগর) আসনের ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী এডভোকেট আবু বকর, একই অভিযোগে ভোট বর্জন করেন ওই সংসদীয় আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো: আলতাফুর রহমান ও মৌলভীবাজার-২(কুলাউড়া) আসনের তৃণমুল বিএনপির প্রার্থী সাবেক এমপি এম এম শাহীন একই অভিযোগ এনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) আসনে রোববার সকাল ৮টা থেকে শুরু হলেও সকালে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। বেলা বাড়ার সাথে সাথে উপস্থিতি বাড়তে থাকে। এ আসনের কমলগঞ্জ উপজেলায় ২২টি চা বাগানে ভোটার উপস্থিতি বেশি দেখা গেলেও বাজার ও গ্রামের কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। সকাল ১১টায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কমলগঞ্জের রহিমপুর ইউনিয়নের সিদ্ধেশ্বরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট প্রদান করেন ৭ম বারের মতো আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী, সাবেক চিফ হুইপ, বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি।
উপজেলার বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, চা বাগান ছাড়া অন্যান্য কেন্দ্রগুলোতে প্রথম ৪ ঘন্টায় গড়ে ভোট গ্রহন হয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। এছাড়া চা বাগান কেন্দ্রগুলোতে চা শ্রমিক ভোটারদের উপস্থিতি ছিল সন্তোষজনক। চা বাগান ছাড়া কিছু কিছু ভোটকেন্দ্র ছাড়া ভোটের কোন দীর্ঘ লাইন দেখা যায়নি। একজন দুইজন করে ভোটার এসে ভোট দিয়ে চলে যেতে দেখা যায়। বেশির ভাগ কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসার, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা গল্প-গুজবেই সময় কাটান।
রোববার সকাল ১০টায় কালীপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২৭০, মিরতিংগা চা বাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫২০, দুপুর ১২টায় কমলগঞ্জ মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট পড়ে ১১৪৬, বাসুদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮১৫, দুপুর ২টায় শমশেরনগর হাজী উস্তওয়ার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট পড়ে ১৭৮২, এএটিএম উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৯৬৪, রাধানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৬১৫, বিকাল সোয়া ৩টায় শ্রীসুর্য্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮৯৪ ভোট পড়ে।
এদিকে মৌলভীবাজার-৪ আসনে কমলগঞ্জের কোন ভোট কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী ব্যতীত ইসলামি ঐক্যজোট ও ইসলামি ঐক্য ফ্রন্টের প্রার্থীর কোন এজেন্ট পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে সবগুলো কেন্দ্রে নৌকার নেতা কর্মী ও এজেন্টদের স্বত:স্ফুর্তভাবে দেখা গেছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৫৯ হাজার ১০১ জন। তন্মধ্যে কমলগঞ্জ উপজেলায় ভোটার ২ লাখ ৮ হাজার ৩৯৪ জন ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ২ লাখ ৫০ হাজার ৭০৭ জন। ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১৬৯টি। এ আসনে প্রতিদ্বন্ধিতায় প্রার্থী ছিলেন ৩ জন। এ আসন থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ছয়বারের সংসদ সদস্য, সাবেক চিফ হুইপ, উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ (নৌকা), ইসলামী ঐক্যজোটের মো. আনোয়ার হোসাইন (মিনার) এবং বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের আব্দুল মুহিত হাসানী (মোমবাতি)। এ আসনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামীলীগ প্রার্থী উপাধ্যক্ষ ড. মো: আব্দুস শহীদ এর বিজয় সুনিশ্চিত বলে ধারণা করছেন ভোটার সচেতন মহল।