-এস.এম.সাইফুল ইসলাম॥
চারিদিকে কোনো চাকরি নেই। তরুণ’ তরুণী’ যুবক’ সবাই দৌড়াচ্ছে চাকুরীর খুঁজে। বেকারদের সে এক করুণ আর্তনাদ! সমাজের সর্বত্রই অসংখ্য তরুণ-তরুণী আজ বেকার। সর্বত্র তাদের নীরব করুণ আর্তনাদ আর হাহাকার ধীরে ধীরে বিষবাষ্প হয়ে জমে উঠছে। বাবা-মা অসহায়। একটি কাজ চাই, একটি চাকরি চাই। কোন একটি চাকরির বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হলেই হাজার হাজার বেকার তরুণ-তরুণী চাকরির আবেদন করে। কিন্তু সিট সংখ্যা এতই কম যে বেশির ভাগই অসফল হয়। যদিও তাদের মেধার কোন কমতি নেই। বাবার বয়স বাড়ছে দিন দিন। কখনও তিনি সফুর সাথে রাগ করে কথা বলেননি। সফু কলেজ মাদ্রাসা থেকে SSC আর HSC করেছে। শত বেকারের স্রোতে সে ও খড়কুটার মত ভাসছে। বাবা বুজতে পারছেন তার সফু আপ্রান চেষ্টা করছে। ইদানিং মায়ের প্রেসারটা লো থেকে হাই হয়ে গেছে শুধু ছেলের বেকারত্বের টেনশনে। ইদানিং সফু আত্মীয় স্বজনের বাড়ি যেতে পারে না। বন্ধুদের মাঝে আগের মত আর আড্ডা দিতে পারেনা। সবাই বড় বড় জব করে। অন্যরা বিদেশ থেকে অনেক টাকা নিয়ে দেশে ফিরেছে। বাড়িতে তার ছোট্ট কুঠীর। মাথা গোজার মত করে একটা বাড়ি করতে হবে। কত কিছু ভাবনা তার। শত প্রয়োজনগুলো তার মাথায়-কাঁধে ভর করেছে। সে অনেকটা বলতে গেলে দিশেহারা! মাঝে মাঝে তার মন চায় নিজেকে ছুটি দেয় এই সংসারের মায়াজাল থেকে। কিন্তু পারেনা। সে যে বাবা মায়ের সন্তান। তাদের অন্ধের যষ্টি সে। ঘুমহীন চোখে বালিস ভেজা রাত্রি কেটে গেলেও নিজেকে প্রদীপ্ত সূর্যের মত জ্বেলে রাখা তার গুরু দায়িত্ব। মধ্যবিত্ত ঘরের স্বল্প আয়ের ছেলেদের জীবন সংগ্রামে অনেক ঢেউ পাড়ি দিতে হয়। একটা বেকার ছেলের বেকারত্বের আর্তনাদ শুধু অন্য একটা বেকার ছেলেই বুঝতে পারে, অন্য কেউ নয়। এ ব্যথা জীবন্মৃত এক অভিশাপ যার যন্ত্রণা হেমলকের চেয়েও বেশি বৈ কম নয়। প্রতিনিয়ত অন্ধকার কানা গলিতে অসহায় ভাবে হাতড়ে মরা। আর চাতক পাখির মত চেয়ে থাকা সেই শুভ দিনটার দিকে। যেদিনটা নিয়ে আসবে আনন্দের ঢেউ। সেই শুভ সংবাদ যা জীবনটাকে পাল্টে দিতে পারে মুহূর্তের মধ্যেই। সামান্য চার/পাঁচ হাজার টাকা বেতনের একটি চাকরির জন্য বেকার যুবকরা জুতোর তলা ক্ষয় করে চলেছে প্রতি নিয়ত। তবে একটা বিষয় খুবই খাঁটী। বেকার জীবন অভিশপ্ত নয়। এখান থেকে জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাটা নেওয়া সম্ভব। মানুষ শিখতে পারে হাজার টেনশন নিয়েও কিভাবে হাসি মুখে সবার সাথে ব্যবহার করতে হয়; শিখতে পারে কিভাবে ধৈর্য্যের অসীম পরীক্ষা দিতে হয়। |