২টি তদন্ত কমিটি গঠন
কুলাউড়া থেকে আবদুল আহাদ।। সিলেট আখাউড়া সেকশনের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল স্টেশন সংলগ্ন বড়ছড়া রেলসেতুর (৯নং সেতু) উপর ২৩ জুন রোববার রাত পৌনে ১২টায় স্মরণকালের ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সিলেট থেকে ঢাকাগামী আন্ত:নগর উপবন এক্সপ্রেস ট্রেন। এতে ঘটনাস্থলেই ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন দুইশতাধিক যাত্রী।
মর্মান্তিক ও দূর্ঘটনায় সাথে সাথেই বন্ধ হয়ে যায় সিলেটের সাথে ঢাকা ও চট্রগ্রামের ট্রেন যোগাযোগ। রেলসচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন সোমবার ২৪শে জুন সকালে সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেন। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে দুর্ঘটনাস্থলে ৭টি বগি রেখে ৬টি বগি নিয়ে ভোর রাত ৩টায় কিছু যাত্রী নিয়ে আন্ত:নগর উপবন এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকার উদ্দেশ্যে কুলাউড়া স্টেশন ছেড়ে যায়। এছাড়া ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা আন্ত:নগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনটি কুলাউড়া স্টেশনে সিলেটের যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। পরে যাত্রীরা সড়ক পথে সিলেটে যান। সোমবার সন্ধ্যা থেকে কুলাউড়া জংশন স্টেশন থেকে ঢাকা ও চট্রগ্রামের উদ্দেশ্যে ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়।
নিহত ৪ যাত্রীর মধ্যে ৩জন নারী ও একজন পুরুষ। এরমধ্যে দু’জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন কুলাউড়া পৌরসভার বাসিন্দা ও ঠিকাদার আব্দুল বারির স্ত্রী মানোয়ারা পারভীন (৪৫)। সিলেটের মোগলাবাজারের আব্দুল্লাহপুর গ্রামের আব্দুল বারির মেয়ে ফাহমিদা ইয়াসমিন ইভা (২০)। বাগেরহাট জেলার সানজিদা বেগম (২০)। এরা দু’জন সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের নার্সিং ইন্সটিটিউটের ছাত্রী। হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার ডবলডর গ্রামের নুর হোসেনের ছেলে কাওছার আহমদ (২৬)। নিহতদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
অন্যান্য আহতরা কুলাউড়া হাসপাতাল, ব্রাহ্মণবাজার মুসলিম এইড হাসপাতাল, মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল ও সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। সরেজমিন ঘটনাস্থলে গেলে বরমচাল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইছহাক চৌধুরী ইমরান, স্থানীয় বাসিন্দা পারভেজ আহমদ, মিরাজ আহমদ, সুলতান আহমদ এবং ভাটেরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ একেএম নজরুল ইসলাম জানান, রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টায় আন্ত:নগর উপবন এক্সপ্রেস ট্রেন বরমচাল স্টেশন অতিক্রমকালে খুব দ্রুত গতি ছিলো। স্টেশন অতিক্রম করার পরপরই এক বিকট শব্দ শুনা যায়। সাথে সাথে মানুষের আর্তচিৎকার শুরু হয়। ট্রেন দুর্ঘটনায় কবলিত হওয়ার সাথে সাথে স্থানীয় কালা মিয়া বাজারের মসজিদের মাইকে ট্রেন দুর্ঘটনার ঘোষণা দেয়া হয় এবং স্থানীয় লোকজনকে উদ্ধার কাজে অংশ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। ঘোষণা শুনেই আশপাশের কয়েক শত লোকজন ঘুম থেকে জেগে দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং উদ্ধার কাজে অংশ নেন।
এদিকে দুর্ঘটনা কবলিত বগির প্রায় ৩৫ জন যাত্রী রাতে আশ্রয় নেন বরমচাল টিকরা জামে মসজিদে। স্থানীয়দের মতে, দ্রুত গতি আর অতিরিক্ত যাত্রীর কারণেই ট্রেনটি দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছে। তবে বড়ছড়া নামক পাহাড়ী ছড়ার উপর নির্মিত ৯নং রেল সেতুটির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ট্রেন দূর্ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে রেলওয়ে নিরাপত্তা পুলিশ, কুলাউড়াসহ মৌলভীবাজারের বিভিন্ন থানা পুলিশ, সহকারি পরিচালক মো. শাহজাহানের নেতৃত্বে ২ প্লাটুন বিজিবি, রেব এবং মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট রাতে উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। মাঝ রাতে ঘন অন্ধকার থাকায় উদ্ধারকারী দল ট্রেনের বগিগুলোতে তাদের উদ্ধার কাজ বন্ধ রাখে। সকালবেলা পুনরায় উদ্ধার কাজ শুরু করলেও কোন হতাহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সোমবার সকাল ৯টায় আখাউড়া থেকে উদ্ধারকারী রিলিফ ট্রেন দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে ছিটকে পড়া বগি উদ্ধার কাজ শুরু করে।
ভয়াবহ ট্রেন দুঘটনা কবলিত আন্ত:নগর উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনের ঢ বগির যাত্রী পাবনার মো. আল আমিন ও মো. সম্রাট পারভেজ জানান, তারা ১৪ জন মিলে সিলেটে মাজার জিয়ারতে এসেছিলেন। সড়কপথ বন্ধ থাকায় তারা ট্রেনের টিকিট কেটে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। দুর্ঘটনার পর ভয়ে তারা ট্রেন থেকে নেমে টিকরা জামে মসজিদে আশ্রয় নেন। মসজিদে রাত কাটান। ভোর ৭টায় তারা সড়ক পথে আবার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। তারা ক্ষোভের সাথে জানান, এটা কোন ট্রেন হলো। টিকিট কেটে সিটে বসলাম। কিন্তু কাঁধের উপর লোক দাঁড়িয়ে ছিলো। ট্রেনের টিকিটধারী যাত্রীর চেয়ে দ্বিগুণ যাত্রী ছিলো দাঁড়ানো। আর যাত্রা শুরুর পর ট্রেনটি খুবই দ্রুত গতিতে চলছিলো। তখনই মনে হয়েছিলো, কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিছু বুঝে উঠার আগেই বিকট শব্দে বগিটি ব্রিজ থেকে ছিটকে নিচে পড়ে যায়। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
এদিকে ট্রেনের দূর্ঘটনার খবর পেয়েই রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন সকাল ৮টায় এসে কুলাউড়ায় পৌছান। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, অনাকাঙ্খিত ঘটনাটি তদন্তে দু’টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে রেলওয়ের চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার(পূর্বাঞ্চল) মো. মিজানুর রহমানকে। এই কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- চিপ ইঞ্জিনিয়ার আবদুল জলিল, চিফ পিএসপি মইনুল ইসলাম, চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট (সিওপিএস) চিফ সুজিপ কুমার। এছাড়াও ৫সদস্য দিয়ে একটি কেন্দ্রিয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাঁরা হলেন- চিফ সিগন্যাল এন্ড কমিনিউকেশন মঈনুল ইসলাম, সিওপিএস সুজিত কুমার, রেলওয়ের মহাপরিচালক কাজী রফিকুল আলম, অতিরিক্ত সচিব মো. মুজিবুর রহমান, চীফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মিজানুর রহমান। এর আগে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রোববার রাতে তাৎক্ষণিকভাবে সিলেটে বিভাগীয় কমিশনার মেজবাহ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম, মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো. শাহজালাল ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেন। |
ভয়াবহ এ ট্রেন দুর্ঘটনার পর রাত কিংবা পরদিন সকাল ৯টা পর্যন্ত দুর্ঘটনাস্থলে রেলওয়ের উর্দ্ধতন কোন কর্মকর্তার দেখা মেলেনি। বেলা ১২টা নাগাদ কুলাউড়ার রেলওয়ের উর্দ্ধতন প্রকৌশলী জুয়েল হোসাইন মোবাইল ফোনে জানান, প্রায় ২শ মিটার রেলপথ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সকাল থেকে ২ শতাধিক শ্রমিক মেরামত কাজ করছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রেললাইন মেরামত কাজ সম্পন্ন করার।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো. শাহজালাল জানান, দুর্ঘটনার সাথে সাথে স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিগন উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছেন। পরবর্তীতে খবর পেয়ে মৌলভীবাজারের প্রায় সবক’টি থানার পুলিশ এবং বিজিবি সদস্যরা উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম জানান, ট্রেন দূর্ঘটনার কারণ এখনও জানা যায়নি। তদন্তে অবশ্যই বেরিয়ে আসবে । রেলওয়ের স্পেশালিস্ট ছাড়া দুর্ঘটনার কারণ বলা যাবে না। সোমবার সকাল পর্যন্ত মোট ৪টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জেলা প্রশাসক জানান। সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মো. মেজবাহ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, যত দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্ভব রেললাইন মেরামত করে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের উদ্ধারকারী ট্রেন এসে পৌঁচেছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা এ লাইন চালু করব। আপাতত: কুলাউড়া পর্যন্ত সব ট্রেন আসা-যাওয়া করবে।
কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের বরমচাল রেল ষ্টেশনের পাশেই বড়ছড়ার সেতুভেঙ্গে(৯নং সেতু) দূর্ঘটনায় কবলিত হয় সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা গামী আন্তনগর উপবন ট্রেন। হটাৎ বিকট শব্দ এবং মানুষের আর্তচিৎকার শোনে তাৎক্ষনিক ন্যাশনাল ইমারজেন্সি সার্ভিস ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন শাহীন আহমদ শাহান নামক স্থানীয় এক যুবক। মুঠোফোনে ট্রেন দূর্ঘটনার ভয়াবহ খবর দিলে চমকে ওঠে পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হন পুলিশ সদস্যরা। যথাস্থানে পৌঁছে দেখেন ঘটনা সত্য। তাৎক্ষনিক উদ্ধার কাজে নেমে পড়েন তারা। রোববার, ২৩শে জুন রাত পৌনে ১২টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে। এনিয়ে ৯৯৯ ফোন দেয়া শাহান কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের আকিলপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি কুলাউড়া সরকারী কলেজের শিক্ষার্থী। শাহান বলেন, আমি বাজার থেকে ক্রিকেট খেলা দেখে বড়ছড়া ব্রিজের পাশের রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ এবং প্রচুর মানুষের আর্তচিৎকার আমার কানে আসে। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি, বড়ছড়া ব্রিজ ভেঙে ট্রেনের একটি বগি নিচে এবং পাশের খাদে আরও দু’টি বগি উপড়ে পড়েছে।
তাৎক্ষনিক আমি ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিতেই তা রিসিভ হয় এবং পুরো বিষয়টি বলি। বিষয়টি নিশ্চিত করে কুলাউড়া থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান জানান, রাত ১২টার কিছুক্ষণ আগে এক ব্যক্তি ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে ট্রেন দুর্ঘটনার খবর জানান। এত রাতে বড় ধরনের ট্রেন দুর্ঘটনার খবর শুনে অবাক হই আমরা। তখন আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতা পাই এবং উদ্ধারকাজে লেগে পড়ি। এর কিছুক্ষণ পরেই ফায়ার সার্ভিস ও বিজিবি সদস্যরাও এসে উদ্ধারকাজে যোগদান করেন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সিলেটের সহকারী পরিচালক মুজিবুর রহমান জানান, হতাহতদের উদ্ধারে কুলাউড়া ছাড়াও সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমা ও সিলেট সদর দফতর থেকে দমকল বাহিনীর ১২টি ইউনিট এসে উদ্ধার কাজে যোগ দেয়।
ভয়াবহ এই আন্তনগর উপবন ট্রেন দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ কমিটিকে আগামী তিনদিনের মধ্যে দুর্ঘটনার সুস্পষ্ট কারণ জানিয়ে রিপোর্ট দিতে হবে। সোমবার (২৪ জুন) সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের এমনটি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কমিটির প্রধান করা হয়েছে রেলওয়ের চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (পূর্বাঞ্চল) মো. মিজানুর রহমানকে। এই কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- চিপ ইঞ্জিনিয়ার আবদুল জলিল, চিফ পিএসপি মইনুল ইসলাম, চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট (সিওপিএস) চিফ সুজিপ কুমার। এছাড়াও ৫সদস্য দিয়ে একটি কেন্দ্রিয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাঁরা হলেন- চিফ সিগন্যাল এন্ড কমিনিউকেশন মঈনুল ইসলাম, সিওপিএস সুজিত কুমার, রেলওয়ের মহাপরিচালক কাজী রফিকুল আলম, অতিরিক্ত সচিব মো. মুজিবুর রহমান, চীফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মিজানুর রহমান।
সচিব আরও বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের উদ্ধারকারী ট্রেন এসে পৌঁচেছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা এ লাইন চালু করব। আপাতত কুলাউড়া পর্যন্ত সব ট্রেন আসা যাওয়া করবে। প্রসঙ্গত, রোববার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে কুলাউড়ার বরমচাল রেল ষ্টেশনের পাশে বড়ছড়া ব্রিজটি ভেঙ্গে সিলেট থেকে ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেস ট্রেন দূর্ঘটনা কবলিত হয়। দুর্ঘটনার পর পরই সারাদেশের সাথে সিলেটের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
মর্মান্তিক ভয়াবহ ট্রেন দূর্ঘটনায় নিহত চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে কুলাউড়া থানা পুলিশ। দূর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলেই এ চারজন মারা গেছেন বলে উদ্ধার কর্মীদের ধারনা। তারা হলেন, মনোয়ারা পারভীন (৪৫), ফাহমিদা ইয়াসমিন ইভা (২২), সানজিদা আক্তার (২২) এবং কাওছার আহমদ(২৬)।
কুলাউড়া হাসপাতাল ও থানা সুত্রে জানা যায়, মনোয়ারা পারভীন কুলাউড়া পৌরসভার টিটিডিসি এরিয়ার বাসিন্দা আব্দুল বারীর স্ত্রী। তিনি মেয়ের বাসা থেকে উপবন ট্রেনযোগে কুলাউড়ায় ফিরছিলেন। এ সময় উনার মেয়ে এবং বোনের মেয়ে সাথে ছিল। দুর্ঘটনায় ট্রেনের জানালার কাচ ভেঙে উনার মাথা, মুখ ও বুকে আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। তবে তাঁর সাথে থাকা মেয়ে ও বোনের মেয়ে সামান্য আহত হয়। ফাহমিদা ইয়াসমিন ইভা সিলেটের মোগলাবাজার থানার আব্দুল্লাপুর এলাকার আব্দুল বারীর মেয়ে। তিনি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষানবিশ নার্স।
ফাহমিদার ভাই আব্দুল হামিদ জানান, রাতে ট্রেন দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বোনের খোজে ঘটনাস্থলে আসেন। রাতভর সেখানে খোঁজ করে বোনকে না পেয়ে সকালে কুলাউড়া হাসপাতালে এসে মৃতদের মধ্যে তার বোনকে সনাক্ত করেন। তিনি বলেন, নার্সিং ট্রেনিংয়ের জন্য সিলেট থেকে উপবন ট্রেনে করে ঢাকা যাচ্ছিল ফাহমিদা। অপর নিহত নারী সানজিদা আক্তারের বাড়ি বাগেরহাট জেলায়। তিনিও সিলেট নার্সিং কলেজের ছাত্রী বলে জানা গেছে। এদিকে নিহত কাওসারের বাড়ি হবিগঞ্জের বাহুবল এলাকায় বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। তাঁর বাবার নাম মো. নূর হোসেন।
সিলেট থেকে ঢাকা গামী আন্তনগর উপবন ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতদের দেখতে রাতভর কুলাউড়া সদর হাসপাতালে ভিড় করেছেন সহস্রাধিক মানুষ। যাদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন ট্রেনে থাকা যাত্রীদের স্বজন। স্বজনের খোঁজে এসে শত শত মানুষের কান্না আর আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতাল প্রাঙ্গন। এম্বুলেন্স বা আহত যাত্রী বহনকারী যে কোন গাড়ি আসলেই ছুটে যান স্বজনরা। এ গাড়ি থেকে ওগাড়ি দিক বিদিক ছুটোছুটি করেন স্বজনরা। কেউ কেউ তাদের আপনজনকে পাচ্ছেন আবার কেউ কেউ না পেয়ে জোর গলায় কান্না করে আপনজনের সন্ধান চাচ্ছেন। সব মিলিয়ে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যে পুরো রাত ছিল কুলাউড়া হাসপাতালটি।
জুড়ী উপজেলার জায়ফরনগর গ্রামের মোয়াজ্জেম বেলাল এসেছেন তার মামীর সন্ধানে। তিনি বলেন, সিলেট থেকে উপবন ট্রেনে করে তার মামী কুলাউড়ায় ফিরছিলেন। হটাৎ ট্রেন দূর্ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে এসেছেন। শেষতক মনোয়ারা পারভীন নামক ওই মামীর লাশ পেয়েছেন স্বজনরা। কুলাউড়ার ভূকশিমইল ইউনিয়নের বাদে ভূকশিমইল গ্রামের বাসিন্দা আনু মিয়া এসেছেন তাঁর কলেজ পড়ুয়া ছেলে শাকিলের খোঁজে। দিক-বিদিক ছুটোছুটি করা আনু মিয়া বলেন, উপবন ট্রেনে করে তাঁর ছেলে সিলেট থেকে ঢাকায় যাচ্ছিল। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তিনি হাসপাতালে এসেছেন। রাত পর্যন্ত ছেলেকে পাননি। মোবাইল ফোনেও পাচ্ছেন না বলে জানান।
এদিকে কুলাউড়া হাসপাতালে আহতদের দেখতে আসেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো. শাহজালালসহ পুলিশ ও বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এসময় গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম বলেন এখন পর্যন্ত মোট ৪টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে এবং আহতদের কুলাউড়া হাসপাতাল ছাড়াও মৌলভীবাজার ও সিলেট ওসমানীতে প্রেরণ করা হয়েছে।