লন্ডন: মঙ্গলবার, ১১ই পৌষ ১৪২৩।। ২০১৪ সালে আদালতের দেয়া নির্দেশ আজও বাস্তবায়নের অপেক্ষায়। কি ছিল সে আদেশ আর কোথায়? এমনি একটি খবর দিয়েছিল আজ থেকে ৯মাস আগে ৪ঠা এপ্রিল তারিখে ‘ঢাকাট্রিবিউন.কম’। খবরটি লিখেছিলেন ইমরোজ খন্দকার। বাংলাদেশের সর্ব্বোচ্চ আদালত সে আদেশটি দিয়েছিলেন ২০১৪ সালে। এর মধ্যে নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীতে অনেক জল গড়িয়েছে। স্বয়ং ঢাকাট্রিবিউন নতুন আঙ্গিকে বিন্যস্ত হয়েছে কিন্তু একটুও নড়েচড়ে উঠেননি পাবনা জেলা প্রশাসন। আর তেমনটিই জানাগেল “ফেইচবুকার” জগলুল আলীর ফেইচবুক থেকে।
ঘটনাটি ঘটেছিল পাবনার প্রখ্যাত একটি একতলা বাড়ীকে কেন্দ্র করে। পাবনার হেমসাগর লেন এর গোপালপুর বসতির এই বাড়ীটি সেই ২০১৪ সালের আদালতের আদেশে পাবনা জেলা প্রশাসন অধিগ্রহন করেন। আদালতের ওই আদেশ পাইতে গিয়ে বহুদিনে তিক্ত আইনী লড়াই চালাতে হয়েছে খোদ সরকারকেই। আদালতের হুকুম পাবার পর আজও কেন স্থানীয় সরকারী জেলা প্রশাসন আদেশের পূর্ণ তামিল করতে পারেনি তা একমাত্র তারাই বলতে পারেন! আমরা সাধারণ মানুষের শুধু অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আরতো কিছুই করার নেই।
এতোক্ষন যে বাড়ীটিকে ঘিরে এতো কথা জানানো হল ঘটনপটিয়সী সেই বাড়ীটি আর কারো নয়, বাংলা সিনেমার কিংবদন্তীর নায়িকা প্রয়াত সুচিত্রা সেনের। ‘ঢাকাট্রাইব্যুনাল’ লিখেছে, ১৯৪৭সনে সুচিত্রা সেনের বাবা করুণাময় দাসগুপ্ত পরিবারসহ দেশে ছেড়ে কলকাতায় চলে যাবার পর তৎকালীন পাকিস্তানী সরকার ০.২১ একর ভূমির উপর নির্মিত বাড়ীটির তত্ত্বাবধানের দায়ীত্ব গ্রহন করেন। বাংলা রূপালী পর্দার দর্শকমননন্দিত নায়িকা রমা দাসগুপ্ত নামেই এই বাড়ীটিতে জন্ম গ্রহন করেছিলেন ১৯৩১ ইং সনে এবং তার বাল্যের সময়টা এই বাড়ীতেই কাটে।
প্রায় চারদশক পরে পাবনা জেলা প্রশাসন ‘ইমাম গাজ্জালী ট্রাস্ট’ নামে জামাত ই ইসলামী’র একটি প্রতিষ্ঠানকে একটি ব্যবসায়িক মহিলা স্কুল ও কলেজ পরিচালনার জন্য বন্দোবস্ত দেন। ‘ইমাম গাজ্জালী’ নামের ওই ট্রাস্ট বাড়ীটির ভেতরে কয়েকটি টিনের তৈরী ঘর নির্মাণ করে এবং বাড়ীর প্রধান ফটকটি বন্ধ করে দিয়ে বাড়ীর সামনে গড়ে তোলে কয়েকটি দোকানপাট এবং ভাড়া দেয়।
এতেকরে এলাকার মানুষ ধীরে ধীরে ফোঁসে উঠে এবং মানুষের জোর দাবীর মুখে ২০০৯ সালে পাবনা জেলা কর্তৃপক্ষ “ইমাম গাজ্জালি ট্রাস্ট”এর বন্দোবস্ত নবায়ন প্রত্যাখ্যান করে। পাবনা জেলা জামাতের নেতা আব্দুস সোবহান ১৯৮৩ সালে “ইমাম গাজ্জালী ট্রাস্ট” গঠন করেন। তিনি নবায়ন প্রত্যাখ্যাত হলে এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টের স্মরণে যান।
২০১১ সালের জুলাই মাসে “বাংলাদেশ মানবাধিকার ও শান্তি’ প্রতিষ্ঠান উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন পেশকরে এই মর্মে যে লক্ষমানুষের প্রাণ প্রিয় চিত্র তারকা প্রয়াত সুচিত্রা সেনের কর্ম ও স্মৃতি রক্ষার্থে বাড়ীতে একটি যাদুঘর নির্মাণ করতে হবে। আগষ্ট মাসে উচ্চ আদালত বাড়ীটি ছেড়ে দিতে ট্রাস্টকে নির্দেশ দেয় এবং সরকারকে দায়ীত্ব বুঝে নিয়ে বাঙলা ছবি জগতের কিংবদন্তীর খ্যাতিমান এই নায়িকার স্মৃতি রক্ষার হুকুম দেন। উল্লেখ্য যে, ২০১৪ সালের ১৭ই জানুয়ারী সুচিত্রা সেন পরলোক গমন করেন।
‘ট্রাস্ট’ উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সর্ব্বোচ্চ আদালতে মামালা দায়ের করেন। “সুপ্রিম কোর্ট” ২০১৪ সালের ৪ঠা মে উচ্চ আদালতের রায়কে বলবৎ থাকবে ঘোষণা করেন। অবশেষে পাবনা জেলা প্রশাসন, দেশের সর্ব্বোচ্চ আদালতের দেয়া রায় অনুযায়ী বাড়ীতে “সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা” স্থাপনের নিমিত্তে ২০১৪ সালের ১৬ই জুলাই বাড়ীটির তত্ত্ববধান দায়ীত্ব সমঝে নেন।
আজ থেকে ৯মাস আগে “ঢাকাট্রিবিউন” লিখেছিল যে দেখার মত কোন পদক্ষেপ জেলা প্রশাসন নেয়নি। ওই সময় তৎকালীন জেলা প্রশাসক মুন্সি মোহাম্মদ মনিরুজ্জান “ঢাকাট্রিবিউন”কে বলেছিলেন যে তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে কোন পরামর্শ বা প্রস্তাবনার বিষয়ে যোগাযোগ করেননি।
দীর্ঘ ৯মাস পর আজ আবার ওই খবরটি পত্রস্ত করেছেন ডাঃ জগলুল আলী। মেসেজ যোগাযোগে তিনি জানান যে এখনও একই অবস্থায় পড়ে রয়েছে বাড়িটি। আদালতের আদেশ এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।