1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
হেফাজতের রাজনীতি আমদেরকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? - মুক্তকথা
বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৪ পূর্বাহ্ন

হেফাজতের রাজনীতি আমদেরকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?

কয়ছর আহমদ॥
  • প্রকাশকাল : রবিবার, ২ মে, ২০২১
  • ৮১৪ পড়া হয়েছে

কয়ছর আহমেদ


গত কয়েক দিন যাবৎ সকল মিডিয়াতে যে খবর দেশে-বিদেশে ও বাংলাদেশের মানুষ কে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন করে তুলেছে, সেটি হচ্ছে কওমী মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। যেহেতু আমার ইসলামিক শিক্ষার হাতেখড়ি কওমি আলীমদের কাছ থেকে, সেহেতু প্রতিদিন আমি আমার নিজেকে প্রশ্ন করি আমি কী হেফাজতকে ভুল বুঝতেছি? না কী হেফাজতে ইসলাম ধর্মের নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। তাঁরা কী সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়? নাকি ধর্মের দোহাই দিয়ে সিরিয়া অথবা আফগানীস্থানের মত তালেবানী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। তাঁরা কী ভুলে গেছে সেই হাদিসের কথা “জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চাইতে ও শক্তিশালী।” তাঁরা কী পড়েছে কবি নজরুল ইসলামের সেই কবিতা-
“তুমি চাহ নাই ধর্মের নামে গ্লানিকর হানাহানি,
তলওয়ার তুমি দাও নাই হাতে, দিয়াছ অমর বাণী,
মোরা ভুলে গিয়ে তব উদারতা
সার করিয়াছি ধর্মান্ধতা
বেহেশত হতে ঝরে নাকো আর তাই তব রহমত।
ক্ষমা করো হজরত।”

‘আমাদের বাড়িতে সবসময়ই ৫-৬ জন সহ আমাদের গ্রামে প্রায় ১০-১২ জন কওমি মাদ্রসার ছাত্র এবং শিক্ষক লজিং থাকতেন। সেই ১৯৭১সাল থেকে আমরা যখন স্কুলে যেতাম, আমাদের পার্শ্ববর্তী গ্রামের হিন্দু মুসলমান সভাই মিলে এক সাথে গল্প করে এক ঘন্টার রাস্তা পারি দিয়ে শহরে যেতাম। কওমি মাদ্রাসার আলীম এবং ছাত্রদের যে বড় গুন আমরা লক্ষ করতাম, তাদের মাথা মোণ্ডানো, লম্বা দাঁড়ী, লম্বা পাঞ্জাবী, পায়ের টাকনার উপর লুঙ্গি কিংবা পাজামা, তাঁদের অধিকাংশই ধূমপান করতেন না। ঈমানের দিক দিয়ে তাঁরা ছিলেন অত্যন্ত মজবুত। আর যারা গভর্নমেন্ট মাদ্রাসার ছাত্র, তাঁদের খাটো পাঞ্জাবী, খাটো দাঁড়ী, তাঁরা মাথা মোণ্ডাতেন না, অনেকে ধূমপান করতেন এবং মাপলার দিয়ে দাঁড়ী ঢেকে সিনেমায় ও যেতেন। যার কারনে কওমি মাদ্রাসার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস সেই ছোট বেলা থেকে আজও অটুট। প্রতি অগ্রহায়ন মাসে ধান, কুরবানির পশুর চামড়া এখনও তাঁদেরকেই দেওয়া হয়। আমি বিলেতে আসার পর থেকে যখনই বিপদের মধ্যে পতিত হয়ই তখনই খতমে ইউনুসের জন্য তাঁদের শ্মরনাপন্ন হই। এখনও আমার বিশ্বাসের জায়গা এই কওমি মাদ্রাসার আলীম সমাজ।
তা হলে কী আমার এবং আমাদের পূর্বপুরুষের সেই বিশ্বাসের জায়গাকে নষ্ট করে দেবে এই হেফাজত নামধারী ধর্ম ব্যবসায়ীরা? দেশে কী হক্কানি আলীম উলামারা নেই, যারা তাঁদেরকে পরাজিত করে তাঁদের হাত থেকে মাদ্রাসার গরীব, এতিম ছাত্রদেরকে রক্ষা করতে পারেন।

পবিত্র শাবান মাসের জুমার দিনে যেখানে আমাদের আলীম-উলামারা মানুষকে আল্লাহার দীনের দিকে আহ্বান করার কথা; কুরআন ও হাদিছের আলোকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশিত হেদায়তের পথ অনুসরণ করে কিভাবে মানুষ ইহ জগতে এবং পরকালে শান্তি লাভ করতে পারে, কিভাবে পৃথিবীর মানুষ একে অপরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থাপন করতে পারে সেই ভাবে বয়ান করার কথা। আমি আমাদের হেফাজতে ইসলামের আলীম সমাজের কাছ থেকে তার কোন কিছুই এখন আর শুনতে পাই না। অথচ আল্লাহ রাব্বল আলাআমীন পবিত্র কুরানে বলেন, “হে মুমিনগণ, জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও এবং ক্রয় বিক্রয় বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও(৬২ সূরা আল-জমুআ ৯-১০)”।
আর এখন আমরা দেখতে পাই আমাদের মুসল্লি নামধারী কতিপয় লোক জুমার নামাজের জন্য নয়, পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে আন্দোলনের উদ্দেশে অনেক দুর দূরান্ত থেকে কোন নির্দিষ্ট মসজিদ, মাদ্রাসায় সমবেত হন। তাঁরা ইচ্ছা করলে এই ‘covide’এর মধ্যে নিজ নিজ এলাকায় নামাজ আদায় করতে পারতেন। তাঁদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা আছে বলে আমার মনে হয় না। নামাজ শেষ হাওয়ার সাথে সাথে মসজিদ থেকে বের হয়ে যে ভাষায় স্লোগান দেন, তাঁদের প্রতিপক্ষকে যে ভাষায় অপমান করেন, সেটা কী ইসলামের ভাষা?

আল্লাহ রাব্বল আলাআমীন পবিত্র কুরানে বলেন, “রহমান-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে জমিনে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মুর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে, সালাম(শান্তি)। আর যারা রাত্রি যাপন করে পালনকর্তার উদ্দেশ্যে সেজদাবনত হয়ে ও দন্ডায়মান হয়ে; এবং যারা বলে, হে আমার পালনকর্তা, আমাদের কাছথেকে জাহান্নামের শাস্তি হটিয়ে দাও। নিশ্চয় এর শাস্তি নিশ্চিত বিনাশ(২৫ আল-ফুরকান ৬৩,৬৪, ও ৬৫)”। এই হেফাজতে ইসলাম যখন রাস্তায় বের হয়, তখন বুক উঁচু করে দম্ভের সাথে চলাফেরা করে।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহতাআলা বলেন, “আর তোমরা সে গ্রন্থের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, যা আমি তোমাদের কাছে অবতীর্ণ করেছি সত্যায়নকারী রূপে। বস্তুতঃ তোমরা তার প্রথম অস্বীকারকারী হয়ো না আর আমার আয়াতের অল্প মূল্যে বিক্রি করো না এবং আমার(আযাব) থেকে বাঁচো। তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিও না এবং জেনে-বুঝে সত্যকে তোমরা গোপন করো না(২ সূরা বাকারা ৪১,৪২)”।

“নিশ্চয় যারা সেসব বিষয় গোপন করে, যা আল্লাহ কিতাবে নাযিল করেছেন এবং সেজন্য অল্প মূল্য গ্রহণ করে, তারা আগুন ছাড়া নিজের পেটে আর কিছুই ঢুকায় না।আর আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাদের সাথে কথা বলবেননা, তাদেরকে পবিত্র করবেন না। আর তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। এরাই হল সে সমস্ত লোক, যারা হেদায়েতের বিনিময়ে গোমরাহী(পথভ্রষ্টতা) খরিদ করেছে এবং (খরিদ করেছে) ক্ষমা ও অনুগ্রহের বিনিময়ে আযাব। অতএব, তারা দোযখের আগুনের উপর কতই না ধৈর্য্য ধারণকারী(২ সূরা বাকারা ১৭৪, ১৭৫ )”। অর্থাৎ তাঁরা জানে যে কাজ করলে জান্নাহাম নিশ্চিত, সেই কাজের জন্য তাঁদের আত্মাকে শক্ত করে ফেলেছে।
সূরা আল-ইমরানের ১১০নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, “তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে”।

আজকের হেফাজতের আলীমদের কাছ থেকে আমরা পবিত্র কুরান হাদিছের সেই বয়ান শুনতে পাই না, যা আমাদের অন্তরকে আলোড়িত করে, আমাদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে। যারা তাঁদের বিরুদ্ধে কথা বলে, সবাইকে নাস্তিক, মুরতাদ, কাফের ফতুয়া দিতে দ্বিধাবোধ করে না; তাঁরা মনে করে ৯৫% মুসলমানের দেশ তাঁদের কথায় উঠা-বসা করবে। অন্য ধর্মাবলম্বীদের কোন স্বাধীনতা থাকবে না। তাঁরা ভারতের সাম্প্রদায়িক ইস্যুকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চায়। হেফাজতের এই সকল কর্মকাণ্ডকে ইসলাম কখনও সমর্থন করেনা।

পরিশেষে পবিত্র কুরানের যে আয়াত দিয়ে শেষ করতে চাই সেটি হচ্ছে সুরা আল-আর’রাফ এর ১৭৯ আয়াত। এই আয়াতে আল্লাহতাআলা বলেন, “নিশ্চয়ই আমি সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল পথভ্রষ্ট, তারা হচ্ছে গফেল।
ধার্মিক লোকেরা সমাজকে আলোকিত করে। ধর্ম ভীরু লোকেরা সমাজে শান্তিতে বসবাস করতে চায়। ধর্ম ব্যবসায়ীরা ধর্মান্ধ গুষ্টিকে উসকে দিয়ে সমাজে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করতে চায়।

২০১৩ সাল থেকে হেফাজতে ইসলাম যে সমস্ত হত্যা, আগুন সন্ত্রাস, পাবিত্র কুরআন পুরানো সহ যত প্রকার অন্যায় করেছে, তার বিচার করতে সরকার আজ পর্যন্ত সাহস পায় নি। বরং নিজেদের গদি টিকিয়ে রাখার জন্য বার বার আপস করতে বাধ্য হয়েছে। যার পরিণতি ভয়াভহ হতে পারে।

বার্ট্রান্ড রাসেল তার বিখ্যাত বই ‘দ্য কংকুয়েস্ট অব হ্যাপিনেস গ্রন্থের এক জায়গায় বলেছেন, “ধর্মের উসকানি দিয়ে মানুষকে যত সহজে দলে ভেড়ানো যায়, অন্য কিছুর দ্বারা তা সম্ভব হয় না।”
সুতরাং সময় এসেছে এই অপসক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। তা না হলে জাতীর সামনে ভয়াভহ বিপদ অপেক্ষা করছে।

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT