মুক্তকথা সংবাদকক্ষ।। বৃহষ্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০সাল। পাকিস্তানের সামাজিক, রাজনৈতিক কিংবা সাংস্কৃতিক ইতিহাসে সম্প্রীতির স্বর্ণোজ্জ্বল এক দিন হিসেবে লিখা হয়ে থাকবে। এদিন দক্ষিণ-পশ্চিম পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের ঝব জেলায় অবস্থিত হিন্দুধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় একটি মন্দির স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
“দ্বিজাতি তত্ত্ব”-এর ধর্মান্ধ কূটভাবধারায় পাক-ভারত স্বাধীনতার পরপরই পাকিস্তানী ধর্মান্ধ শাসকচক্র হিন্দু সম্প্রদায়ের এই মন্দিরটিকে একটি স্কুলে রূপান্তরীত করেছিল। গত ৬ ফেব্রুয়ারী ঝব জেলার স্থানীয় খ্যাতিমান আলীম মৌলানা আল্লাহ দাদ এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের হাতে মন্দির গৃহটি তুলে দেন। সরকারের স্থানীয় প্রশাসন সক্রিয়ভাবে এই হস্তান্তর কাজে সহায়তা করে। মন্দিরের আশ-পাশ এলাকায় মাত্র ৬০টি হিন্দু পরিবার বসবাস করে। এক সময় এই এলাকায় অনেক অনেক হিন্দু বসবাস করতো। কিন্তু ঐতিহাসিক বিভ্রান্তিমূলক দেশভাগের পর অধিকাংশ হিন্দু সম্প্রদায় নিজ বাসভূমি ছেড়ে হিন্দুস্থানে ঠাঁই নেয়।
অবশ্য রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মন্দিরের এই হস্তান্তরকে ইমরান খাঁ-এর ক্রিকেট রাজনীতি কি-না একটু সন্দেহের চোখে দেখছেন। আবার অনেকেই এই হস্তান্তরকে পাকিস্তান রাজনীতির একটি মহা-ইতিবাচক দিক হিসেবে ভাবছেন। তারা মনে করছেন পাকিস্তান তার অতীতের ভুল ধর্মান্ধ ও সামরিক চক্র রাজনীতি থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এটি পাকিস্তানের সৎ রাজনৈতিক ইচ্ছার প্রতিফলন। বেলুচিস্তানের ঝব জেলার হিন্দু সম্প্রদায়, পাক-প্রাদেশিক প্রশাসনের এই মন্দির হস্তান্তরকে গভীরভাবে সাধুবাদ জানিয়ে বলেছেন এ কাজ উষ্ণ হৃদয়ের পরিচয় বহন করে।
স্থানীয় একজন প্রধান হিন্দু নেতা বলেছেন যে এটি এমন একটি উত্তেজনা সৃষ্টিকারী মূহুর্ত যেখানে একজন খ্যাতিমান মৌলানা তার সম্প্রদায়ের সকলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ২শত বছরের পুরাতন একটি মন্দির মালিক সম্প্রদায়ের হাতে সৌহার্দ্যপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে হস্তান্তরের জন্য। পাক-আফগান সীমান্ত এলাকার এই হিন্দু নেতা সালিম জান ফোনের মাধ্যমে “আরব নিউজ”কে বলেন, “আমার সম্প্রদায়ের এই খুশী প্রকাশের ভাষা আমার জানা নেই।” তিনি আরও বলেন, “কারো উপসনার মন্দির ফেরৎ দেয়া সবসময়ই একটি মহৎ কাজ কিন্তু যখন কোন মৌলানা তার প্রতিবেশী ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হিন্দুদের মন্দির আড়ম্বরের সাথে অনুষ্ঠানের ভেতর দিয়ে ফেরৎ দেন, সেটি একটি দূর্লভ সন্মান নিয়ে আসে এবং বহুধর্মীয় মতবাদে আস্থাশীলতা ও সহনশীলতার পরিচয় বহন করে।”
সালিম জান এ সময়, স্থানীয় সরকারী কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের শ্মশান ঘাটের ব্যবস্থা করে দেয়ার বিশেষ অনুরোধ জানিয়ে বলেন, বিগত ৭০ বছর ধরে আমরা শ্মশান ঘাটের অনুপস্থিতিতে আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমাদের শ্মশানঘাটটি দখল করে একটি স্কুল নির্মাণ করা হয়েছে। আমাদের শ্মশানঘাটের জন্য নতুন একটি জায়গা দিলেই হবে। স্কুল ফেরৎ দিতে হবে না। সূত্র: আরব নিউজ