সৈয়দ ছায়েদ আহমদ শ্রীমঙ্গল থেকে।। স্বামীর পরকীয়ায় বাঁধা দেয়ার কারণে বাঁচতে পারলোনা পঁচিশ বছরের সুমি বেগম। ৬ বছরের বিবাহিত জীবনে তিন বছরের শুভ মিয়া ও দেড় বছরের সেজান মিয়াকে রেখেই স্বামী স্বাধীন মিয়ার হাতে প্রাণ দিতে হলো তাকে। এ কাজে তাকে সহযোগীতা করেছেন স্বাধীন মিয়ার মা, ভাইসহ নিকট আত্মীয়রা। এঘটনায় শ্রীমঙ্গল থানায় মামলা করতে গেলে স্বামী ছাড়া অন্য কেউকে আসামী করলে মামলা নেওয়া হবে না বলে তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়। তাই বাধ্য হয়ে তারা আদালতের স্মরণাপন্ন হয়েছেন।
গত রোববার দুপুরে শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন নিহত সুমি বেগমের মা উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের সুইলপুর গ্রামের মোহাম্মদ সাফাল মিয়ার স্ত্রী সুরমা বেগম। তিনি জানান, ৬বছর পূর্বে একই গ্রামের আরশ আলীর ছেলে স্বাধীন মিয়ার কাছে সুমি বেগমকে বিয়ে দেওয়া হয়। স্বাধীনের ওরসে ২টি পুত্র সন্তান রযেছে। কিছু দিন পর তারা জানতে পারেন স্বাধীন মিয়া গ্রামেরই এক বিবাহিত মহিলার সাথে পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয় এবং মাঝে মাঝে ঝগড়া হয়। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় অনেক বিচার সালিশি হয়েছে।
গত ১৮ আগস্ট স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে ঝগড়া হয় এবং তাদের হাল্লা-চিৎকারে এলাকার লোকজন ছুটে আসে। সুমির পরিবারের সদস্যরা খবর পান, মেয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তারা খবর পেয়ে গিয়ে দেখেন তার পড়নের শাড়ী দিয়ে রান্না ঘরের তীরে ফাঁস লাগানো এবং পা দুটো মাঠিতে লাগানো অবস্থায় ঝুলে আছে। তাকে তারা উদ্ধার করে স্থানীয় ফার্মেসীতে নিয়ে গেলে তাকে মৃত বলে জানায়। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে।
সুমির পরিবারের সদস্যরা জানান তার মেয়েকে আগেই হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে স্বামীর পরিবার। তাই তিনি ২১ আগষ্ট মেয়ের স্বামী স্বাধীন মিয়া (৩০), তার ভাই আব্দুল মিয়া (২২), মুছন মিয়া (২০), তাদের শ্বাশুড়ী মোছাম্মৎ শেলু বেগম(৫০), নিকটআত্মীয় তাজুল মিয়া(৫৫) ও শাহেদ আলী(৩৫)কে আসামী করে শ্রীমঙ্গল থানায় মামলা করতে গেলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বামী ছাড়া অন্য কারো নামে মামলা নিবেন না বলে তাদের সাফ জানিয়ে দেন। পরে তারা ২২ আগস্ট ওই আসামীদের নামে মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিসিয়্যাল আদালতে মামলা দায়ের করেন।
এ অবস্থায় এখন বাদীপক্ষ সন্দেহ করছেন, শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কথা না শুনে আদালতে মামলা করায় তিনি এখন মামলাটি ভিন্ন খাতে নিতে পারেন।
সংবাদ সম্মেলনে তারা আরো জানান, ঘটনার পর থেকে স্বাধীনসহ তার পুরো পরিবার পলাতক রয়েছেন। এতে আরো প্রতীয়মান হয়, তারাই মেয়ে সুমিকে হত্যা করেছে।
তবে এব্যাপারে শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে এম নজরুল জানান, আদালতের নির্দেশে তিনি মামলার সাথে সংশ্লিষ্ট যাকেই পাবেন তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। তিনি এতে পক্ষপাতিত্ব করবেন না।